ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় স্কুলের ভবন ভেঙ্গে টিন ও দরজা জানালা খুলে নেযায় লেখাপড়া বন্ধ পাঁচশতাধিক শিক্ষার্থীর

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

কক্সবাজারের চকরিয়ায় সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়নে স্কুল কাম সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ কাজের নামে ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে সরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান ভবন। তুলে নেয়া হয়েছে চালার টিন ও খুলে নিয়েছে দরজা জানালা। বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদেরকে কোন ধরণের অবগত না করে কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন শুক্রবার প্রকাশ্যে ইউনিয়নে সুরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি ভেঙ্গে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ অবস্থার কারনে বর্তমানে পাঠদান কার্যক্রম অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে। শনিবার বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলেও শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করতে পারেনি। এ ঘটনার জেরে বিদ্যালয়ের অন্তত পাঁচ শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীর লেখাপড়া নিয়ে চরম অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। ঘটনাটি জানতে পেরে গতকাল সকালে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে সমবেত হতে অভিভাবক, শিক্ষার্থীসহ হাজারো মানুষ। ওইসময় সেখানে তাঁরা বিক্ষোভ করতে থাকে।

খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম এবং উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ারুল কাদের ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে তাঁরা অভিযুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেবেন কথা দিয়ে বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসিকে শান্ত করেন।

সুরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফা কামাল বলেন, চকরিয়া উপজেলা এলজিইডির অর্থায়নে প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে চলতিমাসে তাঁর বিদ্যালয়টি ভেঙ্গে নতুনভাবে স্কুল কাম সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। মেসার্স ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পান বলে শুনেছি। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মকর্তা বা এলজিইডির প্রকৌশলীরা বিদ্যালয়টি দেখতে আসেনি।

প্রধান শিক্ষক বলেন, সাব ঠিকাদার হিসেবে আশিক নামের একজন কাজের তদারক করছেন। আমাদেরকে সাথে কোন ধরণের কথা না বলে ওই ব্যক্তি বিদ্যালয়ের মাঠদখল করে ইতোমধ্যে সেখানে বিপুল পরিমাণ বালু ও পাথর মজুদ করেছেন। যার কারনে গত একমাস ধরে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারছেনা।

বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদেরকে না জানালেও আমরা (বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকরা) সাব ঠিকাদার আশিককে কিছুদিন আগে ডেকে পাঠিয়ে জানাই নির্মাণ কাজ শুরু করার আগে বিকল্প হিসেবে আমাদেরকে অস্থায়ী একটি স্কুল ভবন তৈরী করে দিন। যাতে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করতে পারে। কিন্তু আমাদের কথা অমান্য করে এবং কোন ধরণের অবগত না করে শুক্রবার (২৩ মার্চ) ছুটির দিনে ঠিকাদারের লোকজন শ্রমিক দিয়ে বিদ্যালয়ের বর্তমান ভবনের বিভিন্ন অংশে ভেঙ্গে দিয়েছে। তুলে নিয়েছে চালার টিন ও খুলে নিয়েছে দরজা জানালা।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, গতকাল শনিবার সকালে যথারীতি শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে আসেন পাঠদান করতে। ওইসময় শিক্ষার্থীরাও আসেন লেখাপড়া করতে। তবে ওইসময় বিদ্যালয়ের চালা, দরজা জানালা ভেঙ্গে দেয়ার কারনে তাঁরা আর পাঠদান করতে পারেনি। এ অবস্থার কারনে বর্তমানে বিদ্যালয়ের অন্তত পাঁচশতাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়ায় চরম অনিশ্চিয়তা সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি জানতে পেরে আমি তাৎক্ষনিক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানাই। তিনি বিষয়টি চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। ততক্ষনে বিদ্যালয়ে জড়ো হতে থাকে অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও বিক্ষুদ্ধ জনসাধারণ। এরপর বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ শুরু করেন বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসি।

সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আজিমুল হক আজিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বিদ্যালয় ভবনের বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে দেয়ার খবর পেয়ে এলাকায় উত্তেজনা শুরু হলে পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ঘটনাটি আমাকে জানান। তাৎক্ষনিক আমি ঘটনাটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। ওইসময় জনতা বিক্ষোভ করতে থাকেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। বিক্ষোভকালে তাৎক্ষনিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি জরুরী সভা ডাকেন। তাতে সিদ্বান্ত নেয়া হয়েছে অনুমতি ছাড়া বিদ্যালয় ভবন ভাঙ্গার কারনে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, পরিচালনা কমিটির সভায় সিদ্বান্ত নিলেও প্রভাবশালী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করতে তাঁরা সাহস পাচ্ছেনা বলে জানান। পরে বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসির দাবির মুখে এবং তাদেরকে শান্ত করতে আমি বাধ্য হয়ে সিদ্বান্ত নিই অভিযুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমি আইনের আশ্রয় নেব। #

পাঠকের মতামত: