ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ডিবি পরিচয়ে বাসায় ঢুকে কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৫

চট্রগ্রাম প্রতিনিধি ::

গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিচয়ে বাসায় ঢুকে এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ৫ যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার ভোররাতে নগরীর বাদুরতলা জঙ্গিশাহ মাজার গেট এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, এক ছাত্রী কয়েকজন বখাটে যুবকের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার রাতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেছেন। অভিযোগ পেয়েই ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠাই। ঘটনার বিষয়টি যাচাই করে রাতভর অভিযানে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো চকবাজারের বাদুরতলা জঙ্গিশাহ বাড়ির মৃত ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুর রহমান চৌধুরীর ছেলে মো. মহিউদ্দীন (২২),বাদুরতলার মুন্সেফ আলী বাড়ির মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে সাইমুন ইসলাম সাকিব (২২), বাদুরতলা জঙ্গিশাহ বাড়ির মৃত আবু নাছেরের ছেলে আসিফ ইকবাল (২৫), চান্দগাঁও থানার বারইপাড়া ছত্তার মেম্বার বাড়ির মো. জামাল উদ্দিনের ছেলে রাজবির হোসেন নয়ন (২২) ও একই এলাকার হাজী রমজান আলী বাড়ির আনোয়ার হোসেনের ছেলে মোশারফ হোসেন আকাশ (২২)। আরেক আসামি আহমেদ সেহেজাদ তারেক (২২) ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।

ওসি জানান, জঙ্গিশাহ মাজার এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে মামলার বাদীনি ও তার বান্ধবী ব্যাচেলর ভাড়াটিয়া হিসেবে ৩ মাস ধরে বসবাস করছেন। গত ৭ জুলাই সেখানে তাদের এক বন্ধু ও শিক্ষক গেলে স্থানীয় ৫–৬ জন বখাটে ডিবি পরিচয় দিয়ে বাসায় ঢুকে প্রথমে চাঁদা দাবি করে। বাসায় অনৈতিক কাজ হচ্ছে অভিযোগ এনে বখাটে যুবকরা ওই ছাত্রীর শিক্ষক ও তার বন্ধুকে প্রথমে জিম্মি করে। মারধর করে তাদের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে সাইফুল ইসলাম সাকিব মেয়েটিকে ধর্ষণ করে এবং সাকিবের সঙ্গে থাকা আরেকজন ওই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে।

এর আগে কয়েকবার এসব বখাটে এলাকায় এ রকম অপকর্ম করলেও তাদের ভয়ে কেউ পুলিশের কাছে অভিযোগ করেনি বলে জানান ওসি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চকবাজার থানার এসআই ইয়াছির আরাফাত জানান, ছয় যুবক ডিবি পরিচয়ে জোর করে বাসায় প্রবেশ করে এবং চার লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল বলে ওই ছাত্রীর অভিযোগ। এসময় তারা চারজনকে মারধর করে এবং সাকিব এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে তা মোবাইলে ধারণ করে রাখে। যাওয়ার সময় তারা তিনটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, নগদ সাত হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে যায় বলে এজাহারের বরাত দিয়ে তিনি জানান। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়েছে। অপর মোবাইল সেটটি পলাতক যুককের কাছে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, কলেজে পড়ার পাশাপাশি বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মেয়েটি। তাই তিনি জঙ্গিশাহ মাজার এলাকায় ভাড়া থাকতেন। সঙ্গে তার আরেক বান্ধবী থাকত। এক শিক্ষক ওই ছাত্রীর বাসায় এসে বিসিএস পরীক্ষার জন্য গণিতের প্রাইভেট পড়ান। এ নিয়ে এলাকার কিছু বখাটে তাকে ও তার বান্ধবীকে বিভিন্ন সময় উত্যক্ত করত। বখাটেদের উৎপাতে বিরক্ত ওই ছাত্রী বিষয়টি অবহিত করার জন্য ওই দিন বিকালে তার এক বন্ধু মুনতাসির ফরহাদকে(২৪) বাসায় আসতে বলেন। এ সময় ছাত্রীটির শিক্ষক এস এম মনছুরুল হকও (২৯) বাসায় আসেন। তারা চারজন মিলে পুরো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এরই এক সময় রাত ৮টা ১০ মিনিটের দিকে কয়েকজন যুবক এসে নিজেদের ডিবি পরিচয় দিয়ে তাদের বাসার দরজা ধাক্কাতে থাকে। এরপর দরজা খুলে দেওয়া হলে বখাটে যুবকরা ছাত্রীর প্রাইভেট শিক্ষক ও বন্ধুকে মারধর করে পাশের রুমে আটকে রাখে। বাদীনী ও তার বান্ধবীকে সামনের রুমে নিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকে। পরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়।

পাঠকের মতামত: