ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘টেকনাফ-কক্সবাজারে ইয়াবার পাশাপাশি বাড়ছে দেহব্যবসা’

ডেস্ক রিপোর্ট ::
‘স্থানীয় মানুষের চেয়ে বহিরাগতের সংখ্যা কোনও এলাকায় বেড়ে গেলে নানা রকমের ঝুঁকি সৃষ্টি হবেই। টেকনাফ ও কক্সবাজার অঞ্চলে এখন তেমনই হচ্ছে,’ বলেন স্থানীয় কলেজ শিক্ষক মোকাররম হোসেন।

তার মতে, ‘এতো লোকের ভিড়ে কাজ করছে সুযোগ-সন্ধানী মতলববাজরা। মাদক ও অন্যান্য অপরাধের মাধ্যমে তারা সৃষ্টি করছে নিরাপত্তার সমস্যা। টেকনাফে ইয়াবার পাশাপাশি বাড়ছে দেহব্যবসা। ‘

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শরণার্থী উপদ্রুত এলাকায় বর্তমানে কয়েকটি সমস্যা প্রকট হয়ে নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে। এর মধ্যে ইয়াবার কারবার প্রধান। তদুপরি বাড়ছে দেহব্যবসা। বিপুল মানুষ আর্থিক লাভের জন্য মাদকের পাশাপাশি লিপ্ত হচ্ছে অবৈধ দেহব্যবসায়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মেয়েদের এ কাজে নিয়োজিত করছে একটি প্রভাবশালী চক্র।

টেকনাফ ও কক্সবাজারে এখন স্থানীয়-শরণার্থী দ্বন্দ্ব-সংঘাত আরেকটি অন্যতম সমস্যা। উভয় পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছাড়াও প্রায়ই মারপিট ও সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। রক্তারক্তি পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে প্রায়শই।

সরেজমিন অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বেঁচে থাকার জন্য শরণার্থীরা অবৈধ ও বিপজ্জনক পেশা বেছে নিচ্ছে। মাদক, দেহ ব্যবসা, মানব পাচার এর মধ্যে প্রধান। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে মাদকের পাশাপাশি অস্ত্র ও অন্যান্য বিপজ্জনক পণ্যের চোরাচালান এবং লেনদেন এ অঞ্চলে বৃদ্ধি পেলে চরম নিরাপত্তা ঝুঁকির সৃষ্টি হবে।

শরণার্থী বহুল সীমান্ত এলাকায় কর্মরত কয়েকটি এনজিও’র প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে জানান, স্থানীয় জনগণের স্বাভাবিক জীবন-যাত্রায় বিদ্যমান পরিস্থিতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। স্কুল-কলেজের ছাত্রদের পাঠ্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তারা শরণার্থী সম্পর্কিত নানা পাঠ্য-বহির্ভূত অবৈধ কাজে জড়াচ্ছে।

বিশেষ করে, স্থানীয় বেকার ও উঠতি বয়সের তরুণরা ক্যাম্পের মেয়েদের সঙ্গে প্রেম বা দৈহিক সম্পর্কে জড়িত হওয়ায় নানা জটিলতা ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এনজিও এবং অন্যান্য কাজে আগত হাজার খানেক কর্মচারীর কেউ কেউ শরণার্থী পরিবারের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করার মাধ্যমে বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করায় পরিস্থিতি স্পর্শকাতর হয়ে উঠছে। কক্সবাজার এবং আশেপাশের পর্যটন স্পটে গোপনে গড়ে তোলা হয়েছে অসংখ্য মধুচক্র। আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে এইসব মধুচক্রে দেহব্যবসায় নিয়োজিত করা হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কিশোরূ-তরুণী মেয়োের।

একটি দায়িত্বশীল সূত্র ইয়াবা ও মাদক পাচারের নেপথ্যে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী শক্তির তৎপরতাকে দায়ী করে বলেছে, ‘আশ্রয় গ্রহণকারী উদ্বাস্তু ব্যক্তি ও পরিবারকে চাপ ও প্রলোভন দিয়ে নানা অপকর্মে ব্যবহার করা হচ্ছে। মেয়েদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে দেহব্যবসায়।’

টেকনাফ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের পেশাজীবী শ্রেণির কয়েক জন প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে তারা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সংঘাতময় উপদ্রুত এলাকায় চোরাচালান ও অপরাধ কমার বদলে বাড়ে। কারণ, সকলেই দুর্যোগ মোকাবেলায় মনোযোগী থাকেন বলে স্বাভাবিক আইন-শৃঙ্খলা ও নজরদারি শ্লথ হয়। যে সুযোগ নেয় অপরাধীচক্র। ইয়ারা ও যৌনতার বৃদ্ধি পাচ্ছে এ কারণেই।’

আফগানিস্তান, সিরিয়ার উদাহরণ টেনে তারা বলেন, ‘সেখানে চরম মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেও সেক্স ট্রেড, আফিম বা অস্ত্র চোরাকারবার বন্ধ নেই। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত এলাকাতেও শরণার্থী সমস্যার ভেতর দিয়ে চলছে অপরাধমূলক নানা তৎপরতা এবং দিনে দিনে বাড়ছে বিভিন্ন রকমের জননিরাপত্তার ঝুঁকি। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী একটি মহল প্রশাসনকে হাতে রেখেই চালাচ্ছে এইসব অপরাধমূলক অপকর্ম।

অভিজ্ঞ মহলের মতে, ক্রমবর্ধমান অপরাধ ও জননিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করা না হলে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বিশাল সীমান্ত এলাকায় অচিরেই চরম সামাজিক অস্থিরতায় আক্রান্ত হবে, যার ফলে সেখানে চরম অস্থিতিশীলতার উদ্ভব হতে পারে। সুত্র বার্তা ডটকম

পাঠকের মতামত: