ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

রামপুর সমিতির ১০ হাজার সভ্য-পোষ্যরা আতঙ্কে

চকরিয়া অফিস :

চকরিয়া উপজেলার রামপুর মৌজায় অবস্থিত বাপ-দাদার ওয়ারিশীসুত্রে মালিকানাধীন রামপুর সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির মালিকাধিন চিংড়িঘেরের জায়গা দখল বুজে দিচ্ছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। উল্টো মৎস্য বিভাগের লোকজন নানা ধরণের হুমকি ধমকি দিয়ে সমিতির সদস্যদেরকে নানাভাবে হয়রানি করার চেষ্ঠা চালাচ্ছে। সর্বশেষ ১৫ মার্চ রাতে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা ভাড়াটে লোক জড়ো করে হামলা চালিয়ে সমিতির সদস্যদের বেশ কটি খামারঘর ভেঙ্গে দিয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে রামপুর সমিতির অন্তত ১০ হাজার সভ্য ও পোষ্যদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার রামপুর সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির মালিকাধিন ২৫০একর চিংড়িঘেরের দখল বুঝিয়ে দিতে উচ্চ আদালতের দুই সপ্তাহের আদেশের প্রেক্ষিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের আদেশ থাকলেও তা মানছে না কক্সবাজার আঞ্চলিক মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এমনকি সমিতির ১০ হাজার সদস্যের মালিকানাধীন এ সম্পদ উদ্ধারে উচ্চ আদালত ও জেলা প্রশাসকের যত আদেশ জারি করা হয়, তার বদলে ততবার উচ্ছেদে নামে মৎস্য বিভাগের লোকজন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৫মার্চ) রাতে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা ভাড়াটে লোক জড়ো করে রামপুর সমিতির একাধিক সদস্যকে চিংড়িঘের থেকে হুমকির মুখে উচ্ছেদ করে দিয়েছেন। ভাংচুর করেছে বেশ কটি খামারঘর।

অভিযোগে সমিতির সদস্যরা জানান, দীর্ঘদিন দিন ধরে উপজেলার রামপুর মৌজার আরএস ১০৮৪, বিএস ২০২৯ দাগের ২৫০একর চিংড়িঘেরটি পর্যায়ক্রমে সমিতির সদস্যরা শান্তিপূর্নভাবে ভোগদখল করে আসছিলেন। কিন্ত মৎস্য বিভাগের জেলা ও উপজেলা পযার্য়ের কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসি’র অবৈধ হস্তক্ষেপে সমিতির সদস্যদের উচ্ছেদ করার চেষ্ঠা করা হয়। যদিও সেখানে সমিতির দাবিকৃত জমির বিভিন্ন বেড়িবাঁেধর উপর অস্থায়ী খামার নির্মাণ করে সদস্যরা চিংড়িঘেরের রক্ষনাবেক্ষন করে আসছেন।

জানা গেছে, আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৭ জুলাই সমিতির সদস্যরা তাদের দখলীয় চিংড়িঘেরটি বুঝে নিতে গেলে ওইসময় রামপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের নেতৃত্বে পুলিশ ও মৎস্য বিভাগের লোকজন বাধা দেয়। ওইদিন সমিতির সভাপতি হাইর্কোটের (পিটিশন নং ১০৯৬২/১২ এর ১২-০৮-২০১২ ইং স্ট্যটাস-কু) ১২-০১-২০১৭ ইং আদেশ কনটেম্প পিটিশনমূলে (পিটিশন নং ২৬১/২০১৭) এর ০৬/০৬-২০১৭ ইং নিষেধাজ্ঞার আদেশের কপি উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের হাতে দিলেই তাঁরা তা ছিড়ে ফেলে দেয়। উল্টো মৎস্য কর্মকর্তার নির্দেশে পুলিশ সমিতির সদস্যদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন।

এরপর ঘটনাটি উচ্চ আদালতকে অবহিত করা হলে একই আদালত কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে এব্যাপারে বক্তব্য দেয়ার জন্য স্বশরীরে আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেন। তৎপ্রেক্ষিতে ১৭ সালের ২৫ জুলাই জেলা প্রশাসক মো.আলী হোসেন আদালতে উপস্থিত হয়ে তার বক্তব্য ও লিখিত জবাব দেন। এরই আলোকে আদালত ১৭ সালের ৩১ অক্টোবর নতুন আদেশ দেন। যাতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে বলা হয় দুই সপ্তাহের মধ্যে সমিতির ওই সম্পদ বুঝে দেয়ার ব্যবস্থা নেবেন। এরপর জেলা প্রশাসক ১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর জেলা মৎস্য বিভাগ, চকরিয়ার ইউএনও, সহকারি কমিশনার ভুমি ও থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে এব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ প্রদান করেন।

সমিতির সভাপতি আবু জাফর জানান, উচ্চ আদালতের আদেশ মতে জেলা প্রশাসক আমাদের সম্পদ আমাদেরকে দখল বুঝে দেয়ার নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর না করার কারনে ২০১৮ সালের ৬ মার্চ জেলা প্রশাসক পুনরায় বিষয়টির আলোকে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। কিন্তু নির্দেশনা আদেশ কার্যকর হওয়ার আগেই সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) রাতে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা ভাড়াটে লোক জড়ো করে রামপুর সমিতির একাধিক সদস্যকে চিংড়িঘের থেকে হুমকির মুখে উচ্ছেদ করে দিয়েছেন। এ ঘটনার পর থেকে সমিতির সভ্য ও পোষ্যদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সমিতির কর্মকর্তারা জানান, এ ঘটনায় তাঁরা আবারও উচ্চ আদালতে আইনের আশ্রয় নেয়ার সিদ্বান্ত নিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: