ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেও আসছে ইয়াবা

অনলাইন ডেস্ক ::  মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ও সমুদ্রপথে ইয়াবা পাচার চলছে। জুন মাসের শেষদিকে এবং জুলাই মাসের শুরুতেই একাধিক ইয়াবা চালান জব্দের পর পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযান শুরুর পর বড় পাচারকারীরা আত্মগোপনে গেলেও ছোট ছোট চালান হিসেবে ভাগ করে ইয়াবা পাচার চলছে। এ কারণে এক দিনেই ইয়াবার দুই-তিনটি করে চালান ধরা পড়ছে। সর্বশেষ গত রবিবার পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর তিনটি চালান জব্দ করেছে।

তবে ইয়াবার বড় চালান পাচার বন্ধ হয়েছে বলে দাবি করেছেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, গত ১৮ মে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে বড় চালান জব্দ করা যায়নি।

অভিযানের শুরুতে ইয়াবা পাচারকারীরা আত্মগোপনে চলে যায়। বেশ কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যায়। কিন্তু জুন মাসের শেষ দিক থেকে ছোট ছোট ইয়াবার চালান পাচার হচ্ছে বলে তথ্য আসছে। এরপর থেকে অভিযানও চালানো হচ্ছে। এর মধ্যেই ছোট ছোট বেশ কয়েকটি চালান জব্দ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় মামলা করা হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেও নানা কৌশলে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় পাচার হচ্ছে ইয়াবা। মিয়ানমার সীমান্ত পার হয়ে কক্সবাজারে আনা হচ্ছে ইয়াবার চালান। এরপর পাচার হচ্ছে সারাদেশে। চলমান অভিযানের মধ্যেই ছোট ছোট চালান নিয়ে ‘ক্যারিয়ার’রা ধরা পড়ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।

সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানের সুচনা হয় ১৮ মে। ওই দিন চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট থানাধীন মাদকের আখড়াখ্যাত বরিশাল কলোনিতে অভিযানের সূচনা করে র‌্যাব-৭। চট্টগ্রামের মাদক পাচারকারী মোটা হাবিব ও মোশাররফ র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যায়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩০ হাজার ৪০০ ইয়াবা জব্দ ও গুলিসহ তিনটি অস্ত্র উদ্ধার করে র‌্যাব। এর মধ্য দিয়েই দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর বিষয়টি জানান দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরবর্তীতে র‌্যাবের অভিযানে চট্টগ্রাম, ফেনী ও কক্সবাজারে আটজনের মৃত্যু হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকার মাদকবিরোধী যুদ্ধ ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান চালায়, তখনো মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে দেশে ইয়াবা পাচার অব্যাহত থাকে। পাচারকারীরা সুযোগ বুঝে ইয়াবা পাচার করে কক্সবাজারে আনে। এরপর চট্টগ্রাম হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর বড় চালান আর ধরা পড়ছে না। শীর্ষ পাচারকারীরা আত্মগোপনে গেছে। কিন্তু ছোট ছোট পাচারকারীরা এখনো সক্রিয়। এ কারণে এখনো ইয়াবা উদ্ধার হচ্ছে।’

পুলিশ জানায়, সাগরপথ ও নাফনদী দিয়ে ইয়াবা পাচার বন্ধে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়েই দেশে আসছে এগুলো।

অভিযান শুরুর পর মাদক উদ্ধারের তথ্য জানতে চাইলে র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মিমতানুর রহমান বলেন, ‘অভিযান শুরুর পর থেকেই র‌্যাব-৭ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও ফেনীসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে।’ অভিযানের সুফল পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগে ইয়াবার বড় চালান জব্দ করা হতো। কিন্তু জুন মাসের পর থেকে এখন বড় চালান জব্দ হচ্ছে না। তবে ক্যারিয়াররা কিছু কিছু ইয়াবা পাচার করছে এবং তাদের অনেকে ধরা পড়ছে।’

সাত হাজার ইয়াবা নিয়ে কক্সবাজার থেকে ঝালকাঠি যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম নগরের শাহ আমানত সেতু এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন বোরহান উদ্দিন (৩২) নামে এক ব্যক্তি। গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার পূর্ব পরিচিত অপু নামের একজন আমাকে একটি ডিজিটাল ঘড়ি দেয় ঝালকাঠি নিয়ে যাওয়ার জন্য। সেখানে আল আমিন নামের একজনকে ওই ঘড়ি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে ইয়াবা আছে সেটা আমি জানতাম না।’

বোরহান উদ্দিন ঘড়ির ভেতরে ইয়াবা থাকার তথ্য জানেন না দাবি করলেও তাঁর আচরণ ছিল সন্দেহজনক। তিনি সৌদিয়া পরিবহনের একটি গাড়িতে চট্টগ্রামে আসছিলেন। কিন্তু পটিয়ার শান্তিরহাট নামক এলাকায় পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে যান এবং অন্য একটি লোকাল বাসে চড়ে শাহ আমানত সেতু এলাকায় পৌঁছেন। সেখান থেকেই বোরহানকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। এ সময় বোরহান ঘড়িটি মসজিদের উল্লেখ করে গোয়েন্দা দলকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিলেন। পরে পুলিশ ঘড়িটি খোলে এবং সেখানে সাত হাজার ইয়াবা পায়।

একই দিন নগরীর সদরঘাট থানা পুলিশ কদমতলী এলাকায় তল্লাশির সময় আড়াই হাজার এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে এক হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে। সর্বশেষ সোমবার র‌্যাবের অভিযানে নগরীর বাকলিয়া থানার তক্তারপুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২০০ ইয়াবা ও ৫৬০ গ্রাম গাঁজাসহ গ্রেপ্তার হয় মো. রাজু ও মো. মফিজ নামের দুজন।

অভিযানের মধ্যেও ইয়াবা পাচারের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করলেও তুলনামূলক পাচার কমেছে বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি গোয়েন্দা বিভাগের অভিযানের তুলনামূলক বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর আগে এবং পরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় ইয়াবা পাচার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। অভিযানের সুফল।’

তিনি বলেন, ‘অভিযান শুরুর আগে মে মাসের প্রথমার্ধে নগর গোয়েন্দা পুলিশ ইয়াবা জব্দ করে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ। আর জুন মাসে সেই সংখ্যা অনেকাংশে কমেছে। আর ওই সময় গোয়েন্দা বিভাগ ইয়াবা জব্দ করেছে লক্ষাধিক। এতেই বোঝা যায়, অভিযানের  খুব ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। অভিযানের ফলে পরবর্তীতে ইয়াবা পাচার আরও কমে আসবে।’

তিনি জানান, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী এখন খুচরা পর্যায়ে ইয়াবা পাচ্ছে না সেবনকারীরা। এটা অভিযানের সুফল।

পাঠকের মতামত: