ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

দেশকে তামাকমুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন করা হবে -জেলা প্রশাসক

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::

তামাক উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সেবন ও সব প্রক্রিয়াতেই জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তামাক একটি বহুমাত্রিক ক্ষতিকর ও আগ্রাসী পণ্য। তামাক সেবন বিশ্বব্যাপী প্রতিরোধযোগ্য মুত্যর প্রধান কারণ। বছরে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনেক বছর আগেই তামাকজনিত মৃত্যুকে মহামারী হিসাবে ঘোষণা দিয়েছে। কারণ, তামাকজনিত মৃত্যু ম্যালেরিয়া, যক্ষা, এইচআইডিভ/এইডস এর সম্মিলিত মৃত্যুর চাইতেও বেশি। প্রতি ১০ জনের মৃত্যুর মধ্যে ১ জনের মৃত্যুর জন্য সরাসরি দায়ী তামাক সেবন। অর্থনীতিতে তামাকের প্রভাব অত্যন্ত নেতিবাচক। তামাক চাষ কৃষি জমির উর্বরতা, পরিবেশ ও জনস্বাস্থের উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।

২০০৪ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, জিডিপির ৩% তামাকের কারণে অপচয় হয়। সবরকম তামাকজাত পণ্য থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করে, তার দ্বিগুণের বেশি অর্থ তামাকজনিত রোগের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করতে হয়। তামাক পাতা প্রক্রিয়াজাত করতে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন হয়।

১৯৯৯ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ বৃক্ষ কেটে ফেলা হয়, তার ৩০% চুল্লীতে তামাক পাতা প্রক্রিয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া তামাক চাষ ও প্রক্রিয়াজাত করতে শিশু ও নারীদের নিয়োগ করা হয়। এ সময় শিশুরা লেখাপড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। চুল্লীতে দীর্ঘসময় প্রক্রিয়াজাত কাজে সম্পৃক্ত থাকার ফলে নারীদের মধ্যে নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়।

জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ২০১৬-২০৩০ এ যেসব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তার বেশ কয়েকটি তামাক উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবহারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এমডিজির অনেকগুলো লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ সফল হয়েছে। এসডিজি অর্জনে সফল হতে গেলেও তামাক নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণকে অর্থাৎ তামাক নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) বাস্তবায়নকে এসডিজির ৩ নং লক্ষ্যমাত্রায় (স্বাস্থ্য বিষয়ক) অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

দারিদ্র দূরীকরণ, জেন্ডার সমতা, পরিবেশ সুরক্ষা, মানবাধিকার বিষয়ক এসডিজির আরো কয়েকটি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও এফসিটিসির কার্যকর বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আর এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বছরের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের (৩১ মে ২০১৮) প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে হয়েছে “তামাক করে হৃৎপিন্ডের ক্ষয়, স্বাস্থ্যকে ভালবাসি, তামাককে নয়” । এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশে^র আন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশের পর্যটন নগরী কক্সবাজারে “বিশ^ তামাকমুক্ত দিবস-২০১৮” উদযাপিত হয়েছে।

ধূমপান ও তামাকজাতদ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০৫ (সংশোধনী-২০১৩) বাস্তবায়নে জেলা টাস্ক ফোর্স কমিটি, কক্সবাজার এর আয়োজনে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এর সার্বিক তত্বাবধানে ও ইপসা’র সহযোগিতায় র‌্যালী ও আলোচনা সভার মাধ্যমে দিবসটি উদযাপিত হয়। র‌্যালীতে নেতৃত্ব প্রদান করেন-মো: কামাল হোসেন, জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার ও ডা: মো: আব্দুস সালাম,  সিভিল সার্জন, কক্সবাজার। র‌্যালীতে অংশগ্রহণ করেন সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ, এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, নার্সিং বিভাগের ছাত্রীবৃন্দ, সিভিল সোসাইটির লোকজনসহ অন্যান্যরা।

ইপসা কক্সবাজার অফিস এর ফোকাল পার্সন মোহাম্মদ হারুন এর সঞ্চালনায় জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার এর সম্মেলন কক্ষে র‌্যালী পরবর্তী আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন-মো: কামাল হোসেন, জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার। অতিথি হিসেবে আলোচনায় সভায় অংশগ্রহণ করেন- ডা: মো: আব্দুস সালাম, সিভিল সার্জন, কক্সবাজার; কাজী মো: আবদুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব), মো: মাহিদুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক); ডা: মহিউদ্দীন মো: আলমগীর, কনসালটেন্ট, বক্ষ ব্যাধি ক্লিনিক, কক্সবাজার; অজিত নন্দী, জেলা প্রতিনিধি, ব্র্যাক; করুণা ব্যাপারী, নার্সিং ইন্সট্যাক্টর, কক্সবাজার প্রমুখ। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ও আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন এর মাধ্যমে তামাকমুক্ত সমাজ গড়ে উঠুক, এটাই বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রত্যাশা। এছাড়াও বক্তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে বাস্তবায়নের নিমিত্তে সর্বাত্বক সহযোগীতার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পাঠকের মতামত: