ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

আলীকদমে হাসপাতালের জমিসহ স্থাপনা বেদখলের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, লামা-আলীকদম, বান্দরবান ::  বান্দরবানের আলীকদমে পুরাতন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১০ শতক জমিসহ স্থাপনা বেদখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ কয়েকদফা উদ্যোগ নিয়েও বেদখল জমি উদ্ধার করতে পারেনি।
প্রতিবছর স্বাস্থ্য বিভাগ বেদখল হওয়া ভূমির উন্নয়ন কর দিলেও ভোগদখলে রয়েছে একই হাসপাতালে কর্মরত সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ইয়াছিন শরীফ ও তার স্ত্রী। দখলদার এ দম্পতির খুঁটির জোর কোথায় সে প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৮২ সালে আলীকদম থানা ঘোষণার পর সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে ২৮৮ নং আলীকদম মৌজার ৭ নং সিটের দাগ নং- ৯৭৪, ৯৭৫, ৯৭৬ এর আন্দর ৬৪ শতক জমিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবকাঠামো নির্মিত হয়। সেই থেকে ৬৪ শতক জমি স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করা হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৪ একর জমি এবং পুরাতন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ০.৬৪ শতক জমির ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করার রেকর্ড রয়েছে।
এদিকে, ১৯৯৪ সালে উপজেলার চৌমুহনীতে নির্মিত নতুন ভবনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্থানান্তর হয়। এরপর থেকে পুরাতন হাসপাতাল ও টিনশেড কোয়ার্টারগুলি খালি পড়ে থাকে। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মচারীরা অফিস আদেশমতে এসব খালিঘরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে। কয়েকবছর পূর্বে হাসপাতালের কিছু জায়গায় উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা ভবন নির্মিত হয়। কিন্তু দখলদারকে উচ্ছেদ না করেই পুরাতন হাসপাতালের জমির মাঝখানে ভবনটি নির্মিত হয়। এ ভবনের উত্তরে ১০ শতকের বেশি জমি অবৈধ দখলে থেকে যায়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তৎসময়ে পুরাতন হাসপাতালের উত্তরের টিনশেড ঘরটি ভাড়া নেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়া জোহরা বেগম। স্থানীয়দের অভিযোগ, এরপর থেকে স্বামী-স্ত্রী এ দুই কর্মচারী পুরাতন হাসপাতালের বরাদ্দ নেয়া কোয়ার্টার এবং জমি নিজেদের দখলে নিতে অপতৎপরতা শুরু করে। স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের খামখেয়ালীপনার কারণে একসময় এ দু’ কর্মচারীর অপতৎপরতা বাস্তবে রূপ নেয়। ইচ্ছেমত হাসপাতালের টিনশেড ঘরটির অবকাঠামোতে পরিবর্তন করা হয়। কোয়ার্টারসহ পার্শ্ববর্তী ০.১০ শতক জমি কথিত হেডম্যান রিপোর্ট নিয়ে দখল পাকাপোক্ত করেন এ কর্মচারী দম্পতি।
জানা যায়, ২০১০ সালে আয়া পদ থেকে জোহরা বেগম অব্যাহতি নিয়েছেন। কিন্তু সরকারি কোয়ার্টারটি এখনো তার এবং স্বামী ইয়াছিন শরীফের দখলে আছে। পার্বত্য এলাকায় ভূমি ব্যক্তি পর্যায়ে বন্দোবস্তি বন্ধ থাকা সত্ত্বেও কথিত হেডম্যান রিপোর্ট সংগ্রহ করে অবৈধভাবে সরকারি কোয়ার্টার দখল করেছেন এ দুজন সরকারি কর্মচারী। এছাড়াও তারা পার্বত্য এলাকায় স্থায়ী বাসিন্দা না হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে হেডম্যান রিপোর্ট পেয়েছেন, তা নিয়েও রয়েছে রহস্য।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে কয়েকদফা অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৩ সালে তৎকালীন ইউএনও আসাদুজ্জামান দখলদার সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ইয়াছিন শরীফকে সরকারি হাসপাতালের এ জমি থেকে উচ্ছেদের উদ্যোগ নেন। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সে সময় জেলা প্রশাসক এক আদেশে দখলদারকে উচ্ছেদ করার আদেশ দেন। কিন্তু ইউএনও আসাদুজ্জামান বদলি হওয়াতে সে উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।
২৮৮ নং আলীকদম মৌজার হেডম্যান অংহ্লাচিং মার্মা চকরিয়া নিউজকে বলেন, মাঠ খসড়ায় পুরাতন হাসপাতালের দাগের কিছু জমি খাস আছে। সেখান থেকে ইয়াছিন শরীফ কিছু জমি বন্দোবস্তির জন্য রিপোর্ট নিয়েছেন। তবে তার দাগ নম্বর আমার মনে নেই। গত বুধবার দুপুরে দখলদার ইয়াছিন শরীফ সাংবাদিকদের বলেন, আমার এ জায়গা খাস। হেডম্যানকে দাখিলা ফি দিয়ে আমি দখলে আছি। কিছু কুচক্রী মহল আমাকে উচ্ছেদে ষড়যন্ত্র করছে।
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. শহিদুর রহমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, পুরাতন হাসপাতালের কিছু জায়গা বেদখল হওয়ার বিষয়টি আমি জেনেছি। সিভিল সার্জনের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: