ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানে পরিবেশ-প্রতিবেশের জ্ঞান অন্বেষণে ৪০ শিক্ষার্থী

ডিডডডডডডবশির আল মামুন, চকরিয়া :
চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীস্থ কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পশ্চিম ও পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত শতবর্ষী গর্জন মা গাছ আর বিভিন্ন বুনোহাতি, বানর ও পাখ-পাখালীর কলতানে ভরপুর মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান। প্রায় ৩৯৫ দশমিক ৯৩ হেক্টর বনভূমি নিয়ে গঠিত উদ্যানের জীববৈহিত্র্যপূর্ণ প্রকৃতির নয়নাভিরাম দৃশ্য পর্যবেক্ষণ ও পরিবেশ-প্রতিবেশের জ্ঞান অন্বেষণে জড়ো হয় ৪০ জনের একটি তরুন দল। দলের বেশির ভাগ সদস্যই কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থী। ১৮ ফেবুয়ারী উপজেলার ডুলাহাজারা কলেজ ও খুটাখালী তমিজিয়া ইসলাম ফাজিল মাদ্রাসার এসব শিক্ষার্থীকে মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান ভ্রমন ও প্রকৃতি প্রেমে তারুন্যকে অবলোকনের সুযোগ করে দেয় ইউএসএইড এর ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইকুসিস্টেম এন্ড লাইভলিহুড্স (ক্রেল) প্রকল্প। ওইসময় শিক্ষার্থীরা প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে জানতে উদ্দীপ্ত হয়ে বন ও প্রকৃতি রক্ষায় একাত্ত্বতা প্রকাশ করেন। এর আগে গবেষনামুলক এ অনুষ্ঠানের উদ্ভোধন করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রফিকুল হক। ওইসময় তিনি বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ‘‘জঙ্গল ওয়াক’’ নামে এ ধরনের বিকল্প পোগ্রামের আয়োজন ও তা থেকে জ্ঞান অর্জন নি:সন্দেহে ভালো উদ্যোগ। তিনি তরুনদেরকে বন ও পরিবেশ সংরক্ষনে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
অনুষ্টানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (ফুলছড়ি) মোহাম্মদ ইউসুফ জীববৈচিত্র্য, প্রতিবেশ, খাদ্যশৃঙ্খল ও বন আইন নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, আজকের তরুনরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। বৃক্ষরাজিতে ভরপুর জাতীয় উদ্যানকে সকলের প্রয়োজনে সংরক্ষণ করতে হবে।
চকরিয়া উপজেলা ক্রেল প্রকল্পের সাইট অফিসার মো.আব্দুল কাইয়ুম ওই সময় শিক্ষার্থীদের সামনে মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানের পরিচিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ৩৯৫ দশমিক ৯৩ হেক্টর বনভূমি নিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয় গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মেধাক”ছপিয়া জাতীয় উদ্যান ঘোষনা করা হয়। একটি সহ-ব্যব¯’াপনা কাউন্সিল ও সহ-ব্যব¯’াপনা কমিটি ছাড়াও মেদাকচ্ছপিয়া রেঞ্জের আওতায় ১৩টি ভিলেজ কনজারভেশন ফোরাম (ভিসিএফ), ১টি পিপল্ ফোরাম (পিএফ) এবং ১টি কমিউনিটি পেট্রোলিং গ্রুপ (সিপিজি) এবং ৩টি বন সংরক্ষণ ক্লাব গঠন করা হয়েছে। এখানে ৬ জন প্রশিক্ষিত ইকো-ট্যুর গাইড আছে। তিনি ওইসময় কিভাবে বনে যাবেন, কিভাবে শিখবেন ও জানবেন এবং তা দেওয়ালিকায় প্রকাশ করবেন এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন।
অনুষ্টানের শুরুতে মেদাকচ্ছপিয়া পার্ক অফিস থেকে পায়ে হেঁটে প্রকৃতি দর্শনে নেমে পড়েন শিক্ষার্থীরা। ডুলাহাজারা কলেজের অধ্যক্ষ ও ফাসিয়াখালী সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন চেীধুরী, ক্রেল কমিউনিকেশন অফিসার ও সাংবাদিক বিশ্বজিৎ সেন, গ্রান্টস অফিসার হেলাল উদ্দিন, রেঞ্জ কর্মকর্তা কাজী মোকাম্মেল কবির, মেদাকচ্ছপিয়া সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এসএম আবুল হোসেন, তমিজিয়া ইসলাম ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক মাও. ওশিদ আহমদ, প্রাকৃতিক সম্পদ সহায়ক গাওহার উদ্দিন ও সাইদুল ইসলাম, বিট কর্মকর্তা আবু সৈয়দ জাকারিয়া বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে ছাত্রছাত্রীদের গাছ ও প্রকৃতি চিনিয়ে দেন এবং ছাত্রছাত্রীরা এর নোট নেন।
গবেষণার কাজে সহায়তা পেতে শিক্ষাথীদের জানানো হলো, বর্তমানে মেধাকচ্ছপিয়া সিএমসির আওতায় ১৩টি গ্রাম/পাড়া রয়েছে। এ গুলো হলো পূর্ব গর্জনতলী, মধ্যম গর্জনতলী, পশ্চিম গর্জনতলী, বাকুম পাড়া, হাজী পাড়া, মসজিদ পাড়া, অফিস পাড়া. উত্তর মেধাক”ছপিয়া, পাগলীর বিল, সেগুন বাগিচা, সিকদার পাড়া, কুতুবদিয়া পাড়া ও নলবুনিয়া। এসব গ্রাম উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নে অবস্থিত। এই ১৩টি গ্রামে ৩,৫০০টি পরিবার, জনসংখ্যা ১৯২৪৯ জন, পুরুষ ১০৫১৪ জন, নারী ৮৭৭৫ জন, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর শতকরা হার ২৪ভাগ। তাদের মধ্যে প্রায় ৮৭% মুসলিম এবং বাকী সব হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রধান পেশা কৃষি। পাশাপাশি শিক্ষকতা, কাঠ ব্যবসা, জ্বালানী কাঠ সংগ্রহকারী, জবরদখলকারী, ডাক্তার, সাংবাদিক, সমাজকর্মী, স’মিল মালিক, ইট ভাটার মালিক ইত্যাদি পেশার সাথে জনগণ বিদ্যমান। অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠী জীবিকা নির্বাহে জাতীয় উদ্যানের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। ভূপ্রকৃতি ঃ পাহাড়ী ও সমতল ভূমি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৬ টি, বেড়ীবাঁধ ১৮ কিঃমিঃ, আশ্রয় কেন্দ্র ২টি, হাট-বাজার তিনটি।
kk-pic1ওইসময় আরো জানানো হয়, মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানের জায়গা জবর দখলের পরিমাণ ৭২.৪১ হেক্টর। যার অধিকাংশই রয়েছে গর্জনতলী, নলবুনিয়া পাড়া, বাক্কুম পাড়া, দক্ষিণ মেধাকচ্ছপিয়া পাড়া, মধ্যম মেধাকচ্ছপিয়া পাড়া, উত্তর মেধাকচ্ছপিয়া পাড়া প্রভৃতি এলাকায়। জবরদখলকৃত ওই এলাকা দখলমুক্ত করতে বসবাসরত লোকজনকে এনরিচমেন্ট বনায়নের আওতায় আনা যেতে পারে। জানানো হয় জাতীয় উদ্যানের প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদ সেখানকার উচুনিচু পাহাড়, সমতলভূমি,ছড়া,খাল, জলাশয়, বাঁশঝাড়,নিকট¯’ বন, বনভুমি, গাছপালা । এ বনে প্রধান বৃক্ষ গর্জন। এ ছাড়াও চাপালিশ, ডুমুর, বহেড়া, অর্জুন, বাশ, বেত, কদম, চাতিম, কাঁঠাল, বন্য আম, জাম, জামরুল ইত্যাদি গাছ রয়েছে। পশু (হাতি, হরিণ, হনুমান, বানর, খাটাশ, কাটবিড়ালী, গুইসাপ, গরু, ছাগল, কুকুর, হ্যাজা সাপ) এবং পাখির মধ্যে বনমোরগ, ঈগল, ধনেশ, সবুজ ঠোট, ফিংগে, চিল, শ্যমা, দোয়েল,বুলবুলি,চাতার, সিন্দুুর পাখি, টিয়া, ময়না, শালিক ইত্যাদি।
ওইদিন দুপুর দেড়টার দিকে বনাঞ্চলের ভেতর থেকে ফিরে আসেন তারুন্যের প্রকৃতি প্রেমে মুগ্ধ শিক্ষার্থীরা। বনের শ্যামল পরিবেশ দেখে মুক্ত হন সবাই। পরে মেধাকচ্ছপিয়া অফিসে অনুষ্টিত সভায় বন পরিদর্শনের অনুভূতি প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা। ওইসময় ডুলাহাজারা কলেজের একাদশ শেনীর আনিকা তাসনিম বলেন, বাড়ির পাশে এত কাছে এমন সবুজ-শ্যামল বন আছে কখনও ভাবতে পারিনি। এর উপকারীতা কথা জেনে নিজেকে সুভাগ্যবান মনে করছি। তমিজিয়া মাদরাসার আালিম ১ম বর্ষেও ছাত্র মিজবাহ উদ্দিন বলেন, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও ঝীববৈচিত্র্যর কথা শুধু শুনেছি আজ নিজ চোখে দেখলাম। তিনি বলেন, গাছ আমাদের খাবার তৈরি করে, অক্সিজেন দেয়। সুতরাং সকলের প্রয়োজনে আমরা বনকে রক্ষা করার অঙ্গীকার করছি এবং সকলের মাঝে এই বার্তা পৌছে দেওয়ার দায়িত্ব নিচ্ছি।এরপর সকলে শপদ নিলেন জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে বন ও পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়তা কওে যাবেন। #

পাঠকের মতামত: