ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় দুইশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই স্বাধীনতার প্রতীক শহীদ মিনার

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া::

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় সাতটি কলেজ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৪১টি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ৫২টি। এছাড়া রেজিষ্ট্রাট প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসাসহ সবমিলিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্টান রয়েছে অন্তত আড়াই শতাধিক। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলায় বিপুল পরিমাণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও অন্তত দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। ফলে শিক্ষার্থীসহ আশপাশ এলাকার নানা শ্রেণী-পেশার নাগরিকরা জাতীয় দিবস গুলোতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।

১৯৫২সালের ভাষা আন্দোলন ও তার পরবর্তী ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর প্রায় পাচঁ দশকেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও স্বাধীন বাংলাদেশের সম্পদ সম্পৃদ্ধ এ উপজেলায় এখনো বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্টানে স্থাপন করা হয়নি স্বাধীনতার অন্যতম সÍৃতির নির্দশন শহীদ মিনার। এ অবস্থার কারনে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা দেশ মাতৃকার টানে ভাষা দিবস, স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ সকল বীর সেনানীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ জাতীয় দিবস গুলো পালনে যথাযথভাবে সুযোগ পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার আটার ইউনিয়ন ও এক পৌরসভা এলাকায় প্রায় পাঁচ লাখেরও বেশি জনগনের বসবাস। তথ্য প্রযুক্তির অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সারাদেশের মতো চকরিয়া উপজেলাও এখন প্রযুক্তিখাতে অনেকদুর এগিয়ে গেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন হয়েছে গত দুই দশকে। অর্থনৈতিক খাতে অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে এ উপজেলা। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি সাধন হয়েছে আগের চেয়ে বহুগুন।

সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্থরের সরকারী বেসরকারী মিলিয়ে প্রায় আড়াই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্টান গড়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্টিত হয়েছে একটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ ৭টি কলেজ। এসব শিক্ষা প্রতিষ্টানে অন্তত লক্ষাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়ায় ব্যস্ত রয়েছে প্রতিদিন। সবকিছুতেই সম্ভাবনাময় চকরিয়া উপজেলা এগিয়ে থাকলেও শুধুমাত্র পিছিয়ে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্টানে শহীদ মিনার স্থাপনের কাজে।

জানা জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ এলাকায় একটি ও বিদ্যাপীঠ স্কুলের সামনে একটি শহীদ থাকলেও উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায় এখনো নির্মান করা হয়নি শহীদ মিনার। ফলে উপজেলার উপকুলীয় ও দুর্গম এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্টানের শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর জাতীয় দিবস গুলোর গুরুত্বপুর্ণ অনুষ্টান পালনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উপজেলা সদরের এসব শহীদ মিনারের শ্রদ্ধা জানাতে এসে দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

তবে উপজেলার বেশ কটি উচ্চ বিদ্যালয় ও ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে ইতোমধ্যে শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়েছে। সম্প্রতি সময়ে চকরিয়া-পেকুয়া আসনের এমপি হাজি মোহাম্মদ ইলিয়াছ বদরখালী কলেজে একটি ও ইলিশিয়া জমিলা বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি নতুন শহীদ মিনার তৈরী করে দিয়েছেন। অপরদিকে উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের পহরচাঁদা উচ্চ বিদ্যালয়ে কক্সবাজার জেলা পরিষদের অর্থায়নে একটি আধুনিকমানের শহীদ মিনার উপহার দিয়েছেন জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক লায়ন কমরউদ্দিন আহমদ।

চকরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আসলাম খাঁন বলেন, উপজেলার মাধ্যমিকস্থরের কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্টানে জাতীয় দিবসগুলো পালনের জন্য আগে থেকেই শহীদ মিনার নির্মিত আছে। তবে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে নেই। বিষয়টির আলোকে প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ সাপেক্ষে যেসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সেখানে নির্মান করার চেষ্টা করা হবে।

চকরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাজী আবু মো.বশিরুল আলম বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্টান গুলোতে স্বাধীনতার অন্যতম নির্দশন শহীদ মিনার না থাকার ব্যাপারটি জাতির জন্য বড় দুর্ভাগ্য। কারণ মহান ভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে শত্রুমুক্ত করতে পারলেও আমরা এখনো জাতি হিসেবে অনেক পিছিয়ে। তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্টানে শহীদ মিনার থাকলে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা সহজে মহান স্বাধীনতা, ভাষা আন্দোলন, বিজয় দিবস ও জাতীয় শোক দিবসের গুরুত্ব সম্পর্কে ধারনা পেত। #

পাঠকের মতামত: