ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় জাল দলিল সৃজনে সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখলে হামলা, প্রহারে বৃদ্ধ নারী হাসপাতালে

চকরিয়া প্রতিনিধি ::

জমি মালিক সংখ্যালঘু পরিবার ভারত চলে গেছেন ৪৬বছর আগে। কিন্তু জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল সৃজনে ওই সংঘ্যালঘু পরিবারের জমি দখলে নেমেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। ইতোমধ্যে অভিযুক্ত প্রভাবশালী দলবল নিয়ে জমি দখলের চেষ্ঠা চালায়। তাতে বাঁধা দেন জমির ওয়ারিশপক্ষের সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা। ওইসময় বেদড়ক পিটুনিতে গুরুতর আহত হন রাণী বালা রুদ্র (৭০) নামের এক কৃষাণী। উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের রুদ্রপাড়া গ্রামে ঘটেছে জমি দখলে হামলার এ ঘটনা। এ ঘটনায় আহত রাণী বালা রুদ্রের স্বামী সচিন্দ্র রুদ্র গত ২৪ মে চকরিয়া থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন। এজাহারে আসামি করা হয়েছে দখলচেষ্টায় জড়িত কাকারা ইউনিয়নের ৩নম্বর ওয়ার্ডের লোটনী গ্রামের মৃত আবদুল মতলবের ছেলে নুরুল হোছাইনকে। এছাড়াও এজাহারে আরো ৭-৮জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

আহত রাণী বালা রুদ্রের ছেলে শংকর রুদ্র জানান, তাঁর চাচা জমি মালিক কাকারা ইউনিয়নের রুদ্রপাড়া গ্রামের ফনিদ্র কুলাল প্রকাশ পনিন্দ্র লাল রুদ্র স্ব-পরিবারে ভারতের কলকাতা চলে গেছেন ৪৬বছর আগে। সেই থেকে তাঁর বাবা সচিন্দ্র রুদ্র কাকারা ইউনিয়নের লোটনী মৌজার বিএস ৩৯৬, ৭৮১, ১১৭৭ খতিয়ানের ৫৫ দশমিক ১৭ শতক পৈত্রিক জমি বৈধভাবে ভোগদখলে থেকে চাষাবাদ করে আসছেন। স্বাধীনতার পর প্রায় ৪৬বছর সময় অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু তাঁর চাচা ফনিদ্র কুলাল প্রকাশ পনিন্দ্র লাল রুদ্র আর দেশে ফিরে আসেনি। তবে তাদের সাথে পারিবারিক সর্ম্পক এখনো অটুট রয়েছে।

শংকর রুদ্র অভিযোগ করেছেন, চকরিয়া উপজেলা সাব রেজিস্টার কার্যালয়ে কর্মরত দলিল লিখক পালাকাটা গ্রামের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম মোটা অংকের লেনদেনের বির্নিমানে জনৈক একজন ব্যক্তিকে তাঁর চাচা (ফনিদ্র কুলাল প্রকাশ পনিন্দ্র লাল) সাজিয়ে প্রক্সি দিয়ে চলতিবছরের ৮ জানুয়ারী জালিয়াতির মাধ্যমে উল্লেখিত জমি গুলো বিক্রি সাপেক্ষে একটি দলিল (নং ১২৯) সম্পাদন করে দেন কাকারা ইউনিয়নের লোটনী গ্রামের নুরুল হোছাইন ও শিমুল আক্তার নামের দুইজনকে।

শংকর রুদ্র দাবি করেন, জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজন করা দলিল মুলে উল্লেখিত জমি দখলের জন্য সেই থেকে অপচেষ্ঠা চালাতে শুরু করে নুরুল হোছাইন। সর্বশেষ গত ২২ মে দুপুরে অভিযুক্ত নুরুল হোছাইন দলবল নিয়ে জমি দখলে হামলা চালায়। ওইসময় খবর পেয়ে আমার বৃদ্ধা মা রাণী বালা রুদ্র ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদেরকে বাঁধা দেন। এসময় হামলাকারীরা আমার মাকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁেছ তাকে উদ্ধার করে চকরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করি।

ভুক্তভোগী পরিবারের গৃহকর্তা কৃষক সচিন্দ্র রুদ্র (৮০) জানান, আমার ভাই পনিন্দ্র রুদ্র দেশ স্বাধীনের পর স্ব-পরিবারে ভারত চলে গেছে। সেই থেকে পৈত্রিক জমি আমি ভোগদখলে থেকে চাষাবাদ করে পরিবার নিয়ে শান্তিপুর্ণভাবে বসবাস করে আসছি। কিন্তু প্রায় ৪৬বছর পর জানতে পারি চলতিবছরের জানুয়ারী মাসে আমার পারিবারিক ওই জমি ভারতে থাকা ভাইয়ের নামে জনেক ব্যক্তিকে প্রক্সি দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল সৃজন করে লিখে নিয়েছে লোটনী গ্রামের নুরুল হোছাইন গং। এখন জমি দখলের জন্য হামলা চালাচ্ছে নুরুল হোছাইন ও তাঁর ভাড়াটে লোকজন।

এমনকি অভিযুক্তরা বর্তমানে আমাকে ও আমার স্ত্রী রাণী বালা রুদ্র, ছেলে শংকর রুদ্র, সুদর্শন রুদ্র, মেয়ে কাকলী রুদ্রকে পথেঘাটে একাফেলে খুন করবে, অপহরণ করবে, প্রয়োজনে ভাইয়ের মতো দেশছাড়া করবে এই ধরণের হুমকি দিচ্ছে। এ অবস্থায় আমি বর্তমানে পরিবার সদস্যদের নিয়ে চরম আতঙ্কে ভুগছি। আমি প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তার পাশাপাশি সৃজিত জালিয়াতির ওই দলিলটি বাতিলের জন্য জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সংঘ্যালঘু পরিবারের জায়গা দখলে হামলার ঘটনায় কৃষক সচিন্দ্র রুদ্র বাদি হয়ে দায়ের করা অভিযোগটি তদন্তের জন্য থানার এসআই অপু বড়–য়াকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বাদিপক্ষের অভিযোগ মতে তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: