ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

লামায় লোকসানের মুখে শশা চাষীরা

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ::

বাজারে দাম না থাকায়, অসময়ে বৃষ্টিপাত ও রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হয়ে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় লাখ লাখ টাকা লোকশান গুনছে বান্দরবানের লামার শশা চাষীরা। ক্ষতিকারক তামাকের পরিবর্তে ও ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় শশা চাষ করে আজ রাস্তায় বসেছে উপজেলার কয়েকশত চাষী।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে ও সরজমিনে ঘুরে জানা যায়, এবার উপজেলায় প্রায় ৫১০ একর জমিতে ৬০৫ জন চাষী শশার আবাদ করেছে। তারমধ্যে লামা পৌরসভায় ৭০ একর, গজালিয়া ইউনয়িনে ৬০ একর, সদর ইউনিয়নে ৬৫ একর, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে ৯৫ একর, আজিজনগর ইউনিয়নে ৩০ একর, সরই ইউনিয়নে ৮০ একর, রুপসীপাড়া ইউনিয়নে ১৩০ একর ও ফাইতং ইউনিয়নে ৪০ একর জমিতে শশার চাষ হয়। এর মধ্যে সর্বাধিক শশার চাষ হয়েছে রুপসীপাড়া ইউনিয়নে। দেশীয় ও হাইব্রিড জাতের শশা চাষ করে বিগত বছরে লাভবান হলেও এবছর সফলতা পাচ্ছেনা স্থানীয় কৃষকরা।

সরজমিনে রুপসীপাড়া ইউনয়িনের দরদরী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ শশার ক্ষেত লালচে হয়ে গেছে। অজ্ঞাত রোগে শশার ফুলে ফল ধরার সাথে সাথে তা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। গাছের অধিকাংশ শশা রোগে আক্রান্ত হয়ে আকাঁবাকাঁ (কেট) হয়ে গেছে। বিগত বছরের শশার কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হলেও এবছর পাইকারী ১০ থেকে ১৩ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে শশা। প্রতিদিন এই উপজেলা থেকে ১০/১৫ ট্রাক শশা চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে নিয়ে যাচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রার তিনের একভাগ ফলন পাওয়া যাবে কিনা সেই শংকায় আছেন চাষীরা।

রুপসীপাড়া ইউনিয়নের দরদরী, বৈক্ষমঝিরি ও অংহ্লা পাড়ার শশা চাষী মো. হানিফ, উহ্লামং মার্মা, সেলিনা আক্তার, রুমা আক্তার, ক্যহ্লামং মার্মা ও ছোটন বড়–য়া সহ অনেকে বলেন, শশা চাষাবাদে আমাদের কানি প্রতি (৪০ শতাংশ) জমিতে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এই পর্যন্ত কানি প্রতি বিক্রয় এসেছে ১৫ হাজার টাকা। ক্ষেতে যে পরিমাণ ফল রয়েছে তাতে সর্বোচ্চ আর ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হতে পারে। আমরা সকলের কানি প্রতি ১৪/১৫ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হবে। চাষীরা অভিযোগ করে আরো বলেন, অজ্ঞাত রোগ-বালাইয়ে যখন আমাদের ক্ষেতের ফসল নষ্ট হচ্ছিল তখন কৃষি অফিসের কোন পরামর্শ বা সহায়তা পায়নি।

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের শশা চাষীরা জানান, সরকারী বা বেসরকারী সংরক্ষনাগার থাকলে তাদের এই লাখ লাখ টাকা লোকসান দিতে হতোনা। তাই জরুরী ভিত্তিতে কাঁচামাল সংরক্ষনের জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে ১টি করে সংরক্ষনাগার প্রতিষ্ঠার জোর দাবী জানান।

উপজেলা কৃষি অফিসার নুরে আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ফলন কম ও উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় কৃষকরা অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়েছে। তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন বলেন, এই লোকসানের প্রভাব পরবর্তী ফসলের উপর পড়বে এবং আগামিতে শশা চাষে নিরুৎসাহিত হবে। শশা ক্ষেতে রোগ বালাই বিষয়ে আমাদের জানা ছিলনা। সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের স্ব-স্ব ব্লকের মাঠে গিয়ে কৃষকের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমি নিজেও মাঠে যাব। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: