ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় পাহাড় কেটে সড়ক তৈরি, বিএনপি নেতা বাবুল গ্রেপ্তার

ছবির ক্যাপশন ::   চকরিয়ার মানিকপুরে ফলদ বাগান উজাড় করে পাহাড় কেটে তৈরি করা হচ্ছে সড়ক।

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া ::

ইটভাটায় চলাচলের জন্য চকরিয়ায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ফলদ বাগান উজাড় করে পাহাড় কেটে তৈরি করা হচ্ছে সড়ক। এ ঘটনায় বনবিভাগের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, যেসব প্রভাবশালী ইটভাটা মালিক তাঁদের ভাটায় যাওয়ার জন্য পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণকাজ চালাচ্ছেন তাঁদের সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে বন কর্মকর্তারা। তাই প্রভাবশালীদের অন্ধকারে রেখে একজন ইটভাটা মালিককে আসামি করে মামলাটি করা হয়েছে। মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে চকরিয়া পৌরসভা বিএনপি নেতা আবদুর রহমান ওরফে বাবুল চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে।

গত বুধবার মামলা দায়েরের পর রাতেই পৌরশহর চিরিঙ্গা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা আবদুর রহমান ওরফে বাবুল চৌধুরী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আবদু শুক্কুরের ছেলে।

তবে বন বিভাগের পক্ষে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আবদুল মতিন চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘পাহাড় কেটে সাবাড় করে সড়ক তৈরি এবং বনভূমি দখলে নিয়ে ঘরবাড়ি নির্মাণের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী যেখান থেকে এই সড়ক নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছে এর পাশেই রয়েছে এএমআর নামে একটি ইটভাটা। সেই ইটভাটা মালিক আবদুর রহমান ওরফে বাবুল চৌধুরী এবং মাস্টার খাইরুল পাহাড় কাটার নায়ক। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা দেওয়া হয়েছে। বনভূমিতে ঘরবাড়ি তৈরির মামলায় গ্রেপ্তার আবদুর রহমান বাবুল চৌধুরীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন। আর রাস্তা তৈরির জন্য পাহাড় কেটে সাবাড় করার ঘটনায় মামলায় আসামি করা মাস্টার খাইরুলকেও গ্রেপ্তার করা হবে।’

মাস্টার খাইরুল অভিযোগ অস্বীকার করে চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘আমার ইটভাটা হচ্ছে লামার ফাইতংয়ে। তাই আমি কেন চকরিয়ার মানিকপুরে পাহাড় কেটে সড়ক তৈরি করতে যাব। যাঁরা এসব অভিযোগ আনছেন তা মূলত আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রেরই অংশ।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা চকরিয়া নিউজকে বলেন, মানিকপুর ইউনিয়নের মানিকপুর বনবিটের নিয়ন্ত্রণাধীন তাইরছড়া-ফাইতং এলাকায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর পাহাড় কেটে রাস্তার নির্মাণকাজ চালানো হয় গত কয়েকদিন ধরে। তাই বনভূমির ওপর রোপিত ফলদ বাগান একেবারে উজাড় করে ফেলা হয়। এর পর স্কেভেটর দিয়ে চকরিয়ার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এই সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করেন।

তাঁরা আরো বলেন, তাইরছড়া-ফাইতং এলাকায় এমআরআই নামের যে ইটভাটাটি রয়েছে সেখানে যাওয়ার জন্য আগে থেকেই সড়ক রয়েছে। কিন্তু বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের পাগলির পাড়ায় দুটি ইটভাটা নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। এই দুটি ইটভাটা স্থাপন করছেন চকরিয়ার দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি। এ কারণে যোগাযোগ সহজতর করতেই পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন আরো চকরিয়া নিউজকে জানান, লামার ফাইতং ইউনিয়নের পাগলির পাড়ায় যে দুটি ইটভাটা স্থাপন করা হচ্ছে সেখানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের পাড়া বিদ্যমান ছিল। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে কৌশলে উচ্ছেদ করে দিয়ে স্থাপন করছে ইটভাটা। আর হোল্ডিংয়ের মালিক পাগলির পাড়া থেকে সপরিবারে উচ্ছেদ হওয়া থোয়াই হ্লা অং মার্মা বর্তমানে অবস্থান করছেন লামার মিজ্জিরি পাড়ায়। তিনি বলেন, ‘আমার মতো বেশকিছু পরিবার সেখান থেকে উচ্ছেদ হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।’

৩০৬ নম্বর ফাইতং মৌজার হেডম্যান উম্রা মং মার্মা জানান, ফাইতং ইউনিয়নের পাগলিরপাড়ায় একটি উপজাতিপাড়া ছিল। সেখানে বেশকিছু পরিবার বসবাস করে আসছিল কয়েক শ বছর ধরে। কিন্তু ইটভাটা স্থাপনের কারণে সেখান থেকে উচ্ছেদ হতে হয়েছে তাঁদের।

গ্রেপ্তারের আগে আবদুর রহমান ওরফে বাবুল চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘বন কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের টাকা চেয়েছিল। টাকা না দেওয়ায় মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে।’

পাঠকের মতামত: