ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

টেকনাফ সীমান্তে দু-বছর ধরে বন্ধ মিয়ানমারে যাতায়তের বর্ডার পাস ট্রানজিট

গিয়াস উদ্দিন ভুলু, টেকনাফ ::
মিয়ানমার সীমান্ত ঘেষা পর্যটন নগরী টেকনাফ উপজেলা এখন হরেক রকমের ব্যবসায়ীদের পদবারে মুখরিত। কারন পার্শ্ববর্তীদেশ মিয়ানমারের সাথে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রকার পণ্য আমদানী+রপ্তানী করে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে।
আর সেই অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহযোগীতা,দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সম্প্রীতির মিলন মেলা একমাত্র ভুমিকা রেখেছিল টেকনাফ টু মংন্ডু মিয়ানমার বর্ডারপাস ট্রানজিট যাতায়াত। অথচ দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সেই রাজস্বের প্রথম যাতায়াত মুল রাস্তাটি বন্ধের আজ দীর্ঘ ২ বছর অতিবাহিত। এতে বিপাকে পড়েছে টেকনাফ স্থল বন্দরের মিয়ানমার মন্ডু শহর মুখি ব্যবসায়ীরা। তারা মংন্ডু শহরে যেতে না পেরে মোবাই ফোনে যোগাযোগ করে মিয়ারমার ব্যবসায়ীদের জন্য কোটি কোটি টাকা পাঠাচ্ছে এই ভাবে বিশ্বাস এবং সততার মধ্যে কিছু ব্যবসায়ী সুবিধা আদায় করতে পারলেও স্থানীয় অনেক ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা মিয়ানমার ব্যবসায়ীদের হাতে আটকা পড়ে আছে। এই ট্রানজিট যাতায়াত চালু না থাকার কারনে প্রতিনিয়ত সরকার হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব।
আর দিনের পর দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ট্রানজিট জেটিতে কর্মরত নিম্ম আয়ের শ্রমিকরা।
এই বর্ডার পাস ট্রানজিট যাতায়াত চালু থাকলে প্রতিদিন এই অসহায় মানুষরা ব্যবসায়ীদের মালামাল উঠা-নামা করে অনেক টাকা রোজগার করতে পারত এবং মনের আনন্দে তাদের সংসার চালাতে পারত।
কিন্তু এই যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে সেই সমস্ত শ্রমিকরা এখন পড়েছে বিপাকে।
তথ্য সুত্রে জানা যায়,বিগত ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সরকারী বাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর দমন-নীপড়নের ঘটনাকে কেন্দ্র করে টেকনাফ টু মংন্ডু ট্রানজিট যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে মন্ডু শহর মুখি বাংলাদেশের বেশীর ভাগ ব্যবসায়ী পড়ে যায় বিপাকে।
আর দিনের পর দিন কমতে থাকে টেকনাফ স্থলবন্দর টু মংন্ডু শহরমুখী আমদানি ও রপ্তানি। এর কারন টেকনাফ স্থলবন্দর অনেক ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা মংন্ডু শহরে থাকা ব্যবসায়ীদের কাছে আটকা পড়েছে। তারা দুই বছর আগের সহিংসতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা আত্বসাৎ করেছে।
টেকনাফ স্থলবন্দর সুত্রে আরো জানা যায়,
দীর্ঘ ২ বছর ধরে মিয়ানমার মংন্ডু শহর থেকে আগের মত মালামাল আমদানী+রপ্তানী হয় না। তবে বর্তমানে টেকনাফ স্থলবন্দর ব্যবসায়ীরা আকিয়াব ব্যবসায়ীদের সাথে পণ্য আমদানী রপ্তানী অব্যাহত রেখেছে। সেই ধারাবাহিকতায় প্রতিমাসে টেকনাফ স্থলবন্দর কর্তপক্ষ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হচ্ছে বলে জানা যায়।
এদিকে টেকনাফ টু মংন্ডু বর্ডার পাস ট্রানজিট যাতায়াত দীর্ঘ দুই বছর ধরে বন্ধ থাকায় এই ট্রানজিট ঘাট থেকে সরকার প্রতিমাসে হারিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব।
টেকনাফ টু মংন্ডু বর্ডার পাস ট্রানজিট যাতায়াতে দীর্ঘ দুই বছর আগে দায়িত্বে থাকা এক অভিবাসন কর্মকর্তা জানান,
বিগত ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের সহিংস ঘটনাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দুই বছর যাবত বর্ডারপাস যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। তিনি আরো বলেন বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ভাল রাখার জন্য মিয়ানমার মন্ডু ট্রানজিট যাতায়াত বন্ধ রেখেছে সরকার। তবে এই বর্ডার পাস যাতায়াত পুনরায় চালু করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের অভিবাসন সংস্থার ও সীমান্ত এলাকা আইন শৃংখলার বাহিনীর উর্দ্বতন কর্মকর্তারা মিয়ানমারের অভিবাসন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে বলে জানা গেছে।
টেকনাফ স্থল বন্দরের বর্তমান আমদানী রপ্তানী এবং রাজস্ব নিয়ে বন্দর ইনচার্জ জসিম উদ্দিন জানান, বিগত ২০১৬ সালের মিয়ানমার সহিংসতা ও লাগাতার সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে প্রায় ৩/৪ মাস মিয়ানমারে মংন্ডু শহর থেকে কোন পন্যবাহী ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দরে আসতে পারেনি। এতে ব্যবসায়ীরা প্রচুর পরিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি আসার পর থেকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা মংন্ডু শহরে যেতে না পারলেও যোগাযোগের মাধ্যমে মংন্ডু শহর থেকে বিভিন্ন প্রকার পণ্যবাহী ট্রলার বন্দরে নিয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতার অংশ হিসাবে আমরা বর্তমানে মাসিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুন রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হচ্ছি।
তিনি আরো বলেন,বাংলাদেশ মিয়ানমার বর্ডার পাস ট্রানজিট যাতায়াত যদি আবার শুরু হয়। তাহলে টেকনাফ স্থল বন্দরের ব্যবসায়ীরা অনেক লাভবান হবে। পাশাপাশি রাজস্বের উর্ধগতি আরো বৃদ্ধি পাবে।

পাঠকের মতামত: