ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরা হলো না সাংবাদিক কল্লোলের

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্রগ্রাম ::      কর্মস্থল থেকে আর বাসায় ফেরা হলো না সাংবাদিক সনজয় মহাজন কল্লোলের। প্রায় দুই যুগ ধরে জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্রে সুনামের সঙ্গে কাজ করে আসছিলেন তিনি। গত শনিবার স্থানীয় দৈনিক পূর্বদেশে রাতের শিফটে কাজ শেষে অটোরিকশায় ফিরছিলেন বাসায়। অপেক্ষায় ছিল দুই শিশু সন্তানসহ সহধর্মিণী। কিন্তু গাড়িতে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলেও তিনি বাসার পাশে ক্লিনিকের দিকে যেতে এক পর্যায়ে গাড়িতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। সেখান থেকে তাঁকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শনিবার রাত ২টার দিকে নগরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে প্রায় তিনদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে সেখান থেকে সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, তাঁর মস্তিষ্কে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয়েছে। ব্রেন স্ট্রোকের পর থেকে কল্লোল অজ্ঞান অবস্থায় ছিলেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। মঙ্গলবার বিকেলে তাঁর অপারেশন করার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর এবং সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে অপারেশন করা যায়নি। গতকাল বুধবার সকালে অবস্থার আরও অবনতি হলে একপর্যায়ে লাইফ সাপোর্টে (কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র) রাখা হয়। ব্রেন স্ট্রোকের পর গত প্রায় ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে হার মানেন সাংবাদিক কল্লোল (৪৩)।

বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তিনি মা, স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান রেখে যান। তাঁর ছোট মেয়ে অপর্ণা মহাজন তন্বী এপিএবি বোরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেণিতে এবং বড় ছেলে ফতেয়াবাদ আদর্শ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে পড়ে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে কল্লোল ছোট।

এদিকে সাংবাদিক কল্লোলের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে চট্টগ্রামের সাংবাদিকপাড়ায়। অনেকে তাঁকে একনজর দেখতে চমেক হাসপাতালে এবং পরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে যান। হাসপাতাল থেকে লাশ বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে প্রেস ক্লাবের সামনে নেওয়া হয়। তাঁর মরদেহে শেষবারের মতো ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় শোক জানিয়ে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি কলিম সরওয়ার ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামল। আগামী ৬ আগস্ট প্রেস ক্লাবে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন প্রয়াত কল্লোলের স্মরণসভার আয়োজন করেছে।

প্রেস ক্লাব থেকে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় হাটহাজারীর চৌধুরীহাট এলাকায়। সেখানে দাতারাম চৌধুরী সড়কের মহানাম বাজার এলাকায় বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতেন কল্লোল। পরে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি হাটহাজারীর ধলই ইউনিয়নের এনায়েতপুরের নিশি মহাজনের বাড়ি। তাঁর বাবা প্রয়াত শরদিন্দু মহাজন এবং মা রাণী বালা দেবী।

সনজয় মহাজন কল্লোলের বড় ভাই শিক্ষক শিমুল কান্তি মহাজন চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘বুধবার রাতে আমাদের পারিবারিক শ্মশানে তাঁর সৎকার করা হবে। এভাবে সবাইকে শোকসাগরে ভাসিয়ে আমার ছোট ভাই অকালে চলে যাবে তা কল্পনাও করিনি।’

জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে কল্লোলের সাংবাদিকতা শুরু। ১৯৯৮ সালে দৈনিক পূর্বকোণের হাটহাজারী প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০০৩ সালে ওই পত্রিকায় সহ সম্পাদক পদে যোগ দেন। কালের কণ্ঠে শুরুতেই তিনি চট্টগ্রাম অফিসে সহ সম্পাদক ছিলেন। পরে স্থানীয় পত্রিকা সুপ্রভাত বাংলাদেশে যোগদান করেন। সর্বশেষ স্থানীয় দৈনিক পূর্বদেশে সিনিয়র সহ সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন কল্লোল। সব মিলে তাঁর প্রায় দুই যুগের সাংবাদিকতা জীবন। তিনি চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন। কল্লোলের মৃত্যুতে বিভিন্ন মহল শোক প্রকাশ করেছে।

পাঠকের মতামত: