ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

আলীকদমে তামাক চুল্লিতে জ্বালানী কাঠ (লাকড়ি) পোড়ানোর মহোৎসব

নিজস্ব প্রতিনিধি, আলীকদম ::

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলাজুড়ে অর্ধসহস্রাধিক তামাক চুল্লীতে লাকড়ি পুড়িয়ে তামাক প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে। প্রকাশ্য দিবালোকে হাজার হাজার মন লাকড়ি পোড়ানো হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নীরব। শত শত একর জমিতে সরকারি বরাদ্দের ইউরিয়া সার ব্যবহার করে স্থানীয় কৃষি অফিসের সহযোগিতায় তামাক চাষ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, আশির দশকের পর থেকে আলীকদম উপজেলার ৯০ শতাংশ কৃষি জমি তামাক চাষের দখলে চলে গেছে। রবিশস্য মৌসুমে তামাকের রাহুগ্রাসে খাদ্যফসল উৎপাদন চরমভাবে হ্রাস পেয়েছে। প্রতিবছর কৃষিজমিতে তামাক চাষের ভয়াল বিস্তৃতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে সরকারি বরাদ্দের ভর্তুতি মূল্যের সার। উপজেলার বোরো স্কীম ও রবিশষ্যের কৃষি জমি এবং মাতামুহুরী নদী বিধৌত তীরবর্তী উর্বর জমিতে তামাক চাষের আগ্রাসন চলছে। এছাড়াও তীর এবং নদীর বুকে তামাক চাষ হলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। স্থানীয়দের মতে, নদীর চরাঞ্চাল এবং বুকে তামাক চাষে ক্ষরিকারক নানা ধরণের কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। এসব কীটনাশক পানিতে পড়ে মাতামুহুরী নদীর মৎস্য সম্পদ ও প্রজনন চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কোম্পানীসমুহ তামাক চাষ বিস্তারে কয়েক দশক ধরে চাষীদের প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে তামাক চাষ অব্যাহত রেখেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা তামাক পণ্য থেকে রাজস্ব পাওয়ায় তামাক কোম্পানীসমুহের পক্ষ নিয়ে রহস্যজনক নীরবতা পালন করেন।

আগ্রাসন যেভাবে শুরু: লামা-আলীকদম প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রুহুল আমিন জানান, ১৯৮৩ সালে জমিদার মকছুদ আহমদ চৌধুরীর লামার মুখ খামারে অল্প পরিমাণ জমিতে তামাক চাষ শুরু হয়। ১৯৮৪ সালে এ চাষ ছড়িয়ে পড়ে লামা উপজেলার সব ক’টি ইউনিয়ন ছাড়াও আলীকদম, নাইংক্ষ্যছড়ি, এবং চকরিয়ার উপহেলার বিভিন্ন এলাকায়।

বিরান হচ্ছে বনভূমি : স্থানীয় চাষীরা জানায়, প্রতিটি তামাক চুল্লিতে প্রায় ৭-৮শ’ মন লাকড়ির প্রয়োজন পড়ে। সে হিসাবে আলীকদমে ৫ শতাধিক তামাক চুল্লিতে চলতি মৌসুমে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার মণ জ্বালানি কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। প্রতিমন জ্বালানি কাঠ ৮০ টাকা মণ হিসাবে যার স্থানীয় বাজার মূল্য ৪০ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তামাক প্রক্রিয়াজাতে স্থানীয় বনাঞ্চল ধ্বংস করে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করার পাশাপশি কৃষকের বাড়ির আঙিনার মূল্যবান বনজ গাছের পাশাপশি আম ও কাঁঠাল গাছগুলোও তামাক চুল্লির আগুনে পুড়ে নিঃশেষ হচ্ছে।

নির্বিচারে তামাক চাষ ও লাকড়ি পোড়ানোর ফলে সবুজাভ প্রকৃতি চরম হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। পাহাড়-মাটি, নদী-খাল ও প্রাণিবৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। দিন দিন বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ছে এলাকার সবুজ প্রকৃতি।

পাঠকের মতামত: