ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

সাতকানিয়ার আমিলাইষে ৪ দিনে শঙ্খ গিলে খেল ৫০ বসতঘর

সাতকানিয়া প্রতিনিধি ::

শঙ্খ নদীর করালগ্রাসে তলিয়ে যাচ্ছে সাতকানিয়ার বিস্তীর্ণ জনপদ। বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই পাহাড়ি ঢলে প্রমত্ত শঙ্খ এখন খরস্রোতা। স্রোতের টানেই প্রতিদিন সাতকানিয়ার আমিলাইষ ইউনিয়নে বসতঘর ভাঙছে। প্রতিবছর ঘরসহ নানা স্থাপনা হারিয়ে গেলেও জনপদ রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে প্রতিদিনই নিঃস্ব হচ্ছে বাসিন্দা।

সোমবার সরেজমিন দেখা গেছে, আমিলাইষ সারোয়ার চৌধুরী বাজারের অল্প পশ্চিমে শঙ্খ নদীর ভাঙন প্রবল আকার ধারণ করেছে। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সারওয়ার উদ্দিন চৌধুরীর বাড়ির উত্তর পাশের পুরো পাড়া বিলীন হয়ে গেছে শঙ্খ। প্রতিরাতেই দুই-চারটি করে বসতঘর বিলীন হচ্ছে। ঈদের আগে মাত্র চার দিনে এখানকার অন্তত ৫০টি বসতঘর শঙ্খে বিলীন হয়েছে বলে জানালেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় গৃহবধূ শাহীন আক্তার বলেন, ‘কৃষক স্বামী হুমায়ুন কবির এই পর্যন্ত তিন দফা ভিটা পরিবর্তন করেছেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। এখন আবারও ভিটা পরিবর্তন করতে হবে আমাদের। কিন্তু শেষ রক্ষা হচ্ছে না।’

মোহাম্মদ বাবুল ছিলেন কৃষক। এখন তিনি প্রবাসী। তিনি ভাইদের নিয়ে দোতলা বাড়ি করেছেন। সেই বাড়িটি বিলীন হয়ে গেছে। অন্তত ৪০ লাখ টাকা ব্যয় করে তৈরি করা ঘরটি ইতোমধ্যেই ‘নেই’ হতে চলছে। এছাড়া মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বানিয়েছিলেন একতলা পাকা বাড়ি। সেই বাড়ির পুরোটাই এখন শঙ্খের পেটে। কোনো মতে প্রাণ নিয়ে বাসিন্দারা বেরিয়ে আসতে পারলেও বাড়ির জিনিসপত্রসহ শঙ্খে চলে গেছে বাড়িটি।

এছাড়া ঘর হারিয়েছেন নুরুল আলম, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল আহমদ, মোহাম্মদ মুসা, জয়নাল, গিয়াস উদ্দিন, মহিউদ্দিন, সাহাবুদ্দিন, জাফর হোসেন, মোহাম্মদ হানিফ, জমির আহমদ ও সারওয়ারসহ অনেকে।

সরেজমিন দেখা যায়, অনেক মানুষ নিজেদের ঘরের চাল, বেড়াসহ আসবাবপত্র স্তূপ করে রেখেছেন শঙ্খ নদীর তীরবর্তী সড়কের পাশে বা খোলা জায়গায়। তাঁদের ঘরে এবার ঈদও আসেনি! নদীর পাড় থেকে মাটির স্তূপ শঙ্খে পড়ার সঙ্গেই যেন তাঁদের স্বপ্ন ডুবে যাচ্ছে শঙ্খে। তিলে তিলে গড়ে তোলা বসতঘর চোখের সামনেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে। জনবসতি নিশ্চিহ্ন হওয়ার দীর্ঘ গল্প শোনালেন বাসিন্দারা। দফায় দফায় বসতভিটা পরিবর্তন করে তাঁরা নিঃস্ব থেকে নিঃস্ব হচ্ছেন।

ভাঙনের বিষয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. সারওয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘যুগ যুগ ধরেই আমিলাইষ এলাকায় ভাঙন চলছে। কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে আমিলাইষের সঙ্গে উপজেলা সদর, চরতী ও নলুয়া ইউনিয়নসহ অন্যান্য এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।’

ভাঙন সময়ের কথা উল্লেখ করে বাসিন্দারা জানান, রাতে তাঁরা ঘুমাতে পারেন না। কখন নদীগর্ভে ঘর বিলীন হয় এমন আশঙ্কায়। তাই ভাঙনের মুখে ঘর সঁপে দিয়ে তাঁরা খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন করতে বাধ্য হন। এরই মধ্যে বৃষ্টি গেছে মাথার ওপর। এখন নতুন জায়গা খুঁজে নতুন করে বাড়ি তৈরি করা তাঁদের জন্য দুঃসাধ্যের হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ সড়কের ধারে কিংবা অন্যের জমিতে গিয়ে ঘর তৈরির চেষ্টা করছেন।

শঙ্খের ভাঙনরোধকল্পে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহা বলেন, ‘শঙ্খ ও ডলু নদীর ৪১ পয়েন্টে ভাঙন হচ্ছে। ভাঙনরোধকল্পে ইতোমধ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে তো আর কাজ করা যাবে না। শুষ্ক মৌসুমে কাজ হবে।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভাঙনরোধকল্পে এখন জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলেও ভাঙনরোধ করা যায়, কিনা, সেই চেষ্টা করা হবে।’

পাঠকের মতামত: