ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

লামায় বৃষ্টি নামলেই বন্যা আতঙ্ক দ্রুত মাতামুহুরী খননের দাবি

লামা প্রতিনিধি ::

মুষলধারে বৃষ্টি নামলেই পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার আতঙ্কে শংকিত হয়ে পড়েন লামাবাসী। নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দেন বন্যা আতঙ্কে। রাত জেগে ঘরের মূল্যবান আসবাব পত্র সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। প্রতিবছর সামান্য বৃষ্টিতে লামা তলিয়ে গেলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তদের। তবে এই বন্যা থেকে মুক্তি পেতে তারা দু’টি বিষয়কে চিহ্নিত করছেন। তারা বলছেন, লামা শহরকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে ইতোপূর্বে প্রস্তাবিত মাতামুহুরী নদীর গতি পরিবর্তন ও দ্রুত মাতামুহুরী খননের বিকল্প নেই।

সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা মুষলধারে বৃষ্টি হলেই উপর থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরী নদীর দু’কূল উপছে বন্যার সৃষ্টি করে। এসময় লামা পৌর এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে যায়। এলাকায় ব্যাপক জানমালের ক্ষতি সাধিত হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরসমূহ পানিতে তলিয়ে যায়। লামা–আলীকদম সড়কের একাধিক পয়েন্ট বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আলীকদমের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে লামা বাজারের ব্যবসায়ীদের বন্যার সময় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দোকানের মালামাল সরাতে চরম হিমশিম খেতে হয়। বেশির ভাগ সময় মালামাল সরাতে না পেরে অনেক ব্যবসায়ী বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হন। উপজেলায় হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়।

সম্প্রতি পবিত্র ঈদ–উল–ফিতরের পূর্ব মাত্র তিনদিনের বৃষ্টিতে পরপর দু’বার বন্যায় প্লাবিত হয় লামা পৌরসভা এবং এর আশপাশের এলাকাসমূহ। এসময় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। স্থানীয়রা ফি বছর সামান্য বৃষ্টিতে লামা বন্যা কবলিত হওয়ার জন্য প্রধানত দু’টি কারণকে এখন দায়ী করছেন। একটি হচ্ছে মাতামুহুরী নদীর নাব্যতা হ্রাস। অপরটি হচ্ছে লামা বাজারের পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত পাহাড়ি ছড়ার সরু পথ। তাদের মতে, যুগ যুগ ধরে পাথরের বেষ্টনি দিয়ে গড়ে উঠা পাহাড়গুলো থেকে নিয়ম বহির্ভূত উপায়ে পাথর আহরণের ফলে বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক হারে পাহাড়ে ধসের সৃষ্টি হয়। ধসে পড়া পাহাড়ের মাটি ও বালি বৃষ্টির পানির সাথে পাহাড়ি ঝিরি বেয়ে মাতামুহুরী নদীতে পড়ে অস্বাভাবিকভাবে নাব্যতা হ্রাস করে। এছাড়া পাহাড়ে জুম চাষের কারণে অগ্নি সংযোগ এবং অব্যাহতভাবে বৃক্ষ নিধনের ফলে পাহাড়গুলো ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। ন্যাড়া পাহাড়গুলো বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। ফলে পাহাড়ের বালি ও মাটি নিয়ে বৃষ্টির পানি দ্রুত নদীতে নেমে আসে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অস্বাভাবিকভাবে নাব্যতা হারিয়েছে মাতামুহুরী। যার কারণে সামান্য বৃষ্টিতে দু’কূল উপছে বন্যার সৃষ্টি করে। এছাড়া লামা বাজারের পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত সুখো এবং দুঃখো নামের দুটি পাহাড়ের মধ্য দিয়ে মাতামুহুরী নদীটি প্রবাহিত। পাহাড়ি ঢলের পানি এ দু’পাহাড়ের মধ্যকার সরু স্থান দিয়ে দ্রুত প্রবাহিত হতে না পেরে বন্যার সৃষ্টি করে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বন্যার কবল থেকে লামা শহরকে রক্ষার জন্য মাতামুহুরী নদী গতি পরিবর্তনের একটি প্রকল্প ইতোপূর্বে হাতে নেয়া হয়েছিল।

লামা বাজার থেকে ১ মাইল উত্তরে অবস্থিত মাতামুহুরী ও বমু নদীর সংযোগ স্থল থেকে নদীর গতি পরিবর্তন করে দিলে বন্যার কবল থেকে লামাবাসীকে স্থায়ীভাবে মুক্ত করা সম্ভব। উক্ত স্থান দিয়ে প্রায় ১ কিলোমিটার পর্যন্ত পাহাড়ি ঝর্ণা কেটে দিলেই এ গতি পরিবর্তন সম্ভব। লামা বাজারের ব্যবসায়ী মো. নবীর উদ্দিন জানান, বাজারেই তার বাসা। মুষলধারে বৃষ্টি নামলে বন্যার আশংকায় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসে থাকেন কিংবা পরিবারের মূল্যবান জিনিসপত্র সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মাতামুহুরী নদী খনন ও প্রস্তাবিত পথে নদীর গতি পরিবর্তন হলে এ অবস্থা থেকে লামাবাসী মুক্তি পাবে বলে আশা করেন তিনি।

লামা নাগরিক ফোরামের সভাপতি ও লামা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান জানান, প্রস্তাবিত পথে গতি পরিবর্তনের ফাইলটি দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট বিভাগের হিমাগারে পড়ে থাকলেও লামাবাসীকে বন্যার কবল থেকে মুক্তির এ স্থায়ী উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, মাতামুহুরী নদীর গতি পরিবর্তন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে লামা শহর যেমন বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতো, তেমনি নদীর বর্তমান অংশটুকু বাঁধ দিলে প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হত মনোরম প্রাকৃতিক লেক। যা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখত এবং মৎস্য চাষের মাধ্যমে এই অঞ্চলের মাছের পুরোপুরি চাহিদা পূরণ করত বলে জানান তিনি।

এছাড়া প্রস্তাবিত পথে মাতামুহুরীর গতি পরিবর্তন কিংবা নদী খনন করে শীঘ্রই লামা শহরকে বন্যার কবল থেকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আগামী বর্ষা মৌসুমগুলোতে লামায় পাহাড়ি ঢলে বন্যার সৃষ্টি হয়ে তা পুরো বর্ষা মৌসুম জুড়ে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিতে পারে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা।

পাঠকের মতামত: