ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

‘দেশে ৩২ লাখ বৈধ গাড়ি থাকলেও লাইসেন্স আছে ১৭ লাখ চালকের’

অনলাইন ডেস্ক ::

সড়ক দুর্ঘটনার জন্য কাউকে এককভাবে দায়ী করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, ‘এ দেশে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষ পরিবহনের মাধ্যমে যাতায়াত করছে। ৮০ শতাংশ পণ্য সড়কপথে পরিবহন করা হয়ে থাকে।’

শনিবার নগরের মুরাদপুরে এলজিইডি মিলনায়তনে বিআরটিএ চট্টমেট্রো ও চট্টগ্রাম জেলা সার্কেল আয়োজিত সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক সেমিনার ও আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘দেশে ৩২ লাখ বৈধ গাড়ি থাকলেও মাত্র ১৭ লাখ চালকের লাইসেন্স আছে। আরো অসংখ্য যানবাহন অবৈধভাবে চলাচল করছে। ওভারটেকসহ অদক্ষ চালক-হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, চোখে ঘুম নিয়ে বা মাদকসেবন করে গাড়ি চালানো, গাড়ির যন্ত্রাংশগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা নিয়মিত যাচাই না করা, সড়কে গাড়ি চলাচলের উপযুক্ততা আছে কিনা তা না দেখা, ফুটওভার ব্রিজ ও ফুটপাত ব্যবহার না করে চরম ঝুঁকির মধ্যে জনসাধারণের চলাচল এবং অসচেতনতাসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে।’

ওভারটেক, যান্ত্রিক ত্রুটি ও ওভারলোডের কারণে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে উল্লেখ করে আবদুল মান্নান বলেন, ‘মিশুক-মনির, তারেক মাসুদ ও সাম্প্রতিক সময়ে দুর্ঘটনায় রাজীবের মৃত্যু দেশে বেশ আলোচিত হয়ে ওঠেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের সকল সদস্যসহ প্রতিনিয়ত অসংখ্য লোকের প্রাণহানি ঘটছে। কিছু সময় বাঁচানোর জন্য ওভারটেক ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালালে প্রাণহানি ঘটবেই। ব্যক্তি বিশেষের মৃত্যুই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। কিন্তু প্রতিদিন যেসব সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছে তাদের হিসাব শুধু পরিসংখ্যানে সীমাবদ্ধ। এসব বিষয় আমাদেরকে ভাবতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘পৃথিবীর ১৯৩ রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা মোটামুটি ভালো হলেও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। অতিরিক্ত ওভারলোডিং করে গাড়ি চলাচল, ওজন স্কেলে দুর্নীতি, প্রয়োজনের তুলনায় অধিক মালবোঝাই হাজার হাজার গাড়ি চলাচলের কারণে একদিকে সড়ক ভাঙছে অন্যদিকে দুর্ঘটনাও থেমে নেই। ভারত-ইন্দোনেশিয়া ও অন্যান্য দেশে রেল যোগাযোগ উন্নত। সেখানকার অধিকাংশ মানুষ রেলপথে যাতায়াত করছে বিধায় দুর্ঘটনাও তেমন ঘটে না। এদেশে রেলের সংখ্যা বৃদ্ধি ও রেল যোগাযোগ সহজ করা গেলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসতে পারে। এ ব্যাপারে বর্তমান সরকারের একটি যুগোপযোগী পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা এখন স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। সরকারের বহুমুখী উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি দেশে রেল যোগাযোগ আরো বৃদ্ধি পাবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) নুরেআলম মিনা বলেন, ‘আমেরিকা-ইউরোপসহ উন্নত দেশগুলোতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা রয়েছে। সেখানে কোনো গাড়িচালক অপরাধ করলে দৌঁড়ে গিয়ে গাড়িটির বিরুদ্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হয় না। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে গাড়ির অপরাধ স্পষ্ট হয়ে ওঠছে এবং অভিযুক্ত গাড়িচালক বাসায় পৌঁছার সাথে সাথে পেয়ে যাচ্ছে নোটিশ। সড়কে গাড়ি চালানোকালে কী অপরাধ করেছে তা নোটিশে উল্লেখ থাকছে। এদেশেও এ ধরনের সিস্টেম একদিন চালু হবে।’

দেশ ডিজিটালাইজেশনে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, ‘ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় সরকারের এ মহৎ উদ্যোগ অব্যাহত থাকলে দেশের হাইওয়ে সড়ক ও অন্যান্য সড়কগুলোতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন হবেই।’

বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ কায়ছারের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) হারুন-অর রশিদ হাজারী, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ওসমান আলী ও নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব।

স্বাগত বক্তব্য দেন বিআরটিএর সহকারী পরিচালক তৌহিদুল হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম। আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা পরিবহন মালিক গ্রুপের মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু, জেলা ট্রাক-কাভার্ডভ্যান অ্যান্ড মিনি ট্রাক মালিক গ্রুপের সভাপতি ও বিভাগীয় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য মো. আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক অলি আহম্মদ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব বেলায়েত হোসেন বেলাল, চট্টগ্রাম মহানগরী অটোরিকশা-বেবিটেক্সি সিএনজি মালিক-চালক ঐক্য পরিষদের সভাপতি হায়দার আজম চৌধুরী, পরিবহন নেতা আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মদ মুছা প্রমুখ। আলোচনাসভায় বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয়, মেট্রো ও জেলা সার্কেলের কর্মকর্তারাসহ বিভিন্ন পরিবহন মালিক-চালক-শ্রমিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভা সঞ্চালনা করেন আবৃত্তিকার ফারুক তাহের ও দিল উম্মে সালমা।

পাঠকের মতামত: