ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

মাতামুহুরীর ভাঙন রোধে বসানো হচ্ছে ৬০ হাজার ব্লক পাউবোর ৫ কোটি টাকার প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

কক্সবাজারের চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ৬০ হাজার সিসি ব্লক বসানোর কাজ চলছে। এতে আশা করা যাচ্ছে, আগামী বর্ষা মৌসুমে চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ও পেকুয়া উপজেলার মেহেরনামার বাঘগুজারা রাবার ড্যাম সংলগ্ন নদীতীরের ভাঙন ঠেকানো যাবে। দীর্ঘদিন পরে হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কাজ দৃশ্যমান হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর অব্যাহত ভাঙন ঠেকাতে এবার পানি উন্নয়ন বোর্ড সমীক্ষার মাধ্যমে ৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে একটি টেকসই প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। দরপত্র আহবানের পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স শহীদ ব্রাদার্সকে কার্যাদেশ দেওয়ার মাধ্যমে চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের বাঘগুজারা রাবার ড্যাম পয়েন্টের তিনশত মিটার এবং পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের মেহেরনামা অংশের একশত মিটার এলাকাজুড়ে মাতামুহুরী নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয় কয়েকমাস আগে। বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে প্রকল্পের আওতায় চলমান উন্নয়ন কাজে নদীর ভাঙন ঠেকাতে বসানো হচ্ছে ৬০ হাজার সিসি ব্লক।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গেল তিনমাসে পাউবোর প্রকৌশলীদের উপস্থিতিতে কাজের গুণগত মান বজায় রেখে ইতোমধ্যে ৩০ হাজারের মতো ব্লক তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। আগামী মাসে শেষ হবে অবশিষ্ট ব্লক তৈরির কাজ। আর আগামী এপ্রিল মাসে নদীর তীর সংরক্ষণ কাজে নির্মিত এসব ব্লক ডাম্পিং (বসানো) হবে।

মাতামুহুরী নদীর অব্যাহত ভাঙনের মুখে ভিটে–বাড়ি ও ফসলি জমি হারা ভুক্তভোগী মানুষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কক্সবাজার–১ (চকরিয়া–পেকুয়া) আসনের এমপি হাজি মোহাম্মদ ইলিয়াছের সার্বিক প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিন পর হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে নদীর ভাঙনরোধে টেকসই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হতে যাওয়ায় দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। এমনই তথ্য জানিয়েছেন বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদারসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তারা জানান, মাতামুহুরী নদীর ভাঙন ঠেকাতে তীর সংরক্ষণ কাজে সিসি ব্লক বসানোর কারণে জনগণের সম্পদ রক্ষা করা যাবে। একই সাথে প্রতিবছর বর্ষাকালে বন্যার তাণ্ডব থেকে দুর্ভোগমুক্তও থাকতে পারবে জনগণ। নদী ভাঙনের ভুক্তভোগী লোকজন জানান, প্রতিবছর বর্ষাকালে মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির প্রবল ধাক্কায় নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়।

এই অবস্থায় চকরিয়া উপজেলার একাধিক এলাকায় শত শত জনবসতি, আবাদি জমি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং বিপুল পরিমাণ গ্রামীণ রাস্তা–ঘাট নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মো. রাকিবুল হাসান বলেন, ‘প্রায় ৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে মাতামুহুরী নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের পহরচাঁদা গোবিন্দপুরে (বাঘগুজারা রাবার ড্যাম পয়েন্টে) তিনশত মিটার এবং পেকুয়া উপজেলার মেহেরনামা অংশে একশত মিটার এলাকায় ৬০ হাজার সিসি ব্লক দিয়ে মাতামুহুরী নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ চলছে।’

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে গত তিনমাসে প্রায় ৩০ হাজারের মতো ব্লক তৈরি করা হয়েছে। আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে অবশিষ্ট ব্লকও তৈরির কাজ শেষ হতে পারে। এতে আশা করা যাচ্ছে আগামী এপ্রিল মাসে তীর সংরক্ষণে তৈরি করা ব্লক ডাম্পিং (বসানো) করা সম্ভব হবে।’

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হয়ে চলমান উন্নয়ন কাজের তদারকি করছেন বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এটিএম জিয়াউদ্দিন চৌধুরী জিয়া। তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি যেহেতু আমার এলাকায়, সেহেতু কাজটির গুণগত মান যাতে বজায় থাকে এবং টেকসইভাবে কাজ সম্পন্ন করা যায় সেজন্য আমি নিয়মিত তদারকি করছি। কার্যাদেশ অনুযারী তীর সংরক্ষণ কাজে পাঁচশত মিটার এলাকায় ৬০ হাজার সিসি ব্লক বসানো হবে।’

তিনি আরও বলেন, স্থানীয় জনগণের সম্পদের সুরক্ষায় এবং বন্যার তাণ্ডব থেকে এলাকার জনসাধারণকে রক্ষা করতে প্রকল্পটি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাপ্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আশা করি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়ে গেলে চকরিয়া–পেকুয়া উপজেলার অন্তত লক্ষাধিক জনসাধারণ এই কাজের সুফল ভোগ করবে।’

পাঠকের মতামত: