ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

মাতামুহুরীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে লামা পৌরসভার সড়ক ও জনবসতি

আতংকে সহস্রাধিক পরিবার 

লামা প্রতিনিধি ::

পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সম্প্রতি একাধিকবার প্লাবিত হয় লামা পৌরসভাসহ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সাথে সাথে প্রমত্তা মাতামুহুরী নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারন করে। এ নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে লামা পৌরসভার সড়ক ও জনবসতি। অব্যাহত ভাঙনের কবলে পড়ে অনেকে হয়েছে বসতভিটে হারা। বর্তমানে ভাঙন আতংকে রয়েছে উপজেলার নদী তীরবর্তী সহস্রাধিক পরিবার, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সমুহ এবং ফসলি জমি। মাতামুহুরী নদী ভাঙন রোধকল্পে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি তুলেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ক্ষতিগ্রস্তরা।

সূত্র জানায়, আলীকদম থেকে বয়ে আসা মাতামুহুরী নদী লামা উপজেলার বুক চিরে সর্পিল গতিতে ক্রমশ নীচের দিকে বয়ে গেছে। শুস্ক মৌসুমে পাহাড়ী এ নদী অনেকটা মরা নদীতে পরিণত হলেও বর্ষা মৌসুমে প্রমত্তা আকার ধারন করে। বর্ষা মৌসুমে মাত্র কয়েক ঘন্টার মুষলধারে বৃষ্টির ফলে পাহাড়ী ঢলে বন্যা সৃষ্টি করে লণ্ডভণ্ড করে দেয় তীরবর্তী স্থানের রাস্তা–ঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হতদরিদ্র পরিবারগুলোর সাজানো সংসার। পাহাড়ী ঢলের পানি কমে যাওয়ার সথে সাথে তীব্র আকার ধারন করে নদী ভাঙন। গত কয়েক বছরে এ নদীর ভাঙনে উপজেলার কয়েকশ ঘরবাড়ি, সরকারি বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট ও শতাধিক একর ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জুন মাসে পাহাড়ী ঢলে একাধিকবার লামা বন্যা কবলিত হওয়ার পর নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারন করেছে।

গত সপ্তাহে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে ৬০ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে সদ্য সংস্কার করা লামা পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের জনগুরুত্বপূর্ণ সাবেক বিলছড়ি সড়ক। ইতিমধ্যে সড়কের প্রায় ১শ’ফুট নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া সড়কের বিশাল অংশে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। যে কোন মুহূর্তে সে অংশটিও নদী গর্ভে বিলীন হতে পারে। এছাড়া লামা পৌর এলাকার বিভিন্ন অংশে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারন করেছে। মাতামুহুরী নদীর করাল স্রোতের টানে দু’কূল ভাঙনে পৌরএলাকার কুড়ালিয়ারটেক, লামামুখ বাজার, সাবেক বিলছড়ি, লাইনঝিরি, হরিণঝিরি, শিলেরতুয়া, চাম্পাতলী , টি.টি এন্ড ডিসি, হাসপাতাল পাড়া, স’মিল পাড়া, লামা বাজার পাড়া, বাজার ঘাট সংলগ্ন ফরেষ্ট অফিস এলাকায় ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে।

অপরদিকে, মাতামুহুরী নদীর অব্যাহত ভাঙনের কবলে পড়ে লামা সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা, মেউলারচর, রূপসী পাড়ার অংহ্লাপাড়া, শীলেরতুয়া এলাকার শত শত পরিবার বসত ভিটে ও ফসলী জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এ দু’ ইউনিয়নে শত শত ঘর বাড়ি ও ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পর বর্তমানে ২০ টির অধিক গ্রাম ভাঙন আতংকে রয়েছে। নদীর তীরবর্তী স্থানে অবস্থিত এসব গ্রামের মানুষের বসত ভিটা ও ফসলী জমি, ব্রিজ, কালভার্টসহ এবং লামা পৌরএলকার প্রায় ৫০ কোটি টাকার স্থাপনা ও ফসলী জমি ভাঙনের হুমকি মুখে রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ভাঙন পীড়িত পরিবারগুলো এখন বসবাস করছে অন্যের বাড়ীতে কিংবা আশ্রয়ন প্রকল্পে বাসিন্দা হয়ে। শত শত বিঘা জমির মালিকরা আজ ভূমিহীন।

লামা ইউনিয়নের মেরাখোলা গ্রামের বাসিন্ধা সহিদুল ইসলাম জানান, বিগত বছর গুলোর নদী ভাঙনে প্রায় অর্ধশত পরিবারের বসতঘর ও প্রায় ৫০ একর ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বসতবাড়ী ও ফসলী জমি হারিয়ে নিঃস্ব লোকজন অনেকেই এখন আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা হয়েছেন। স’মিল পাড়ার আকবর আলী জানায়, গত ২ বছর আগে মাতামুহুরী নদী তার বসতঘর থেকে প্রায় একশ গজ দূরে ছিল। এ মৌসুমে তার বসতঘর সম্পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আতংকে আছেন তিনি। বসতভিটা ভাঙলে তার আর মাথাগোজার ঠাঁই থাকবে না। রূপসী পাড়া ইউনিয়নের অংহ্লাপাড়া বাজার মুদি দোকানদার জানান, মাতামুহুরী নদীর শাখা নদী লামাখালের উপর বাঁশের সাকো দিয়েই অন্যপাড়ে চলাচল করা যেত। গত কয়েক বছরের ভাঙনে চলতি মৌসুম থেকে বাজার ভাঙা পড়েছে। হুমকীর মুখে রয়েছে লামা খালের উপর নির্মিত ব্রিজ।

লামা পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ জাকির হোসেন জানান, মাতামুহুরী নদীর ভাঙনে পৌরএলাকার সাবেক বিলছড়ি গ্রামের একাংশ বিলীন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এ ওয়ার্ডের অতি জনগুরুত্বপূর্ণ সাবেক বিলছড়ি সড়ক ১শ’ ফুটের বেশি ইতিমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সড়কের বিশাল অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে এ সড়কে যান বাহন চলাচল সম্পুর্ণ বন্ধ হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। লামা পৌরসভা মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, মাতামুহুরী নদীর ভাঙন রোধকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করা হয়েছে। পৌরএলাকার ভাঙন কবলিত সাবেক বিলছড়ি সড়কটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

অচিরেই এ নদী ভাঙন রোধ করা না গেলে আগামী কয়েক বছরেই লামা পৌরসভাসহ পার্শ্ববর্তী লামা ও রুপসী ইউনিয়নের মানচিত্র পাল্টে যেতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

পাঠকের মতামত: