ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

বৃক্ষ ‘আকাশ’ এর বয়স ২১২ বছর !

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, বান্দরবান ::

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঈদগড়-বাইশারী সড়কের বৈদ্য পাড়া এলাকায় অনেক দূর থেকে চোখে পড়ে প্রায় দেড়শত ফুট উচ্চতার ২১২ বছর বয়সী তেলি গর্জন গাছটি। ২০০৬ সালে গাছটির বয়স দুইশত বছর পূর্ণ হয়। সে সময় গাছটির গোড়ায় বেড় ছিল ২২ ফুট আর উপরের অংশে ১৫ ফুট ব্যাস ছিল। বন বিভাগ তখন গাছটির নামকরণ করে ‘আকাশ’। দেয়া হয় বয়স ও উচ্চতা সংবলিত ফলক। ‘আকাশ’ নামের সর্ববৃহৎ গর্জন গাছটি এখন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার ঈদগড় রেঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবস্থিত ২১২ বছর বয়সী গাছটির আশপাশের জায়গা ইতিমধ্যে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করার কারণে বেদখল হয়ে গেছে। যাতে করে হুমকিতে আছে চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক ও উঁচু গর্জন গাছ ‘আকাশ’।

২০০৬ সালের পর থেকে আশপাশের মানুষ তো বটেই, দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো দর্শনার্থীরা যাচ্ছেন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা গাছটিকে এক নজর দেখার জন্য।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, একসময় পাহাড়ি ঘন বনের সব গাছ উজাড় হয়ে গেলেও সেখানে একমাত্র জীবিত ছিল ওই রাজসিক গাছটি। বিশেষ ঘোষণাসংবলিত ফলক লাগিয়ে গাছটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সাহায্য চাওয়া হয় এলাকাবাসীর কাছে। সেই থেকে গাছটির প্রতি বৃক্ষপ্রেমীদের আগ্রহ বেড়েই চলছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ শাহ জাহান জানান, মাঝে মাঝে সরকারি কর্মকর্তারা এসে গাছটি পরিদর্শন করেন। গাছটির যেন কোনো ধরনের ক্ষতি না হয় সেই জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সতর্কও করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে গবেষকরাও আসেন দেখার জন্য।

এখন গাছটির বয়স ২১২ বছর। প্রশাসনের নজরদারি সত্ত্বেও যতই দিন যাচ্ছে গাছটির আশপাশের এলাকা বেদখল হয়ে বসতঘরসহ অন্যান্য স্থাপনা গড়ে উঠছে। এভাবে চলতে থাকলে গাছটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় বৃক্ষপ্রেমী বাসিন্দারা।

গর্জন (উরঢ়ঃবৎড়পধৎঢ়ঁং ঃঁৎনরহধঃঁং) মূল্যবান কাঠের গাছ হিসেবে পরিচিত। তবে কাঠের জন্য বিখ্যাত হলেও গর্জন ফুলের সৌন্দর্য উপেক্ষা করা কঠিন। গর্জন মূলত রাজসিক শ্রেণির বৃক্ষ। গাছ প্রায় চিরসবুজ ধরনের। আর উচ্চতার দিক থেকে ৪০-৫০ মিটারের মতো উঁচু হতে পারে। পাতা ডিম্বাকৃতির, শিরা সুস্পষ্ট, ১০ থেকে ১৮ সেমি লম্বা, আগা চোখা ও গোড়ার দিকে গোলাকার। বোঁটা ৩ থেকে ৭ সে.মি. লম্বা। লালচে সাদা রঙের ফুলগুলো ৬ থেকে ৮ সেমি চওড়া হতে পারে। ফল শুকনো ও পাখাযুক্ত। ফুল ফোটে বসন্তের শেষ ভাগে আর ফল পাকে মে-জুনে। গাছের আঠা সাদা রঙের। গর্জনের কাঠ লালচে বাদামি রঙের। আলসার ও দাদ নিরাময়ে এ গাছের কষ ব্যবহৃত হয়। কাঠের তেল উৎকৃষ্টমানের জ্বালানি ও ঘুণ পোকা নিরাময়ে কাজে লাগে। মূলত রেললাইনের স্লিপার, নৌকা ও জাহাজের নির্মাণে বেশি ব্যবহার হয় গর্জন গাছের কাঠ। কোন কোন গর্জন গাছ হাজার বছরও বেঁচে থাকে এবং ১১৫ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। (সূত্র- উইকিপিডিয়া)

প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা অতিকায় আকৃতির এই গর্জন গাছ ‘আকাশ’-এর কাছাকাছি আকৃতির আরও কয়েকটি গর্জন গাছ আছে ঈদগড় রেঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে। যেগুলোকে রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঈদগড় রেঞ্জ কর্মকর্তা এমদাদুল হক। তিনি আরো বলেন, ‘মহিমান্বিত গাছটি রক্ষায় বন বিভাগের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনকে আরও তৎপর রয়েছে।

পাঠকের মতামত: