ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

লামায় কোম্পানী বনায়নের নামে অধিকাংশ পাহাড় দখল, ভূমিহীন কয়েক হাজার পরিবার

cccccমোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি ::

সবুজ স্নিগ্ধ বনানী ঘেরা নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর অরন্যরাণী লামা। ৬৭১.৮৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মধ্যে নদী এলাকা ৭৮.১৭৩ বর্গ কিলোমিটার, সংরক্ষিত বনভূমি ৩৩২.৮২৭ বর্গ কিলোমিটার ও চাষাবাদযোগ্য ভূমির আয়তন ২৬০.৮৪৫ বর্গ কিলোমিটার। বর্তমানে চাষাবাদযোগ্য ভূমির অধিকাংশই আবাদ করে গড়ে উঠেছে বসতি। বাঙ্গালী ও উপজাতির মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন এ উপজেলার অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য। ২০১১ সালের আদমশুমারীর তথ্যমতে উপজেলার মোট জনসংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার ৪১৩ জন। আর পরিবার ২২ হাজার ৪৪৭টি। ১৯২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর লামা থানা গঠিত হয়। ১৯৭০ সালের ৯ অক্টোবর আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, বাঁইশারী ও গজালিয়াকে নিয়ে লামা মহকুমায় উন্নীত হয়। বর্তমানে এ উপজেলায় ১৮টি মৌজা, ৭টি ইউনিয়ন এবং ৪৪০টি পাড়া ও ৪৪০ জন কারবারী রয়েছে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২-৭৩ সালের দিকে কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার কিছু ভূমিহীন লোক এখানে বনজ দ্রব্য আহরণ করতে এসে এলাকার প্রতি মুগ্ধ হয়ে স্থায়ীভাবে বসতি শুরু করে। ১৯৭৯-৮০ সালের দিকে মরহুম রাষ্টপতি মেজর জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নদী ভাঙ্গা গৃহহীন ও দরিদ্র ভাসমান প্রায় ৫হাজার পরিবারকে এখানে প্রথম পর্যায়ে পুনর্বাসিত করা হয়। এ সুযোগে আরও প্রায় ২ হাজার পরিবার নিজ উদ্যোগে তাদের আতœীয় স্বজনের সহযোগিতায় পুনর্বাসিত হন। সে থেকে দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে এখানের জনসংখ্যা। বান্দরবান জেলার এক তৃতীয়াংশ মানুষের এ উপজেলায় বসবাস। এ কারনে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে লামা উপজেলা গুরুপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

বর্তমানে ৩৩২.৮২৭ বর্গ কিলোমিটার বনভূমি এর মধ্যে সিংহভাগ জায়গা কোম্পানী বনায়নের নাম দিয়ে দখল করেছে গুটি কয়েক কোম্পানী ও বিশেষ ব্যাক্তিরা। উল্লেখযোগ্য, গজালিয়া ইউনিয়নের মোস্তফা প্রুপ, এক্সজিম গ্রুপ, লামা সদর ইউনিয়নে পাহাড়িকা প্লানটেশন, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সানমার, মোহাম্মদিয়া ট্রি প্লানটেশন, ডেসটিনি ২০০০ লিঃ, হামিম গ্রুপ, সরই ইউনিয়নের কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, মেরিডিয়ান গ্রুপ, লামা রাবার গ্রুপ, আজিজনগর ইউনিয়নে পাহাড়িকা প্লানটেশন, হামেলা প্লানটেশন, জিএমজি প্লানটেশন, ফাইতং ইউনিয়নে মোস্তফা গ্রুপ, রুপসীপাড়া ইউনিয়নে গাজী রাবার প্লানটেশন। এসব বৃহৎ কোম্পানীর আধিপাত্য ও ভূমি দখলের কারণে বিভিন্ন সময়ে পূনর্বাসিত ৮০ শতাংশ লোকজন ভূমিহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া ১০ একর কিনে শত একর দখলের অভিযোগ রয়েছে সবকয়টি কোম্পানীর বিরুদ্ধে।

ভূমি অফিসের সাথে আতাঁত করে জমি কেনা বেচা প্রক্রিয়ায় তথ্য গোপন, অন্যের হোল্ডিং নিজের নামে দেখিয়ে স্থায়ী বাসিন্দা সেজে জমির মালিক হওয়া ও স্থানীয়দের উচ্ছেদ সহ নানান ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছে ধাপটের সাথে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদেরকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে। মিথ্যা মামলা দিয়ে এধরনের হয়রানী করায় লামা থানার প্রাক্তন অফিসার ইনচার্জ সিরাজুল ইসলামকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে শাস্তিমূলক বদলী করলেও এখনো থেমে থাকেনি মিথ্যা মামলা সৃজন। প্রশাসনের প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় হচ্ছে এইসব মামলা গুলো।

এব্যাপারে বাগান মালিকদের বক্তব্য চাওয়া হলে কেউ বক্তব্য দিতে রাজী হননি। তবে গজালিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত এক্সজিম গ্রুপের মালিক আবছার উদ্দিন জানান, আমি সরকার থেকে লিজ নিয়ে এবং স্থানীয়দের কাছ থেকে পাহাড় ক্রয় করে বাগান সৃজন করেছি। আমি জায়গা দখল করেছি এধরনের অভিযোগ অদ্যাবদি কেউ করতে পারেনি।

রুপসীপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মা বলেন, কোম্পানী গুলো ক্রয়কৃত জায়গা নিজেরাই মনগড়া ভাবে পরিমাপ পরিচি‎িহ্নত করে দখল নেয়। এক্ষেত্রে চেয়ারম্যান মেম্বারদের কোন মতামত নেয়া হয়না। তারা (কোম্পানী) শতভাগ পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধি লঙ্গন করে। অবৈধ ভূমি দখল ঠেকাতে চেয়ারম্যান হিসেবে আপনার ভূমিকা কি ? জানতে চাইলে তিনি মোবাইল কেটে দেন।

এবিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদ মাহমুদ জানান, ইতিপূর্বে কি হয়েছে আমার জানা নেই। তবে এখন আর রাজার সনদ ছাড়া বায়না নামা রেজিষ্ট্রি হয়না।

পাঠকের মতামত: