ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

চকরিয়ায় ১৫ ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত দুই লাখ মানুষ পানিবন্দী

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

কক্সবাজারের চকরিয়ায় বন্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত তিনদিনের লাগাতার ভারী বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে পৌরসভার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড ছাড়াও ১৫টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম ভাসছে পানিতে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব ইউনিয়নের অন্তত দুই লাখ মানুষ। ভেঙে পড়েছে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। কোথাও কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো বানের পানিতে কয়েকফুট তলিয়ে রয়েছে। এতে চিরিঙ্গা–কাকারা–মাঝেরফাঁড়ি সড়ক, চকরিয়া–মহেশখালী সড়ক, চিরিঙ্গা–কেবি জালাল উদ্দিন সড়ক, বানিয়ারছড়া–মগনামা সড়কের ওপর দিয়ে কয়েকফুট উচ্চতায় বানের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বানের পানি প্রবেশ করায় সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অঘোষিতভাবে বন্ধ রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন তদারক রুম খুলে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং বন্যাকবলিত মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার কাজ চালাচ্ছেন। তবে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন মানুষ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার পাড়ার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, গত দশ বছরের মধ্যে পৌরসভায় তিন নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার পাড়ায় বন্যার পানির দেখা যেত না। এবার বাড়ির ভেতর পর্যন্ত কয়েকফুট উচ্চতায় পানি ঢুকেছে। এতে মানুষ দুর্বিষহ অবস্থায় পড়েছেন। হয়তো মাতামুহুরী নদীর কোন শাখা খালে বাঁধ দেওয়ার কারণে এই অবস্থা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

বিএমচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জানান, ইউনিয়নের মাতামুহুরী নদীতীরের বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ব্যাপকভাবে ঢুকে পড়ছে বানের পানি। বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার জানান, ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যে অনেক পরিবার বাড়িভিটে ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।

একইভাবে চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর–মানিকপুর, কাকারা, কৈয়ারবিল, লক্ষ্যারচর, বরইতলী, হারবাং, কোনখালী, ঢেমুশিয়া, ডুলাহাজারা, সাহারবিলসহ ১৫টি ইউনিয়ন এবং পৌরসভার অন্তত দুই লক্ষাধিক মানুষ বানের পানিতে ভাসছে। অপরদিকে গত চারদিন ধরে ইউনিয়নগুলো পল্লী বিদ্যুতের দেখা পাচ্ছেনা মানুষ। এতে দুর্বিষহ যন্ত্রণার মধ্যে পতিত হয়েছে মানুষগুলো। চকরিয়া–পেকুয়া উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান চৌধুরী মানিক বলেন, ‘ঈদের আগে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়া মানুষগুলোর পাশে সরকারকে দাঁড়াতে হবে।’

চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলম বলেন, ‘বন্যাসহ যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। সার্বক্ষণিক খোঁজ–খবর রেখেছি বন্যাদুর্গত মানুষগুলোর। যেসব এলাকা বানের পানিতে তলিয়ে গেছে সেখানকার মানুষ যাতে খাবার ছাড়া না থাকে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বন্যাকবলিত মানুষগুলোকে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের। এজন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি জানান, বানের পানি যাতে দ্রুত ভাটির দিকে নেমে যেতে পারে সেজন্য উপকূলীয় এলাকার চিংড়িজোন এবং বিভিন্ন ছড়াখালের সবকটি ুইস গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, ‘চকরিয়ায় গত তিনদিন ধরে স্বশরীরে গিয়ে প্রত্যেকটা ইউনিয়নের খোঁজ–খবর রেখেছি। এ পর্যন্ত কোথাও কোন ধরণের দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। বন্যার্তদের পাশে থাকার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে দুইজন করে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’ ইউএনও আরো বলেন, ‘এখন পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারের কাজ চালানো হচ্ছে। এর পর ব্যাপক পরিসরে ত্রাণ তৎপরতা চালানো হবে বন্যাকবলিত এলাকায়। এজন্য জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।’

পাঠকের মতামত: