ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

রাখাইনে গোপনে ফিরে যাওয়া ৫৮ রোহিঙ্গা কারাগারে

মিয়ানমারের উদ্যোগ ‘আইওয়াশ’ : জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন

উখিয়া প্রতিনিধি ::

বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া নিয়ে মিয়ানমারের উদ্যোগকে ‘আইওয়াশ’ বলে কড়া সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন। এছাড়া বাংলাদেশের আশ্রয় শিবির থেকে গোপনে মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া ৫৮ রোহিঙ্গাকে রাখাইনের অভ্যর্থনা ক্যাম্প থেকে বুচিডংয়ের একটি কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সংস্থাটি।

গত বুধবার জাতিসংঘের ৩৮তম অধিবেশনে সংস্থাটির মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার জায়েদ রা’দ আল হুসেন এই অভিযোগ করেন। জায়েদ বলেন, বাংলাদেশ থেকে ফেরত যাওয়া ৫৮ জন রোহিঙ্গাকে কোনো কারণ ছাড়াই আটক রাখা হয়েছে। গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে পালিয়ে আসাদের মধ্যে দুই’শ এর মত রোহিঙ্গা গোপনে রাখাইনে ফিরে গেছে। এদের অনেককে বিনা কারণে আটক রাখা হয়েছে। এই হাই কমিশনার আরো বলেন, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক চাপ এড়াতে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশের সাথে সমঝোতা স্বাক্ষর করে। পরবর্তীতে গত ছয় জুন জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপি ও শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর সাথে প্রায় একই ধরনের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। কিন্তু যাবতীয় চুক্তি, আশ্বাস ও সমঝোতার পরেও গত ছয়মাসে রাখাইনে নিরাপত্তা সংকটে ১১ হাজার ৪শ ৩২ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। সর্বশেষ চলতি সপ্তাহে ৫০ জন মত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বলে জানান হাই কমিশনার জায়েদ।

জানা গেছে, গত মাসের শুরুতে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বেশ কিছু রোহিঙ্গা গোপনে রাখাইনে ফিরে যায়। ওই সময় বাংলাদেশের উপকূল দিয়ে সমুদ্র পথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে পাড়ি দেয় ৪ বাংলাদেশী ও ৫৮ রোহিঙ্গা। কিন্তু সমুদ্রে ঝড়ের কবলে পড়ে তাদের বহনকারী ফিশিং বোটটি রাখাইনের বুচিডং উপকূলে ডুবে যায়। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করে মিয়ানমার পুলিশ আটক করে সীমান্তের নাকপুরা অভ্যর্থনা ক্যাম্পে স্থানান্তর করে। সেখান থেকে আটক ৪ বাংলাদেশীকে যাচাই–বাছাই শেষে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর এবং ৫৮ রোহিঙ্গাকে দেশটির রাষ্ট্রপতি সাধারণ মা ঘোষণা করেন। ওই সময় এসব রোহিঙ্গাকে যাচাই বাছাই শেষে নিজ নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছিল মিয়ানমার। কিন্তু তাদেরকে অভ্যর্থনা ক্যাম্প থেকে ছেড়ে না দিয়ে সম্প্রতি বুচিডংয়ের একটি কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে বিগত চার বছর ধরে দায়িত্ব পালন করা জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনার জায়েদ রা’দ আল হুসেন আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের উপর চরম মানবাধিকার লংঘন করেছে মিয়ানমার। তিনি রাখাইনে রোহিঙ্গা নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞসহ যাবতীয় অপরাধের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরে মিয়ানমারকে এসবের জন্য লজ্জা পাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক কমিউনিটি অব রেডক্রসের প্রেসিডেন্ট পিটার মাওরার মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর শেষে গত মঙ্গলবার ঢাকা ছাড়ার পূর্বে বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ প্রস্তুত থাকলেও মিয়ানমারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা এখনো বাস্তবতার বাইরে। মিয়ানমারের দিক থেকে এখনো অনেক কিছু করার বাকি এবং তাদের এ সংক্রান্ত রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবে রূপ দেওয়া প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

পাঠকের মতামত: