ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

তামাকখাতে প্রাপ্ত রাজস্বের দ্বিগুণ খরচ হয় চিকিৎসায়, বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক ::

বাংলাদেশে ৪৩ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৪ কোটি ১৩ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করেন, যার মধ্যে ২৩ ভাগ (২ কোটি ১৯ লাখ) ধূমপানের মাধ্যমে তামাক ব্যবহার করেন। আর ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন ২৭.২ ভাগ (২ কোটি ৫৯ লক্ষ) মানুষ।
অন্যদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, তামাকখাত থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায় তামাক ব্যবহারের কারণে অসুস্থ রোগীর চিকিৎসায় সরকারকে স্বাস্থ্যখাতে তার দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় করতে হয়। তামাকজনিত মোট ক্ষয়ক্ষতি হিসেব করলে তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৩ শতাংশ।
তামাকজনিত এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই দেশে আজ বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘তামাক ও হৃদরোগ’।
‘ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ’র অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী একটি গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করে বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের হার নারীদের মধ্যে অনেক বেশি। বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সের প্রায় ৭ ভাগ (পরিসংখ্যান, ২০১৩) কিশোর-কিশোরী তামাক ব্যবহার করে। এছাড়াও তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লক্ষ ( ২০১৩) মানুষ অকাল মৃত্যুবরণ করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব মতে, হৃদরোগজনিত মৃত্যুর প্রায় ১২ শতাংশের জন্য দায়ি তামাক ব্যবহার এবং পরোক্ষ ধূমপান।

হৃদরোগের কারণ হিসেবে উচ্চ রক্তচাপের পরেই তামাক ব্যবহারের অবস্থান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত হেলথ বুলেটিন ২০১৭ এর তথ্য মতে, ২০০৯ থেকে ২০১৬ সময়কালে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৪১.৩ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দ্য ইন্সটিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স এন্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই)-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ থেকে ২০১৬ সময়কালে বাংলাদেশে অকাল মৃত্যুর কারণের তালিকায় হৃদরোগ ৭ম স্থান থেকে ১ম স্থানে উঠে এসেছে এবং এই পরিবর্তনের হার ৫২ দশমিক ৭ শতাংশ। আর এই মৃত্যুর জন্য দায়ী হিসেবে তামাকের অবস্থান ৪র্থ।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো মনে করে, বিগত দিনে দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ ক্ষেত্রে এফসিটিসি স্বাক্ষর ও অনুস্বাক্ষর, আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন এবং আইন সংশোধন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনেক অর্জন রয়েছে। জনস্বার্থে দেশে আইন ও বিধিমালা প্রণীত হলেও কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন আরো অগ্রগতি। তামাক নিয়ন্ত্রণে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতি পদক্ষেপে মুখোমুখি হতে হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ। এ সকল চ্যলেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণ করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী ।
প্রসঙ্গতঃ ১৯৮৭ সাল থেকে প্রতিবছর ৩১ মে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও এর সহযোগী সংস্থাসমূহের উদ্যোগে তামাকের স্বাস্থ্য ঝুঁকিসমূহ তুলে ধরে তামাক ব্যবহার প্রতিরোধে কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে ‘বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস’ পালিত হয়ে আসছে।
চট্টগ্রামের কর্মসূচি : বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে এন্টি ট্যোবাকো মিডিয়া এলায়েন্সের (আত্মা) উদ্যোগে যৌথভাবে সিভিল সার্জন অফিসের সঙ্গে শোভাযাত্রা, আলোচনা এবং তামাকপণ্যের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে প্রচারপত্র বিলিসহ নানা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বেসরকারি সংস্থা ইপসার আয়োজনে আত্মা’র সদস্যদের নিয়ে মঙ্গলবার (২৯ মে) বিকেলে নগরীর জিইসির এক রেস্তোরাঁয় আয়োজিত বিভাগীয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
ইপসা’র স্মোক ফ্রি প্রজেক্টের কর্মকর্তা মো. ওমর শাহেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আত্মার ওই সভায় বক্তারা আসন্ন বাজেটে সব ধরণের তামাকপণ্যের ওপর কর বৃদ্ধিসহ খুচরা মূল্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল রাখার দাবি জানানো হয়।
সভায় চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন সুপারসপ ও রেস্টুরেন্টে তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধের জন্য প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের ঘোষিত বাজেটের বরাদ্দ অনুযায়ী তামাকবিরোধী কার্যক্রম জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভায় বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুল আলম, ম. শামসুল ইসলাম, আলমগীর সবুজ, আবু মোশাররফ রাসেল, লতিফা আনসারি রুনা, গিয়াস উদ্দিন, আহসানুল কবির রিটন, মোরশেদ তালুকদার, রেজা মোজাম্মেল, সালাহউদ্দিন সায়েম, নজরুল ইসলাম, কামরুল হুদা, জয়নাল আবেদীন, শৈবাল আচার্য্য, নজরুল ইসলাম টিটু, আবু সুফিয়ান, হাকিম মোল্লা, মো. দিদারুল আলম প্রমুখ।

পাঠকের মতামত: