ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

মিয়ানমারকে ৮০৩২ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনে তালিকা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক

নিউজ ডেস্ক ::

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের কাছে আট হাজার ৩২ রোহিঙ্গার তালিকা হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ। এই তালিকা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ যাচাইয়ের পরই প্রত্যাবাসন শুরু হবে। তবে কোন তারিখ থেকে ফেরত পাঠানো শুরু হবে তা শুক্রবারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকে চূড়ান্ত হয়নি। একই সঙ্গে সীমান্তের জিরো লাইনে অবস্থান করা প্রায় ছয় হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে দু’দেশের সীমান্ত জেলার জেলা প্রশাসকদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকেই তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। এ ছাড়া বৈঠকে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন এবং ইয়াবা চোরাচালান বন্ধের বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তরিকতার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এ আলোচনা থেকে আস্থা পাওয়া গেছে যে তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে।

মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খ শোয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় আসেন। শুক্রবার বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক সূত্র জানায়, শুক্রবারের বৈঠকে নির্ধারিত আলোচ্যসূচি ছিল ছয়টি। এর মধ্যে সবেচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় ইয়াবা চোরাচালান বন্ধ এবং রোহিঙ্গা ইস্যু। বৈঠকের শুরুতেই বাংলাদেশ পক্ষ থেকে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকার কারখানা থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করার তথ্য তুলে ধরা হয়। এ সময় মিয়ানমারের রাখাইনের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত ৪৯টি ইয়াবা কারখানার তালিকাও হস্তান্তর করা হয়। এ সময় মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা তদন্ত করে অবশ্যই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

রোহিঙ্গা ইস্যুর আলোচনায় বাংলাদেশ পক্ষ থেকে সরাসরি প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে দিন-ক্ষণ জানতে চাওয়া হয়। তবে এখনই তা ঠিক করতে রাজি হয়নি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া সীমান্তে দু’দেশের লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন, যৌথ টহল কার্যক্রম জোরদার করা এবং সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে ১ হাজার ৬৭৩টি রোহিঙ্গা পরিবারের প্রথম আট হাজার ৩২ জনের তালিকা মিয়ানমারকে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশে অবস্থান করা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার নিবন্ধন রয়েছে। এর ভিত্তিতে এখন পরিবারকে ইউনিট ধরে প্রত্যাবাসনের জন্য চূড়ান্ত তালিকা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর যে আন্তরিকতা দেখা গেছে, তাতে আস্থা জন্মেছে যে দ্রুতই প্রত্যাবাসন শুরু হবে।

মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তালিকা গ্রহণ করে জানান, তারা এই তালিকা যাচাই-বাছাই করে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করবেন। মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য সুনির্দিষ্ট কোন তারিখ উল্লেখ করেননি।

আসাদুজ্জামান খান জানান, বৈঠকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের জিরো লাইনে প্রায় ছয় হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন তাদের দ্রুত মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারেও আলোচনা হয়। জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তৃতায় পাঁচ দফা রোডম্যাপের বিষয়টি উল্লেখ করে কফি আনান কমিশসের সুপারিশ অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করে সংকটের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করারও আহবান জানানো হয়েছে বৈঠকে। মিয়ামারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ব্যাপারেও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: