ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গা শিবিরে মাদক গ্যাং তৎপর

ডেস্ক রিপোর্ট : সম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে ব্যাপকহারে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রবেশ করায় ইয়াবা নামে পরিচিত মেটামফেথামাইন-ভিত্তিক মাদক দ্রব্যের দাম নাটকীয়ভাবে ৫০% কমে গেছে। ফলে একসময় যা এলিট শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো তা এখন সাধারণ মানুষের নাগালে।

দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে রোহিঙ্গাদের জন্য স্থাপিত শিবির থেকে তাদেরকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া না হলেও তাদের সংখ্যা এখন এক মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। গত বছর প্রতিবেশি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ‘রোহিঙ্গা খেদাও’ অভিযান শুরু করলে সেখান থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে গিয়ে আশ্রয় নেয়। শরণার্থীদের সঙ্গে সঙ্গে অনেক সমস্যাও হাজির হয়েছে বাংলাদেশের জন্য। এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে মাদক চোরাকারবারী চক্র। জীবিকা অর্জনের জন্য মরিয়া এসব রোহিঙ্গাকে মাদক বহনের কাজে লাগানো হচ্ছে।

বার্মায় ‘পাগলা মাদক’ নামে পরিচিত ইয়াবা ২০০০ সালের দিকে বাংলাদেশের এলিট শ্রেণীতে প্রবেশ করে এবং দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় বিনোদনমূলক মাদকে পরিণত হয়। মেথ ও ক্যাফিনের সমন্বয়ে তৈরি গোলাপী রংয়ের ট্যাবলেটের মতো দেখতে এই মাদকে ভ্যানিলার গন্ধ রয়েছে। এশিয়া জুড়ে এটা ‘কমন পার্টি ড্রাগ’।

বাংলাদেশে ৯০% ইয়াবা আসে মিয়ানমার থেকে। ১৫ বছর ধরে ইয়াবা সেবনকারী কাসিফ খান জানান যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই মাদকের দাম ৫০% কমে গেছে। ফলে অনেক সহজে এটি পাওয়া যায়।

ধারণা করা হয় লাওস ও থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী কুখ্যাত গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের অংশ মিয়ানমারের ওয়া স্টেটে এই মাদক তৈরি হয়।

খান বলেন, মানের ওপর দাম নির্ভর করলেও ২০১৫ সালের পর থেকে এটি যে সস্তা হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

ইয়াবা সেবন বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। মাদক বিরোধী আন্দোলন ‘প্রিভেনশন অব ড্রাগ এবিউজের’ হিসাব মতে বাংলাদেশে প্রায় ৭০ লাখ ইয়াবা আসক্ত রয়েছে। এদের বয়স ১৬ থেকে ৩৫-এর মধ্যে। দেশটির মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গত মার্চে একটি খসড়া আইনে ‘৪০০ গ্রামের বেশি ইয়াবা ট্যাবলেট বা উপাদান পরিবহন, রাখা, কেনা বা বিক্রি, রফতানি বা আমদানি বা সংরক্ষণের জন্য মৃত্যুদণ্ডের’ প্রস্তাব করে।

বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিলেও গত বছর তা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ফলে সীমান্ত এলাকায় ইয়াবা ব্যবসা পোক্ত আসন গেড়ে বসতে সক্ষম হয়।

বাংলাদেশ মাদক নিয়ন্ত্রণ দফতরের প্রধান জামালুদ্দিন আহমেদ এই পত্রিকার সঙ্গে আলাপকালে বলেন, রোহিঙ্গাদের ব্যাপক অনুপ্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ইয়াবারও ঢল নেমেছে। তবে উদ্বাস্তুরা এই সমস্যার জন্য কম দায়ি বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, এর জন্য আমরা রোহিঙ্গাদের দায়ী করবো না, তারা পরিস্থিতির শিকার।

আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গারা করুণ পরিবেশে বাস করছে, তাদের সুযোগ সীমিত। তাদেরকে শিবিরে আটকে রাখা হয়েছে এবং কর্মসংস্থানের কোন অধিকার নেই। তারা যখন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসে তখন পাচারকারিরা সবচেয়ে ভালো বাহক পেয়ে যায়। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া নাফ নদীতে সবচেয়ে দক্ষ পরিবহন ব্যবস্থা পরিচালনা করে মাদক চোরাকারবারিরা। তাই বাংলাদেশে যেতে হলে মাদকের বাহক হওয়া ছাড়া উদ্বাস্তুদের উপায় ছিলো না।

আহমদের মতে এই সমস্যার শেকড়ে মিয়ানমারে। তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালের নভেম্বরে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে ৪৫টি কারখানা এবং ২৫টি বড় চোরাকারবারী চক্রের তালিকা মিয়ানমার সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী মাদক উৎপাদন ও বিতরণের কাজে জড়িত বলে বাংলাদেশ দাবি করছে। নাগরিক সংগঠন ড্রাগ এবিউজ-এর প্রধান অরুপ রতন চৌধুরী বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যোগসাজশের ব্যাপারে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেছি। কিন্তু মাদক আসা বন্ধ হয়নি।

তিনি বলে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো মাদক বিক্রির বড় বাজার। শুধু মাদক নয়, কিভাবে এগুলো বানাতে হয় সেই জ্ঞানও আসছে। চোরকারবারীরা ধরা পড়া এড়াতে ট্যাবলেটের রং ও আকার পরিবর্তন করছে বলেও চৌধুরী জানান।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতেও কিছু ছোট আকারের ল্যাব রয়েছে। এতে অনেক স্থানীয় ড্রাগ লর্ড জড়িত, আমরা নিশ্চিত। বিশেষ করে বাংলাদেশের ভেতরে ইয়াবা বিতরণের কাজটি একান্তভাবে স্থানীয়রাই করে থাকে।

পাঠকের মতামত: