ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঈদগাঁওতে ভূমি বিরোধে বাড়ছে হানাহানি ঃ লাভবান হচ্ছে পুলিশ, দালাল ও প্রভাবশালীরা

114-300x237শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, কক্সবাজার সদর ::

কক্সবাজার সদরের বৃহত্তর ঈদগাঁওয়ের ছয় ইউনিয়নের ভূমি বিরোধের ফলে মারামারি, হানাহানি, দলাদলি, দখল-বেদখল, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ফ্যাসাদ সৃষ্টি, মামলা-পাল্টা মামলা দিন দিন বেড়েই চলছে। পক্ষ-বিপক্ষ একে অপরকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানোর প্রতিযোগিতা চলছে প্রতিনিয়ত। এ ভূমি বিরোধের ফলে দালাল ও প্রভাবশালীদের উৎপাতে সর্বস্ব হারাচ্ছে এলাকার দরিদ্র পরিবারগুলো। আবাদি জমি, দখলীয় সরকারী খাস জমি, পুকুর, ভিটা, বসতবাড়ী নিয়ে বিরোধ যেন লেগেই আছে প্রতিনিয়ত। আবার কেউ হারাচ্ছে এতটুকু সম্বল, বসত ভিটা। জানা যায়, ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে বেশির ভাগ অভিযোগ ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা লুটছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, এলাকার কিছু টাউট, বাটপার ও দালালেরা। তারা এলাকার কিছু বেকার যুবকদের টাকা-পয়সার লোভ দেখিয়ে বিরোধীয় জমি জবর-দখলের মাধ্যমে এলাকায় সংঘাতের সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এসব দালালেরা কৌশলে জমির খতিয়ানভুক্ত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রথমে সংক্রান্ত ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে দেয়। পরে খতিয়ানের বিভিন্ন দাগাদির অংশ বিক্রির জন্য কু-পরামর্শ দিয়ে থাকে। সেখানে তারা দালালী হিসাবে হাজার হাজার টাকা চুক্তি করে নিচ্ছে। বৃহত্তর ঈদগাঁওয়ের ৬ ইউনিয়নের প্রায় এলাকায় চলছে এ বিরোধ। বিশেষ করে পোকখালীর নাইক্ষ্যংদিয়া, ঈদগাঁও কালির ছড়া, ভোমরিয়াঘোনা, মেহেরঘোনা, জালালাবাদ, পালাকাটা, বাহারছড়া, ফরাজী পাড়া, খামার পাড়া, সওদাগরপাড়া, বাঁশঘাটা, ইসলামাবাদের পূর্ব ইউছুপেরখীল, গজালিয়া, বোয়ালখালী, চৌফলদন্ডী, নতুন মহাল, খোনকারখীল, রাখাইন পাড়া, মাইজ পাড়া, খামার পাড়া, হায়দার পাড়া ও ইসলামপুর ইউনিয়নের জুমনগর, নাপিতখালী, ভিলেজার পাড়া, খান ঘোনা, উত্তর নাপিতখালী এলাকায় এ বিরোধ সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এলাকার কিছু টাউট প্রকৃতির লোক আর.এস. বি.এস. খতিয়ানসহ জমি সংক্রান্ত কিছু ধারণা থাকায় আইনজীবী ও বিচারকের চেয়ে নিজেদের বেশি জ্ঞানী বলে মনে করেন। মুখের জোরে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করার কৌশল অবলম্বন করতে দেখা যায়। এসব টাউট প্রকৃতির লোকেরা বেশির ভাগই পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে গলাবাজি করে বিচারের নামে দৈনিক ৮/১০ হাজার টাকা আয় করে থাকে। অথচ তাদের এ টাকা যোগান দিতে গিয়ে কিছু পরিবার সর্বস্ব হারাতে বসেছে। দালালেরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের কিছু চেয়ারম্যান ও অফিসারের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও সম্মতির কারনে এসব দালাল, বখাটেরা পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিনিধি পরিচয়ে চালিয়ে যাচ্ছে হটকারিতা মূলক কার্যকলাপ। এসব দালাল টাউটের জন্য গ্রাম্য আদালতের চেয়ারম্যান ও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি একটি চেয়ার ও দখল করে থাকতে দেখা যায়। এরা পক্ষে-বিপক্ষের অবস্থান নিলেও সবাই নিজেদের স্বার্থে সংঘবদ্ধ থাকে। এলাকার সাধারণ দরিদ্র জনগণ গ্রাম্য আদালত, পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের স্মরণাপন্ন হয়ে দালালদের খপ্পরে পড়েছে প্রতিনিয়ত। অনেক শালিসকারক নিজে বিচারকের প্রতিষ্ঠা করার জন্য আদালতে মামলা চলাকালীন অবস্থায় বিরোধীয় সম্পত্তিতে খুঁটি স্থাপন করে দিচ্ছে। ঈদগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকায় সালিশকারক নামে একটি চক্র অসহায় গরীবদের জায়গা-জমি বিরোধ মিঠানোর নামে প্রহসন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এ সিন্ডিকেটটি পুরো ঈদগাঁওয়ে সংঘবদ্ধভাবে গ্রাম্য আদালত, পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থেকে শুরু করে থানা পর্যন্ত কাজ করছে বীরদর্পে। সম্প্রতি জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে ঈদগাঁওয়ের আইন-শৃঙ্খলা ব্যাপক অবনতির দিকে যাচ্ছে। ফলে পক্ষদ্বয়ের মধ্যে মিচ মামলা, নামজারী মামলা, মারামারি মামলা, মারামারি ঘটনা যেন নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দালাল চক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এরা বিচারের নামে তাদের অর্থ আদায়, প্রয়োজনে থানায় মামলা রুজু করার দায়িত্ব ও নিয়ে থাকে। ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণ মানুষ, জমি-জমার হিসাব বুঝে না বিধায় এসব লোকদেরকে তাদের পক্ষে সালিশকার হিসাবে দিয়ে থাকেন। এরা দালালী করলেও সাধারন বিচার প্রাথীর পক্ষে থাকায় তদন্ত কেন্দ্রের কিছুই করার নেই। ইসলামাবাদ বোয়ালখালী এলাকার জমির উদ্দীন চৌফলদন্ডী খোনকারখীল এলাকার মোঃ ইদ্রিছ ইসলামাবাদ পাহাশিয়াখালীর মনজুর আলম নামের ৩ ব্যক্তি জানায়, তাদের খতিয়ানভুক্ত জমির উপর কিছু টাউট, বাটপার অপর পক্ষকে অংশ রয়েছে মর্মে বিরোধ সৃষ্টি করে দিয়েছে। ঈদগাঁওর ব্যবসায়ী মমতাজ আহমদ সওদাগর জানান, এ সকল বিচারিক কার্যক্রম তদন্ত কেন্দ্র ক্যাম্প না হয়ে অনেক সময় পাশের চায়ের দোকানে হয়ে থাকে। কিছু কিছু এএসআই, এসআই’র সাথে দালাল চক্রের সখ্যতা থাকায় পক্ষে-বিপক্ষে রিপোর্ট লিখে দেন এসব দালালেরা। মোটা অংকের টাকা মানুষকে হয়রানি করছে তদন্ত কেন্দ্রের কিছু সংখ্যক দালালচক্র। সাধারন মানুষ এ থেকে পরিত্রান চায়। এ ব্যাপারে তারা যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করে তদন্ত প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তৈরী করার দাবী জানান। সে সাথে দালাল চক্রকে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধকরার ও দুর্ণীতিবাজ পুলিশকে অপসারনের দাবী জানিয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব দালাল চক্র তদন্ত কেন্দ্রে যেতে না পারলে এবং পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিবেদন লিখতে না পারলে ঈদগাঁওতে মামলা মোকদ্দমা ও অভিযোগ আরো কমে যাবে। এ ব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ক্ষতিগ্রস্থ কোন ব্যক্তি অভিযোগ দায়ের করলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: