ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজার-উখিয়া-টেকনাফ সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও অদক্ষ চালকে বাড়ছে দুর্ঘটনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, উখিয়া ::

কক্সবাজার–টেকনাফ–উখিয়া সড়কে নানা কারণে দিন দিন ব্যস্ততা বাড়ছে। ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অবস্থানের কারণে এখানকার গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে যানবাহনের সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে আনাড়ি ও অদক্ষ চালকের সংখ্যাও। এতে সড়কে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। বিপর্যস্ত হয়ে উঠছে উখিয়া–টেকনাফের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাগামী ছাত্র/ছাত্রীদের নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন অভিভাবকরা। বেড়েছে জনদুর্ভোগ।

সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে যানজটে নাকাল সাধারণ মানুষের মৃত্যুঝুঁকি এড়াতে কক্সবাজার–টেকনাফ সড়কটি ৪ লেইনে উন্নীত করার দাবি জানানো হলেও তা বাস্তবায়নে তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। তবে ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে সৃষ্ট খানা–খন্দকগুলো ইট কংক্রিটের জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করতে দেখা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এগারো লক্ষাধিক রোহিঙ্গার মধ্যে নয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গার অবস্থান উখিয়ায়। এসব রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী পরিবহনে চলাচল হচ্ছে ৪৫/৫০ টন ওজনের ভারি যানবাহন। অথচ একলেনের এই সড়কটি অতিরিক্ত এই ভার সইতে পারছে না। ফলে ইতোমধ্যে কক্সবাজারের লিংরোড থেকে উখিয়ার থাইংখালী পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কি.মি. সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানা খন্দকের সৃষ্টি হয়েছে।

বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞের শিকার হয়ে এদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবায় নিয়োজিত এনজিও গুলোর গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে ব্যাপক হারে। এছাড়াও যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় টমটম, ভটভটি, ডাম্পার, চাঁদের গাড়ি, অটোরিক্সা ও ব্যাটারি চালিত রিক্সাসহ ৫ হাজারেরও অধিক বিভিন্ন ধরনের যানবাহন এ সড়কে দিনরাত চলাচল করছে। এতে অতিরিক্ত যানবাহন, নড়বড়ে গাড়ি, আনাড়ি ও অদক্ষ চালকের কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে মারাত্মকভাবে। এছাড়াও অতিরিক্ত লোকসংখ্যার কারণে যাত্রী বেড়ে যাওয়ায় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ফিটনেসহীন গাড়িগুলো এখানে প্রতিনিয়ত চলাচল করছে। এতে গত ১০ মাসে অন্তত ৩০ জন মানুষের প্রাণহারি ঘটেছে।

সর্বশেষ মে মাসের শেষের দিকে সড়কের জাদিমুরা এলাকায় ডাম্পারের ধাক্কায় সিএনজি উল্টে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সহ–সভাপতি সিরাজুল হক বিএন ও জেলা বিএনপির সদস্য সিরাজুল হক ডালিম নিহত হন।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে চকরিয়া নিউজকে বলেন, ওয়ান ওয়ে কক্সবাজার–টেকনাফ সড়কটি এমনিতে সংকুচিত। যেখানে ২টি গাড়ি ক্রস করতে ঝুঁকি নিতে হয়, সেখানে দৈনিক ১০ হাজারের অধিক যানবাহন চলাচল করছে। সড়কপথে পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, আর্মড পুলিশ ও ব্যাটলিয়ান পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্বপালন করলেও অদক্ষ, অযোগ্য চালকের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না।

সম্প্রতি উখিয়া উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বিশ্ব শরণার্থী দিবসের আলোচনা সভায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দসহ কোস্ট ট্রাস্টের পক্ষ থেকে কক্সবাজার–টেকনাফ সড়কটি ৪ লেইনে উন্নীত করে যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে জানান, কক্সবাজার–টেকনাফ সড়কটি ৪ লেইনে উন্নীত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এর আগে কক্সবাজার–টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ ও এলজিইডি সড়কটি হাল্কা যানবাহন চলাচলের জন্য অনুমোদন দেয়ার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জানানো হয়েছে।

কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়ুয়া চকরিয়া নিউজকে জানান, সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে সওজ’র জায়গা দখল করে বিভিন্ন উপায়ে তৈরি করা স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হওয়া ছোট বড় খানা–খন্দকগুলো সংস্কার করে যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন করার চেষ্টা চলছে।

পাঠকের মতামত: