ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ৪লেনের আগেই চার সেতু, সহসায় মাতামুহুরী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

দক্ষিণ চট্রগ্রামের ব্যস্ততম সড়ক চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের চারটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে সহসা। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ৩০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব সেতুর নির্মাণের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে এখন মূল্যায়ন চলছে। এর পর নিয়োগ দেওয়া হবে ঠিকাদার। একইসঙ্গে চলছে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াও।

সওজ জানিয়েছে, ‘ক্রস বর্ডার ইমপ্রুভমেন্ট নেটওয়ার্ক’ এর আওতায় চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের এই চারটি সেতুর কাজ শুরু হবে। তবে চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর উপর ছয় লেনের সেতুর নির্মাণকাজ আগামী তিন মাসের মধ্যে শুরু হতে পারে। অন্য তিন সেতুর মধ্যে রয়েছে পটিয়ার ইন্দ্রপুল সেতু, চন্দনাইশের বরগুনি সেতু, দোহাজারীর সাঙ্গু। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে মাতামুহুরী সেতুর উপর দিয়ে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন হাজারো যানবাহন চলাচল করছে। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটির নিচে প্রথমে বালির বস্তার ঠেস এবং উপরে পাটাতন বসিয়ে জোড়াতালির মাধ্যমে যানবাহন চলাচল সচল রাখা হয়। কিন্তু কয়েকমাস আগে এই সেতুটি ফের ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লে আবারো জোড়াতালির কাজ শুরু করে সওজ। এজন্য ব্যয় করা হয়েছে ২ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। বিষয়টি নিশ্চিত করে চার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার সৈয়দা তানজিমা সুলতানা জানান, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের চারটি সেতু নির্মাণের জন্য গেল মার্চে দরপত্র খোলার পর এখন মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চলছে। এর পর সেতুগুলো নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে কয়েকমাসের মধ্যে। ইতোমধ্যে চারটি সেতুর মাটি পরীক্ষা, স্থান নির্বাচন ও ডিজাইন চূড়ান্ত করে ফেলা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, সেতুগুলো নির্মাণে জাইকার অর্থায়নের বিষয়টিও নিশ্চিত। এখন জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ঠিকাদার নির্মাণকাজ শুরু করতে পারবেন। এই মহাসড়কের চার সেতুর মধ্যে মাতামুহুরী সেতুর অবস্থা একেবারে শোচনীয়। এই বিষয়টি স্বীকার করে প্রজেক্ট ম্যানেজার তানজিমা সুলতানা বলেন, ‘চার সেতুর কাজ একসঙ্গে শুরুর পরিকল্পনা আছে। তবে মাতামুহুরী সেতুর কাজ আমরা প্রথমেই শুরু করবো। এসব সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হতে তিন বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।’

জানা গেছে, মাতামুহুরী নদীর উপর বৃটিশ আমলে নির্মিত সেতুটি ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে অন্তত তিন বছর আগে। সেতুর উপরে–নিচে জোড়াতালি দিয়ে ধস ঠেকানোর কাজ করছে সরকারি প্রতিষ্ঠান সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর উপর দিয়ে চলতে গিয়ে একাধিক দুর্ঘটনায় বেশুমার প্রাণহানিও ঘটেছে। এ নিয়ে চকরিয়া নিউজ সহ শীর্ষ গণমাধ্যমে অসংখ্য সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এলাকাবাসী বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করে। সেতুটির নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মন্ত্রণালয়েও তদবির করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ২ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মাতামুহুরী সেতুর দেবে যাওয়া অংশ মেরামত করেছে। গেল ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দ্বিতীয়দফায় এই মেরামতের কাজ শুরু করা হয়।

এ প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রানাপ্রিয় বড়ুয়া চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘রেট্রোফিটিং’ ডিজাইন অনুযায়ী মাতামুহুরী সেতুর নিচে দুর্বল পিলারগুলো মেরামত, স্টিল পাইপ বসানো এবং সেতুর উপরের ভাঙা অংশের মেরামত করে সেখানে ৗ্যাব বসিয়ে বিদ্যমান সেতুর মতো সমান করে দেওয়া হয়েছে।’ তবে এই সংস্কার কাজ কতটুকু স্থায়ী হবে এবং সুফল পাওয়া নিয়ে এলাকাবাসীর মনে শঙ্কা কাজ করছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর ওপরে যে লোহার পাত দেওয়া হয়েছে গাড়ি চললে তা এখনো দুলছে। সেতুর ভাঙা অংশ সিমেন্ট কংক্রিট ব্লক দিয়ে তৈরি করা হয়নি। ফলে কিছুদিন চলার পর আবারও ভেঙে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। তবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর বলছে, নতুন সেতুটি নির্মাণ হতে সময় লাগবে তিন বছর। এই মেরামত দিয়ে সেইসময় পর্যন্ত সেতু সচল রাখা কঠিন হবে।

মাতামুহুরী সেতুর এই দুরবস্থা নিয়ে কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু বলেন, ‘ব্যস্ততম এই মহাসড়ক তথা মাতামুহুরী সেতুর ওপর দিয়ে যে পরিমাণ গাড়ি প্রতিদিন চলাচল করে তাতে মনে হয় সওজের জোড়াতালির কাজে আগামী তিনবছর পর্যন্ত সচল রাখা যাবে। তাই কক্সবাজারের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় জরুরি ভিত্তিতে মাতামুহুরী নদীর উপর নতুন সেতুর কাজ শুরু করতে হবে। এর বাইরে অন্য কোন চিন্তা করার বিকল্প নেই।’

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার কক্সবাজার ঘিরে অনেক মেগাপ্রকল্প অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্প ঘিরে দেশি–বিদেশিদের আসা–যাওয়া বেড়েছে। তাদের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক। শুধু কি তাই। পর্যটন খাতের ব্যবসার প্রায় পুরোটাই নির্ভরশীল এই সড়ক পথ। ফলে মাতামুহুরী সেতুটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। সেতুটি ধসে পড়লে বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় কক্সবাজারের সাথে সারাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে।

টিআইবি–সনাকের চকরিয়ার সদস্য জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘অতিসম্প্রতি রাতের বেলা ছয় ঘণ্টা বন্ধ রেখে সেতুটি মেরামতের সময় দেখেছি এই সেতুর গুরুত্ব কতখানি। ওই সময় যে বিকল্প সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল করেছে সেটি আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ও বড় গাড়ি চলাচলের উপযোগী নয়। এই মেরামত দিয়ে কোনো সুফল আসবে না। আমরা চাই দ্রুত নতুন সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে নিরাপদ যান চলাচল নিশ্চিত করা হোক।’

চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘মহাড়কের চিরিঙ্গায় দ্বিতীয় মাতামুহুরী সেতুটির নির্মাণকাজ অচিরেই শুরু করা না হলে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বেশি মাশুল গুণতে হবে সকলকে। তাই সেতুটির নির্মাণকাজ যাতে সহসা শুরু করা যায় সেজন্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের নিকট ধর্ণা দিয়ে যাচ্ছি। কেননা এই সেতুটি পর্যটন ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।’

সওজ সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ককে চারলেনে উন্নীতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে একাধিক জনসভায় সেই প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। কিন্তু চার লেন সড়কের অর্থায়ন এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তাই চার লেন সড়কের আগে এই মহাসড়কের চারটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সীমান্ত বাণিজ্য সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে জাইকার অর্থায়নে সেতুগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: