ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা

অনলাইন ডেস্ক ::

বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় আগামী ৭ ও ৮ আগস্ট এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এদিকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালেও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সোমবার রাতে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর আগে সকালে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ও বিকেলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ও স্থানীয় যুবকদের সাথে সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার দিন বিকেলে ওই একই এলাকায় সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। এরপর সেখানে সোমবার সকালে ছাত্রলীগ-শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরে অবস্থানের ফলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এরই মধ্যে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে লাঠি হাতে বেরিয়ে এসে শ্রমিকদের ধাওয়া দেয় ছাত্ররা।

এ সময় এক পক্ষ আরেক পক্ষেকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল মারতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ছুঁড়ে। চার থেকে পাঁচটি কারও ভাঙচুর করা হয় এ সময়।

দুপুর সাড়ে ১২টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ-শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশের প্রতিরোধের মুখে শিক্ষার্থীরা আফতাবনগরে জহুরুল ইসলাম সিটিতে ঢোকেন। পুলিশও তাঁদের ধাওয়া দেয়।

এর আগে সকালে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে গেটের সামনে ও রাস্তায় অবস্থান নেয়। কিছুক্ষণ পর পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল ছোড়েন, পুলিশও তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়, কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এরপর শিক্ষার্থীরা জহুরুল ইসলাম সিটিতে ভেতরের দিকে অবস্থান নেয়।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ ও ওই যুবকেরা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে জহুরুল ইসলাম সিটির ভেতরে গেছেন। এ সময় পুলিশকে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়তে দেখা গেছে। তারা সাঁজোয়া যান (এপিসি) নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল।

অন্যদিকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) সামনে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ হয়েছে। ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল ছুঁড়েছিল। বিপরীত দিক থেকে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। তবে রাতে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সোমবার সকালে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুসারে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে রাস্তায় অবস্থান নিতে চাইলে বাধা দেয় পুলিশ। তখন থেকেই দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, রামপুরায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে দুপুর ২টার দিকে ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও আশপাশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নর্থ সাউথের পেছনে জড়ো হতে শুরু করে। আধা ঘণ্টা পরই লাঠিধারী একদল যুবক সেখানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েক জন জখম হন। আহতরা ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে পড়েন। হামলার প্রতিবাদে স্লোগান দিতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল ৪টা ১০ মিনিট পর্যন্ত কাঁদানে গ্যাস ও বিক্ষিপ্তভাবে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে এলাকার বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেয় পুলিশ। বিভিন্ন গলিতে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করেও কাঁদানে গ্যাস মারা হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে এসময় শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া… ভুয়া…’ বলে স্লোগান দেন। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে লাঠি হাতে অবরোধ করার চেষ্টা করেন তারা। এলাকাটির প্রবেশ পথে একাধিক সাঁজোয়া যান নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখান দিয়ে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে একটি সাঁজোয়া যানকে ভেতরে যেতে দেখা যায়। ৪টা ২০ মিনিটে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরাও তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, বিকেল ৫টার দিকেও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছিল। এ সময় শিক্ষার্থীরা নর্থ সাউথ ক্যাম্পাস থেকে ক্রমেই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেট পর্যন্ত এসে অবস্থান নিয়েছে।

ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান বলেন, বসুন্ধরা এলাকায় নর্থ সাউথের সামনের সড়কে সকালে কিছু শিক্ষার্থী নেমেছিল। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল মারে। এরপর পুলিশ তাদের সরাতে টিয়ারশেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তবে দুপুরের দিকে তারা আবারও পুলিশের ওপর চড়াও হয়।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এনএসইউ শিক্ষার্থীরা আজ বিক্ষোভ করার চেষ্টা করে। সোমবার সকালে বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়েও পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পাঠকের মতামত: