ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

সেন্টমার্টিনের ২ ইউপি মেম্বার লাপাত্তা, উপ-নির্বাচনের দাবি

বিশেষ প্রতিবেদক :
টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের দুই মেম্বার দুই মাস ধরে পলাতক রয়েছে। তারা হলেন, ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর উফ ও ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবু বক্কর। তারা দুজনেই আপন সহোদর ও বর্তমান চেয়ারম্যান নুর আহাম্মদের আপন শ্যালক। ইয়াবা পাচারের মামলায় আসামী হয়ে তারা লাপাত্তা হয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এই দু’মেম্বার লাপাত্তা হওয়ায় সাধারণ লোকজন নানাভাবে হয়রানি শিকার হচ্ছে।

জানা গেছে, গত ১৪ মার্চ এবং ১৭মার্চ ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর উফ ও ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবু বক্করসহ তাদের পাঁজচ ভাইয়ের বিরুদ্ধে টেকনাফ মডেল থানায় দু’টি মামলা দায়ের করেন বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। কোস্টগার্ডেও টেকনাফ জোনের পেটি অফিসার আব্দুল মালেক বাদি হয়ে মামলা দু’টি দায়ের করেন।

মামলা সূত্র মতে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেন্টমার্টিন পশ্চিম-উত্তর সাগড় পাড় এলাকায় অভিযান চালানো হলে পার্শ্ববর্তী ঝাউবাগানে পরিত্যক্ত অবস্থায় এক লক্ষ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেন কোস্টগার্ডের সদস্যরা। ওই ইয়াবাগুলো ছিলো ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর উফ ও ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবু বক্কর এবং তাদের ভাইদের। মূলত পারিবারিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ইয়াবাগুলো মিয়ানমার থেকে পাচার করছিল এই সিন্ডিকেটটি। মামলা অন্য আসামী হলো- ইলিয়াছ, সিরাজ ও আয়াছ। তারা সবাই ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল জলিলের পুত্র। এর মধ্যে গত ১৪ই এপ্রিল সকাল ৭টার দিকে সেন্টমার্টিন পশ্চিম সৈকত থেকে আসামী সিরাজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে সে কারাগারে রয়েছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর উফ ও ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবু বক্কর এবং তাদের ভাইয়েরা পেশাদার ইয়াবা ব্যবসায়ী। তারা মিয়ানমার থেকে ইয়াবার বড় বড় চালান এনে সাগর পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে। এভাবে ইয়াবা পাচার করে এই পরিবারটি বিপুল অর্থবিত্তের মালিক বনে গেছেন। টাকার প্রভাবে তারা এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে থাকেন। তাদের সাথে বাড়াবাড়ি করলে সাধারণ লোকজনকে মারধরসহ নানাভাবে অত্যাচার ও নির্যাতন করা হয়। এসব ঘটনায় দুই মেম্বারসহ অন্য ভাইদের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক হত্যা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মামলা। এমনকি পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলাও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

সূত্র জানা গেছে, এতদিন বীরদর্পে দাপিয়ে বেড়ালেও ইয়াবার চালান ধরা পড়ার পর ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর উফ ও ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবু বক্কর এবং তাদের অন্য ভাইয়েরা আত্মগোপনে চলে গেছে। আত্মগোপনে থেকে উচ্চ আদালত থেকে জামিনের চেষ্টা করেও জামিন মিলেনি।

এদিকে মেম্বাররা আত্মগোপনে থাকায় নানা প্রয়োজনে সাধারণ লোকজন নানাভাবে হয়রানি শিকার হচ্ছেন। দুই বর্তমান মেম্বার পলাতক হওয়ার কারণে উক্ত ওয়ার্ডগুলোতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। এমতবস্থায় উপ-নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন দ্বীপবাসী।

উপ-নির্বাচন থেকে শ্যালকদের রক্ষার জন্য চেয়ারম্যান নূর আহামদ নানা তদবির চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যতদ্রুত সম্ভব অনতিবিলম্বে বাকী পালতক আসামীদের গ্রেপ্তার করে যথাযথ শাস্তি প্রদান এবং দ্বীপ তথা ইউনিয়ন পরিষদের আদর্শ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে উপ-নির্বাচনের দাবি জানান দ্বীপবাসী।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান নূর আহামদ বলেন, ‘দু’মেম্বাররা পলাতক থাকায় জনগণ সমস্যা পড়েছে এটা সত্য। তবে সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয়ভাবে বিশেষ কমিটি করে বিচার কার্যসহ অন্যান্য কার্যক্রম তরান্বিত করা হচ্ছে।

বিষয়টির ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান।

পাঠকের মতামত: