ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

মাতামুহুরী সেতুতে বালির বস্তা, পাটাতনে আর কতদিন?

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক : দ্বিতীয় মাতামুহুরী সেতু নির্মাণের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার চিরিঙ্গা মাতামুহুরী সেতু। তিন বছর আগে সেতুটি ধসে পড়ার উপক্রম হয়। তখন ধস ঠেকানোর অংশ হিসেবে নিচে বালিভর্তি বস্তার ঠেস এবং উপরে লোহার পাটাতন দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন চলে হাজারো ভারী যানবাহন। ফলে এটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এলাকাবাসীর প্রশ্ন, এভাবে কতদিন সেতুটি সচল রাখা যাবে? দিন যত গড়াচ্ছে, ততই এই সেতু ব্যবহারকারীদের ঝুঁকি বাড়ছে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগে বর্তমান সেতুটির পাশে দ্বিতীয় মাতামুহুরী সেতু নির্মাণ করার দাবি জানান তারা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমান সরকার কক্সবাজারকে নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখছে। এই অংশ হিসেবে অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো বড় ধরনের কর্মযজ্ঞ শুরু হবে। সরকারের এসব মেগা প্রকল্প ঘিরে দেশি–বিদেশি পর্যটকদের আসা–যাওয়া বেড়েছে। যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক। শুধু তাই নয়, পর্যটন খাতের ব্যবসার প্রায় পুরোটা নির্ভরশীল এই মহাসড়ক। এ কারণে মাতামুহুরী সেতুটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। সেতুটি ধসে পড়লে বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় কক্সবাজারের সাথে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হবে।

সেতুটির দুরবস্থার কারণে এলাকাবাসীর মাঝেও ক্ষোভ বাড়ছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশসহ (টিআইবি) বিভিন্ন সংগঠন দ্বিতীয় সেতু বাস্তবায়নের দাবিতে মাববন্ধন করেছে। বিভিন্ন সংগঠনের মানববন্ধনে উপস্থিত থেকে একাত্মতা প্রকাশ করে কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, সব শ্রেণি–পেশার মানুষের গণ দাবি, মাতামুহুরী নদীর উপর দ্রুত দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ করা। সেটি এখনই করা সম্ভব হবে না। নির্মাণ করতে কিছুটা সময় লাগছে। সেজন্য সেতুর মেরামত কাজ হতে হবে দৃশ্যমান ও দ্রুত। শুধু বালির বস্তা দিয়ে নদীর প্রবল স্রোত কখনো ঠেকানো যাবে না। লোহার পাটাতন দিয়ে প্রতিদিন হাজারো ভারী যানবাহনের প্রবল চাপও সামাল দেওয়া যাবে না। তাই দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে ভালো করে মেরামত করতে হবে। তা না হলে দুর্ঘটনায় আশঙ্কা থেকে যাবে।

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক ও সেতু সচল রাখার দায়িত্ব সরকারি সংস্থা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের। দ্বিতীয় মাতামুহুরী সেতু নির্মাণের দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন সোচ্চার হয়েছে। এই অবস্থায় সওজ কী করছে? এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রানাপ্রিয় বড়ুয়া বলেন, আমজনতা কী বলছে বা করছে সেটি নিয়ে আমাদের হেডেক (মাথাব্যথা) নেই। আমরা আমাদের মতো কাজ করছি। ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘রেট্রোফিটিং’ ডিজাইন অনুযায়ী ২০ জানুয়ারি থেকে এই প্রকল্পের জন্য নিয়োজিত ঠিকাদার মেজবাহ অ্যাসোসিয়েটস এখন সেতুর নিচে কাজ করছে। পরবর্তী ছয় মাস অর্থাৎ আগামী জুন মাসে এই কাজ শেষ হবে।

তিনি জানান, রেট্রোফিটিং ডিজাইনে কী পরিমাণ গাড়ি চলাচল করে, সে অনুযায়ী দুর্বল পিলারগুলো মেরামত করা হবে, স্টিল পাইপ দিয়ে ঝুঁকি কমানো হবে। এরপর আমরা সেতুর উপরে থাকা ভাঙা অংশের মেরামত কাজ করব। সেখানে ্যাব বসিয়ে বিদ্যমান সেতুর মতোই সমান করে দেওয়া হবে।

নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, আমরা সীমিত সময়ের জন্য এই মেরামত কাজটি করছি। অর্থাৎ নতুন চার লেন সেতুর নির্মাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত এভাবে সচল রাখার চেষ্টা করব।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে একাধিক জনসভায় সেই প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু চার লেন সড়কের অর্থায়ন এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ কারণে চার লেনের আগেই চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের চারটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সীমান্ত বাণিজ্য সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে চার লেন বিশিষ্ট সেতুগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুগুলো হচ্ছে চকরিয়া মাতামুহুরী সেতু, দোহাজারী সাঙ্গু সেতু, চন্দনাইশের বরগুনি সেতু ও পটিয়ার ইন্দ্রপুল সেতু। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো–অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ৩০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুগুলো নির্মাণ করবে। ক্রস বর্ডার ইমপ্রুভমেন্ট নেটওয়ার্কের আওতায় সেগুলো নির্মিত হবে।

সেতুগুলোর সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে চার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ডিপিএম (ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার) সৈয়দা তানজিমা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, সেতুগুলোর স্থান নির্বাচন, মাটি পরীক্ষা, ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে। অর্থায়নও চূড়ান্ত হয়েছে। গত সপ্তাহে সেতু নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। মার্চে দরপত্র খোলার পর মূল্যায়ন এবং এপ্রিল নাগাদ ঠিকাদার চূড়ান্ত হবে। এরপর সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। আর এসব সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হতে সময় লাগবে তিন বছর।

দ্বিতীয় মাতামুহুরী সেতু নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন

‘ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত সেতুর বারবার সংস্কার নয়, চাই নতুন দ্বিতীয় মাতামুহুরী সেতু’। এই দাবিতে গত ৩১ জানুয়ারি সচেতন নাগরিক কমিটি সনাক–টিআইবি, স্বচ্ছতার জন্য নাগরিকের (স্বজন) আহ্বানে সাড়া দিয়ে চকরিয়ার সকল শ্রেণি–পেশার মানুষ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে। চকরিয়া পৌরশহর চিরিঙ্গা নিউ মার্কেটের সামনে মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সনাক চকরিয়ার সভাপতি অধ্যাপক একেএম শাহাবুদ্দিন। একাত্মতা ঘোষণা করে বক্তব্য দেন কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম লিটু, সনাক সদস্য মোহব্বত চৌধুরী, চকরিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবদুল মজিদ, স্বজন সমন্বয়ক এ ইউ এম শহীদুল্লাহ, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি প্রতিনিধি মঈনুল ইসলাম বাবুল ও টিআইবির এরিয়া ম্যানেজার এ জি এম জাহাঙ্গীর আলম।

সনাক চকরিয়ার সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম শাহাবুদ্দিন বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে মাতামুহুরী সেতু নির্মাণের দৃশ্যমান কিছু না দেখলে প্রয়োজনে সেতুমন্ত্রীসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করব।

পাঠকের মতামত: