ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজারে ফের বেড়ে গেছে ছিনতাইকারী

শাহেদ মিজান, কক্সবাজার ::

কক্সবাজার শহরজুড়ে কিলবিল করছে ছিনতাকারীরা। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান জোরদারের কথা বললেও ছিনতাই রোধ করতে পারছে না পুলিশ। বরং ছিনতাইয়ের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি পুলিশের নাকের ডগা পুলিশ সুপার কার্যালয় এলাকায়ও ঘটছে দুর্ধর্ষ ছিনতাইয়ের ঘটনা। ছিনতাকারীয়ের ঘটনা বৃদ্ধি ও ছিনতাইকারীদের প্রভাব আশঙ্কানজকহারে বাড়লেও পুলিশের ব্যর্থ বলে দাবি করেছেন লোকজন।

কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দীন বলেন, ‘কক্সবাজারের মতো একটি পর্যটন শহরে এখন শুধু রাত নয়; দিন-দুপুরেও ঘটছে ছিনতাই। এমনকি পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনেই একের পর এক ঘটছে দুর্ধর্ষ ছিতনতাই। এর ফলে আমরা শহরবাসী আতঙ্কিত ও চিন্তিত হয়ে পড়েছি।’

শহরের বিভিন্ন স্তরের লোকজন দাবি করেন, পুরো শহরজুড়ে এখন ছিনতাইকারীর ভয় মানুষকে তাড়া করছে। রাত নামলেই এখন ছিনতাই নিয়ে তটস্থ থাকে মানুষ। এতে প্রয়োজনীয় কাজ থাকলেও রাত নামলেই আর বাইরে বের হতে চাচ্ছেন না অনেকে। এমনকি দিনের বেলায়ও নির্জন স্থানে ওৎপেতে রয়েছে ছিনকারীর দল। সুযোগ বুঝে ছিনিয়ে নিচ্ছে মানুষের জিনিসপত্র। এতে নির্জন স্থানেও অনিরাপদ বোধ করছে।

জানা গেছে, গতকাল শনিবার সকাল ৮টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব কোণের সড়কে প্রাইভেট পড়তে যাওয়া সামিরা সুলতানা বকেয়া নামে এক কলেজ ছাত্রীকে ছুরি ঠেকিয়ে তার মোবাইল ও ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায় একদল ছিনতাইকারী। একই ভাবে গত ৪ এপ্রিল রাত পৌনে নয়টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে শাহেদা হাসান নামের এক নারী ছিনতাইয়ের শিকার হন। ছিনতাইকারীরা স্বর্ণের চেইন, কানের দুল, হাত ব্যাগ ও ৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পুলিশের নাকের ডগায় সংঘটিত এই দুই দুর্ধর্ষ ছিনতাইয়ের ঘটনা শহরে বসবাসকারী লোকজনে ভাবিয়ে তুলেছে।

এ ব্যাপারে সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ নাজিম উদ্দীন বলেন, যেখানে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনেই ঘটছে দুর্ধর্ষ সেখানে অন্য এলাকার কি অবস্থা একবার ভাবুন। এখন শহরজুড়ে ছিনতাইকারীর দল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সব নির্জন স্থানে এখন ছিনতাকারীরা ওৎপেতে রয়েছে। এসব সশস্ত্র ছিনতাইকারীরা হামলে পড়লে মানুষের উপর। শুধু তাই নয়; সুযোগ বুঝে জনাকীর্ণ স্থানেও অস্ত্রের মুখে ছিনিয়ে নিচ্ছে মূল্যবান জিনিসপত্র।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের ১৫টির বেশি স্পটে ছিনতাইকারীরা উৎপেতে রয়েছে। এসব স্পটগুলো হলো, কলাতলী এলাকার সী-ইন পয়েন্ট, সৈকতের হোটেল সী-ওয়ার্ল্ড রোড, বাহারছড়ার জাম্বুর মোড়, সার্কিট হাউসের উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ের চত্বর, লালদীঘির পাড়ের বিহারি গলি, হাসপাতাল রোড, কালুর দোকান, বার্মিজ মার্কেট, খুরুশকুল রোডের মাথা, বিজিবি ক্যাম্পের নারিকেল বাগান, প্রধান সড়কের সাবমেরিন ক্যাবল এলাকা, সিটি কলেজের সামনে, হাশেমিয়া মাদ্রাসা পয়েন্ট, কলাতলীর প্রধান সড়কের টিএন্ডটি অফিসের সামনে, আদর্শ গ্রামের সামনেসহ শহরের ডায়াবেটিক পয়েন্ট। এই ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকা হাসপাতাল সড়কেই দিনদুপুরে সম্প্রতি কয়েকটি দুর্ধর্ষ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আলীরজাহাল কেন্দ্রিক একটি বড় ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে। এই চক্রের সবাই দক্ষিণ রুমালিয়ার ছড়ার। তারা বাসটার্মিনাল থেকে শহরের ঝাউতলা পর্যন্ত টমটমে করে চষে বেড়ান। মূলত টমটমের যাত্রীরাই তাদের একমাত্র টার্গেট। এই ভয়ংকর চক্রটি সন্ধ্যার পর থেকে তৎপর হয়ে উঠে। তারা টার্গেট করে যাত্রী বেশে টমটমে উঠে পড়ে। শহরের আসার পথে আলীরজাঁহাল থেকে হাশেমিয়া মাদ্রাসা ব্রীজ পর্যন্ত স্থানে সুযোগ বুঝে ছুরির মুখে টমটম চালক ও যাত্রীদের জিম্মি করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়। তবে ভীতি সৃষ্টির জন্য অধিকাংশ ঘটনায় ছুরিকাঘাত করে। অন্যদিকে আরেকটি ভয়ংকর ছিনতাকরী গ্রুপ হচ্ছে ‘সিএনজি সিন্ডিকেট’। এই সিন্ডিকেটটি কলাতলী ও হাসাপাতাল এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। গত তিন মাসে অর্ধশতাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

অভিযোগ মতে, এই সিন্ডিকেটটির কাছে থাকে পিস্তল ও ধারালো ছুরি। পিস্তল ও ছুরি ঠেকিয়ে এই ছিনতাইকারী গ্রুপ প্রায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাচ্ছে। তবে ঝামেলা এড়াতে তা এড়িয়ে যায় ভুক্তভোগীরা। তারপরও কিছু ঘটনা মিডিয়ায় চলে আসছে। তবে অধিকাংশ ঘটনা চুপে চুপে চলে যায়। কারণ পুলিশের কাছে অভিযোগ করলেও হারানো মালামাল উদ্ধার করা সম্ভব হয় না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল বলেন, ‘ছিনতাইয়ের বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছি। প্রতিদিন অভিযান চলছে। বেশ কয়েকজন ছিনতাকারীকে গ্রেফতারও করেছি। সাধারণ লোকজনকের আহ্বান জানাচ্ছি, ছিনতাইকারীর অবস্থানসহ কোনো তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে পুলিশকে জানাবেন। আমরা সাথে সাথে অভিযান চালাবো।’ অন্যদিকে সম্প্রতি মহিলার সংঘটিত ঘটনাটি ছিনতাই নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।

পাঠকের মতামত: