ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

জেলায় ইউপি নির্বাচন-আওয়ামী লীগ ৮, বিএনপি ১৩ ও জাপায় ১৩ প্রার্থী চূড়ান্ত

photo-1451525276 সিএন নিউজ ডেস্ক :::
দলীয় প্রতীকে প্রথম বারের মতো পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে জেলায় শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলোতে ব্যাপক তোড়জোড় চলছে। দলীয় প্রার্থীকে জয় করার নিমিত্তে কয়েক দিন ধরে যোগ্য একক প্রার্থী নির্বাচনে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে দলগুলোতে। বিএনপি ও জাতীয় পার্টিতে কিছুটা স্বাভাবিক গতিতে প্রার্থী চূড়ান্ত প্রক্রিয়া চললেও আওয়ামী লীগে চলছে তুলকালাম কান্ড। দফায় দফায় সভা করে এরই মধ্যে সুপারিশ কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তারপরও পক্ষে বিপক্ষে শোনা যাচ্ছে নানা কথা। এক্ষেত্রে কেন্দ্রে পাঠানো সুপারিশ তালিকাও নিয়ে আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের তৃণমূলের চূড়ান্ত প্রার্থীদের মধ্যে এই আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা এই প্রতিবেদককে বিষয়টি জানিয়েছেন।
তবে দলীয় সূত্র মতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি তিন শীর্ষ দলেই অনেক ইউনিয়নে একক প্রার্থী চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে আওয়ামী লীগ। সমানে সমানে রয়েছে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি।
দলীয় সূত্র মতে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তৃণমূলের সুপারিশক্রমে তিন উপজেলার ১৯ ইউনিয়নে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দলটি এতে ক্ষেত্রে বড় ধরণের ব্যর্থ হয়েছেন। তৃণমুলের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯ ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ৮টিতেই একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পেরেছে আওয়ামী লীগ। এই ইউনিয়ন গুলো হলো টেকনাফের ৬ ইউনিয়নের মধ্যে সবগুলোই। কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়ন ও মহেশখালীর কুতুবজোম। টেকনাফ উপজেলায় চূড়ান্ত প্রার্থীরা হলেন, টেকনাফ সদর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল আলম, সাবরাং ইউনিয়নে নুর হোসেন, সেন্টমার্টিন ইউনিয়নে মুজিবুর রহমান, হ্নীলা ইউনিয়নে মাহবুব মোর্শেদ, বাহারছড়া ইউনিয়নে মৌঃ আজিজ উদ্দিন ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নে ফরিদুল আলম জুয়েল। কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়নে মিজানুর রহমান টিটু ও মহেশখালীর কুতুবজোমে মোশারফ হোসেন খোকন। এছাড়া অন্যসব ইউনিয়নে দু’জন প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে মহেশখালীতে হোয়ানকে সাবেক সাংসদ মোঃ ইছহাকের পুত্র মোঃ মোস্তফা কামালের নাম অগ্রাধিকার থাকলেও উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ওয়াজেদ আলী মুরাদের নামও রয়েছে। একই ভাবে কালারমারছড়ায় প্রয়াত ওসমান চেয়ারম্যানের পুত্র তারেক বিন ওসমান শরীফের নাম অগ্রাধিকার থাকলেও রয়েছে সেলিম চৌধুরী ও সাংবাদিক সৈয়দুল কাদেরের নাম। মাতারবাড়িতে বতর্মান চেয়ারম্যান এনামুল হক রহুল, ধলঘাটায় বর্তমান চেয়ারম্যান আহছান উল্লাহ বাচ্চু ও ছোটমহেশখালীতে সাবেক চেয়ারম্যান মো: আলীর পুত্র জিহাদ বিন আলীর নাম অগ্রাধিকার থাকলেও আরো একাধিক জনের নাম সুপারিশে রয়েছে।
কুতুবদিয়ার অন্য ৫ ইউনিয়নের মধ্যে প্রত্যকটিতে ২ জনের নাম কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আলী আকবর ডেইলে নুরুচ্ছফা বি.কম ও কাইয়ুম হুদা, লেমশীখালীতে ছৈয়দ আহমদ কুতুবী ও আকতার হোসেন, উত্তর ধুরুংয়ে সরওয়ার আলম চৌধুরী ও সিরাজদৌলা, দক্ষিণ ধুরুংয়ে আরিফ মোশারফ ও আলাউদ্দিন আল আজাদের নাম। এর মধ্যে গত ইউপি নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিল আলাউদ্দিন আল আজাদ। এবার তাকে আওয়ামীলীগ থেকে মনোয়ন দেয়ার জন্য কেন্দ্রে তার নাম সুপারিশ করা হয়েছে।
দলীয় সূত্র মতে, বিএনপিতে প্রার্থীদের জন্য উপজেলা পর্যায় থেকে সুপারিশ নিয়ে আজকেই কেন্দ্রে সুপারিশ তালিকা পাঠাচ্ছেন জেলা বিএনপি। তিন উপজেলার ১৯ ইউনিয়নের মধ্যে ১৩টিতে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে দলটি। এর মধ্যে কুতুবদিয়া উপজেলায় ৬ ইউনিয়নেই একক প্রার্থী চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অন্যদিকে টেকনাফে রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৬ ইউনিয়নের ৫টিতেই একক প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। মহেশখালীতে একটিতেও চূড়ান্ত হয়নি। রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রার্থী বাছাইয়ে উপজেলা পর্যায়ে সভা চলছিল।
সূত্র মতে, কুতুবদিয়া উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নেই বিএনপির একক প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। তার মধ্যে, উত্তর ধুরুংয়ে আলহাজ্ব নেজাম উদ্দিন, দক্ষিণ ধূরুংয়ে ছৈয়দ আহমদ চৌধুরী, লেমশীখালীতে আকতার হোছাইন (চশমা), কৈয়ারবিলে জালাল আহমদ, বড়ঘোপে শাকের উল্লাহ, আলী আকবর ডেইলে ফিরোজ খান চৌধুরী।
টেকনাফ উপজেলার ৬ ইউনিয়নের ৫টিতেই একক প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে বিএনপির। এর মধ্যে সদর ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহর ছোটভাই ছাত্রদলনেতা জিয়াউর রহমান জিয়া, হোয়াইক্যংয়ে জুনায়েদ আলী চৌধুরী, সেন্টমার্টিনে আবদুর রহমান, হ্নীলায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাফর আলম মেম্বার, সাবরাংয়ে সুলতান আহমদ চূড়ান্ত। বাহারছড়ায় মো: সিকন্দার মিয়া ও হেলাল উদ্দীন রয়েছে। রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য সভা চলছিল।
দলীয় সূত্র মতে, জাতীয় পার্টিতে তিন উপজেলার ১৯ ইউনিয়নের মধ্যে ১৩ ইউনিয়নের মধ্যে একক প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মহেশখালী উপজেলায় বড়মহেশখালী ইউনিয়নে মাহবুবুল আলম, কুতুবজোমে ডা. মো: সোহেল, ছোটমহেশখালীতে সিরাজুল মোস্তফা বাশি, মাতারবাড়িতে আরিফ আলী, হোয়ানকে অধ্যাপক এহছান আলী চূড়ান্ত হয়েছে। এছাড়া ধলঘাটায় নূরুল ইসলাম মনি ও ফখরুল ইসলাম, কালারমারছড়ায় অধ্যাপক আতিকুর রহমান, মোসাদ্দেক ফরাজী ও হেলাল উদ্দীন সিরাজী।
টেকনাফ উপজেলায় সাবরাংয়ে মো: আয়াছ রনি, টেকনাফ সদরে মো. ইসমাঈল কালু, বাহারছাড়ায় হাবিব উল্লাহ, হ্নীলায় শফিক আহমদ ঠিকাদার চূড়ান্ত হয়েছে। হোয়াইক্যংয়ে রয়েছে আবুল হাশেম কোম্পানি ও এম মমতাজ মিয়া এবং সেন্টমার্টিনে মো: সুলতান ও নূরুল আবছার।
কুতুবদিয়ায় বড়ঘোপে অ.ান.ম শহীদ উদ্দীন ছোটন, দক্ষিণ ধূরুংয়ে আবদুল মোনাফ, লেমশীখালীতে এড. মো: আইয়ুব হোসাইন, আলী আকবর ডেইলে শহীদুল্লাহ। উত্তর ধূরং ও কেয়ারবিলে এখনো কাউকে মূল্যায়ন করা হয়নি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা জানান, সব ইউনিয়নের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা দলীয় প্রধানের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার কেন্দ্রে থেকে মনোনিত প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা হতে পারে।
জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী জানান, আজকের মধ্যে উপজেলা থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা জেলায় চলে আসবে। তা জেলা থেকে সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠানো হবে। কেন্দ্র দু’য়েক দিনের মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনোনিত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবেন।
জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুফিজুর রহমান জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক সব জেলা কমিটি সুপারিশ পাঠাবে কেন্দ্রে। কেন্দ্র থেকেই চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।

পাঠকের মতামত: