ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়া চিংড়িজোনের ৫১১২ একর জমি রামপুর সমিতিকে ফেরত দিতে নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া :
চকরিয়া চিংড়িজোনের ৫ হাজার একশত ১২একর জমি চার সপ্তাহের মধ্যে রামপুর সমবায় কৃষি উপনিবেশ সমিতিকে ফেরত দিতে মৎস্য বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। আদালতের নির্দেশের পরও কার্যকর করতে পারেনি জেলা প্রশাসন। সমিতির পক্ষ থেকে আদালতকে অবহিত করে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন।
গত ৭ মে হাইর্কোটের বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমদ এর দ্বৈত বেঞ্চ মামলার শুনানী শেষে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রামপুর মৌজার জেএল নং ৪৭ ও আরএস ১০৮৩, ১০৮৪, ১০৮৬, ১১১০, ১১১১ ও ১১২০ দাগের উপরোক্ত জমি দখল ফেরত দিতে মৎস্য বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন। বাদি পক্ষের আইনজীবি এড. মোশারফ হোসেন সিকদার গতকাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অপরদিকে আদালতের আদেশের অনুলিপির কপি সোমবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের দপ্তরে দাখিল করেছেন রামপুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম লিটন।
রামপুর সমিতির আইনজীবি রায়হানুল মোস্তাফা বলেন, রামপুর সমবায় কৃষি উপনিবেশ সমিতির কনটেম্প মামলার (নং ২৬১/১৭) ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর আদালত উল্লেখিত জায়গা সমিতিকে ফেরত দিতে জেলা মৎস্য বিভাগ ও চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের তিন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। আদেশ বাস্তবায়নের জন্য আদালত জেলা প্রশাসনকে দায়িত্ব দেন। জেলা প্রশাসক তিনবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জলা প্রশাসক কার্যালয়ের সরকারি আইন কর্মকর্তার (জিপি) মতামত চান।
আইনজীবি রায়হানুল মোস্তাফা বলেন, জিপি মতামতের পরও চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন মৎস্য বিভাগের অবৈধ দখলে থাকা ওই জায়গা রামপুর সমিতিকে দখল ফেরতের ব্যবস্থা কার্যকর করতে পারেনি। ফলে বিষয়টির আলোকে বর্ণনা তুলে ধরে চলতি মাসের ৭ তারিখ রামপুর সমিতির সম্পাদক বাদি হয়ে হাইর্কোটে নতুন রিট পিটিশন (মামলা নং ৬০৪৭/১৮) আদালতে দায়ের করেন। হাইর্কোটের বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমদ এর দ্বৈত বেঞ্চ মামলার শুনানী শেষে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রামপুর মৌজার জমি দখল ফেরত দিতে মৎস্য বিভাগকে নির্দেশ দেন।
আইনজীবি রায়হানুল মোস্তাফা বলেন, সিভিল আপীল মামলার (নং ৪৮/১১) প্রেক্ষিতে দীর্ঘ শুনানী শেষে ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির আদালতে রায় ঘোষণা করা হয়। উক্ত রায়ে আদালত সরকারের গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে সামরিক ফরমান দ্বারা জারিকৃত সকল অধ্যাদেশের মধ্যে ২০১৩ সালের ৭নম্বর আইনদ্বারা রহিত ৮১টি অর্ডিনেন্স কার্যকর করেন। একই সাথে আদালত চকরিয়া উপজেলার রামপুর মৌজায় মৎস্য বিভাগকে চিংড়ি জমির মালিকানা বিষয়ে ১৯৮৫ সালের ৩ নভেম্বর সরকারের জারি করা প্রদত্ত সামরিক আদেশ (নং ১১৩) সহ অপরাপর সকল সামরিক আদেশ অবৈধ ঘোষনা করে বাতিল করে দেন।
প্রধান বিচারপতির আদালতের রায়ের আলোকে ১১৩ নং সামরিক আদেশকে অবৈধ ঘোষণা ও রামপুর সমিতির মালিকানা দাবিকৃত উল্লেখিত চিংড়িজমি দখল ফেরত চেয়ে ২০১৮ সালের ৭ মে সমিতির সম্পাদক শহিদুল ইসলাম লিটন বাদি হয়ে হাইর্কোটে নতুন রিট মামলাটি (নং ৬০৪৭) দায়ের করেন। বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমদ এর দ্বৈত বেঞ্চ মামলার শুনানী শেষে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রামপুর মৌজার জমি রামপুর সমিতিকে দখল ফেরত দিতে মৎস্য বিভাগকে নির্দেশ দেন।
মামলার বাদি ও রামপুর সমিতির সম্পাদক শহীদুল ইসলাম লিটন বলেন, আদালতের সর্বশেষ আদেশের মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত দেশে এখনো আইনের শাসন নিজস্ব গতিতে চলছে। আদালতের এই আদেশে রামপুর সমিতির অন্তত ১০ হাজার দরিদ্র শ্রেনীর সভ্য-পোষ্যরা খুশি। আমরা চাই প্রশাসন অতিসত্বর আদালতের আদেশ মতে আমাদের জমি ফেরতে দিতে ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের সর্বশেষ আদেশের অনুলিপির কপি কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের দপ্তরে দাখিল করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: