ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

সংসদে শিক্ষামন্ত্রীর অপসারণ দাবি

বাংলাট্রিবিউন :   প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করতে না পারা ও সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ নিতে ‘উৎসাহিত’ করার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের অপসারণের দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে। সোমবার পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে এ দাবি জানান। তার এই দাবির পর সংসদের বৈঠকে সভাপতির দায়িত্বে থাকা ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী এই দাবি শুনেছেন, তিনি তার বিবেচনায় যেটুকু করা প্রয়োজন, জাতির স্বার্থে অবশ্যই তা করবেন।’

সোমবার সংসদে আইন প্রণয়ন কার্যক্রম শেষে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা নিয়ে কথা বলেন জাতীয় পার্টির এমপি জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন পত্রিকায় দেখি, প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর। প্রশ্নপত্র ফাঁস মহামারী আকারে বিস্তার লাভ করছে। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে রবিবার বলা হয়েছিল, প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীকে ধরিয়ে দিলে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। এরপর আজকেই (সোমবার) ‘তুষার শুভ্র’ নামের একটি ফেসবুক আইডিতে বলা হয়েছে, তাদের কাছে প্রশ্নপত্র রয়েছে। এটা নিতে হলে এত টাকা দিতে হবে। বিষয়টি পত্রিকায়ও এসেছে। তাহলে এটা কেন হচ্ছে?’

জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমাদের অনেক উন্নতি হয়েছে। অনেক অর্জনও হয়েছে। কিন্তু আগামী প্রজন্মকে আমরা সত্যিকার শিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পেরে কেবল সনদ দেওয়ার জন্য শিক্ষিত করি, তা হবে অর্থহীন। এই সনদধারী শিক্ষার্থীরা কিছুই পারবেন না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী প্রজন্মকে দিয়ে জিডিটাল বাংলাদেশ গড়তে চাই। নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাখ-লাখ শিক্ষার্থী বেরিয়ে আসছে, চাকরি পাচ্ছে না। এসব চাকরি-প্রার্থীরা বাংলা ও ইংরেজিতে চাকরির দরখাস্তও লিখতে পারে না। গোল্ডেন জিপিএ-প্রাপ্তরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না। শিক্ষার গুণগত মান অর্জন করতে পারছি না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাড়ছে। ছাত্ররা গোল্ডেন জিপিএ পেয়ে বেরিয়ে আসছে কিন্তু কিছুই পারে না। তারা বাংলা লিখতে পারে না, ইংরেজিও না। এই যদি পরিস্থিতি হয়, তাহলে আমরা কার কাছে দেশটি রেখে যাবো? প্রধানমন্ত্রী বা অন্যদের জায়গায় যারা আসবেন, তারা তো শিক্ষিত জনগোষ্ঠী হতে হবে।’

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়া উদ্দিন বাবলু বলেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী কয়েকদিন আগে কর্মকর্তাদের বৈঠকে বলেছেন, ‘আপনারা ঘুষ খান, তবে সহনীয় পর্যায় খাবেন। আমিও ঘুষ খাই, অনেক মন্ত্রী ঘুষ খায়।‘ এটা বলার পরে উনি আর মন্ত্রী থাকতে পারেন? তিনি তো ঘুষকে উৎসাহিত করছেন। এই কথা যখন ছাত্ররা শুনবেন, মন্ত্রী ঘুষ খাওয়ার কথা বলছেন, তখন? যখন মন্ত্রী ঘুষের কথা বলেন, তখন তার কথা তো আর কেউ শুনবেন না। তার সচিব শুনবেন না, কেউ শুনবে না। তাহলে কী করে কঠোরভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করবেন, তা বোধগম্য নয়। তার একথা বলার পর ওই দিনই শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত ছিল।’’

বিরোধী দলীয় এই এমপি বলেন, ‘আমি দাবি করছি, অবিলম্বে শিক্ষামন্ত্রী তার ব্যর্থতা, দুর্নীতি, অনিয়মের দায় স্বীকার করে নিয়ে পদত্যাগ করুন। না হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি, তাকে বরখাস্ত করে শিক্ষাখাতের উন্নতির জন্য গুণগুতমান বৃদ্ধি কতে আপনি নতুন মন্ত্রী নিয়োগ করুন। আমি আশা করবো, প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।’

পাঠকের মতামত: