ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি মূল হোতা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা

অনলাইন ডেস্ক ::

বিসিএস, মেডিকেল ও বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ও সরকারী ব্যাংকসহ সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াতি করছে একটি চক্র। তারা পরীক্ষা শুরুর ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে ওই ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র বাইরে ফাঁস করে দেয়। এরপর বাইরে থাকা প্রশ্ন এক্সপার্টদের মাধ্যমেই ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত কানে লাগানো ক্ষুদে হেডফোনে পৌছে যায় এমসিকিউ বিত্ত ভরাটের উত্তর। এ চক্রের মূল হোতা বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক আবু জাফর মজুমদার রুবেল, পুলকেশ দাস ওরফে বাচ্চু ও কার্জন নামে এই তিন জন। তারা পলাতক রয়েছে।  তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দারা।

এর আগে শুক্রবার রাতে ব্যাংক কর্মকর্তা, ইঞ্জিনিয়ারসহ এই চক্রের দশ জনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তারা হলেন-সোনালী ব্যাংকের আইটি অফিসার অসিম কুমার দাস, পূবালী ব্যাংকের অফিসার মনিরুল ইসলাম ওরফে সুমন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের অফিসার সোহেল আকন্দ, জহিরুল ইসলাম, সাদ্দাতুর রহমান ওরফে সোহান, নাদিমুল ইসলাম, এনামুলহক ওরফে শিশির, শেখ তারিকুজ্জামান, অর্নব চক্রবর্তী ও আরিফুর রহমান ওরফে শাহিন।

এসময় তাদের কাছ থেকে ক্ষুদে ব্যাটারি, ইয়ারফোন, মোবাইলফোনের মতো কথা বলার সিম সংযুক্ত মাস্টারকার্ড জব্দ করা হয়। রাজধানীর মিরপুর, নিউমার্কেট ও ফার্মগেট এলাকা থেকে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যাংক, সরকারি চাকরি এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত এ চক্রটিকে গ্রেফতার করা হয়।

শনিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে গোয়েন্দাদের নজরদারির কারণে প্রশ্ন ফাঁসকারি প্রতারক চক্র প্রশ্ন ফাঁসের নতুন পদ্ধতি বের করে। তারই অংশ হিসেবে তারা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষার সময় প্রশ্ন ফাঁস করে।

তিনি বলেন, তারা যে প্রতারণা করে সেটা বিভিন্ন চাকরির, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার সময় বিশেষ ডিভাইস ব্যবহার করে প্রতারণার আশ্রয়টা নিয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, চক্রটির একজন করে সদস্য পরীক্ষার হলের ভেতরে থাকেন, যারা প্রশ্ন পাওয়ার সাথে সাথে ডিভাইসের মাধ্যমে বাইরে থাকা সহযোগীদের প্রশ্নটি সম্পর্কে ধারণা দেয়। পরবর্তীতে তারা স্বল্প সময়ের মধ্যে সেগুলো সমাধান করে পরীক্ষার্থীদেরকে উত্তর সরবারহ করে থাকে। এই চক্রের অন্যতম সদস্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক আবু জাফর মজুমদারসহ পলাতক রয়েছে ২জন।

আবদুল বাতেন বলেন, চক্রের সদস্যরা তিনভাগে বিভক্ত হয়ে তিন কাজ করে থাকে। চক্রের কয়েকজন পরীক্ষায় পাশ করানোর জন্য মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হতে আগ্রহী পরীক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করে। দ্বিতীয়ত: চক্রের আরেক অংশ পরীক্ষা শুরু হবার পর পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার জন্য ডিভাইস ব্যবহার ও বিশেষজ্ঞদের সাথের যোগাযোগ করে। আরেকটি অংশ ডিভাইস সরবরাহে সহযোগীতা করে।

তিনি বলেন, এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস ঠেকানো গেছে। এজন্য এই চক্রটি তাদের প্রক্রিয়া এই এইচএসসি পরীক্ষায় বাস্তবায়নের চেষ্টা করছিল। কিন্তু তার আগেই গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেফতার হয় তারা। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে এব্যাপারে আরও তথ্য বেড়িয়ে আসবে বলে দাবি করেন তিনি।

পাঠকের মতামত: