ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিস ভোগান্তির শেষ নেই, দালাল ছাড়া মেলে না পাসপোর্ট

চট্রগ্রাম প্রতিনিধি ::

পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গ্রাহক ভোগান্তির শেষ নেই। দালাল ছাড়া মেলে না বেশির ভাগ পাসপোর্ট। ভুক্তভোগী বোয়ালখালীর বাসিন্দা রেহেনা আকতার জানান, তাঁর স্বামী প্রবাসী। আড়াই বছরের অসুস্থ শিশুকে বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজনে গত ১১ ডিসেম্বর পাসপোর্টের জন্য আবেদন জমা দেন তিনি। পাসপোর্টটি সরবরাহের কথা ছিল গেল ১ জানুয়ারি। কিন্তু ওই তারিখে বোয়ালখালী থেকে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ সারিতে দাঁড়িয়ে জানতে পারেন পাসপোর্টটি আসেনি। এর সপ্তাহখানেক পর আবারও পাসপোর্ট সংগ্রহে গিয়ে ব্যর্থ হন। পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মচারীর পরামর্শে যোগাযোগ করেন স্থানীয় থানায়। সেখানে গিয়ে জানা গেল, এ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র তাঁরা পাননি। ১৫ জানুয়ারি পুনরায় পাসপোর্ট অফিসে ধর্না দিয়েও এর কোনো সদুত্তর পাননি তিনি। অথচ একই সময়ে দালালের মাধ্যমে জমা দেওয়া রেহানার এক আত্মীয় তাঁর পাসপোর্ট পেয়ে গেছেন যথাসময়ে!

জানতে চাইলে গৃহবধূ রেহেনা বলেন, ‘এখনো জানি না, অসুস্থ ছেলের পাসপোর্টটি কখন পাব, কিংবা আদৌ পাব কিনা!’

আরেক ভুক্তভোগী নগরীর মিয়াখাননগর এলাকার রওশন আরা। জানালেন, পর পর তিনদিন পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর আবেদন জমা দিতে পারেননি। আবেদনপত্রে নানা ভুলত্রুটি ধরে সংশ্লিষ্টরা তাঁকে প্রতিবারই ফিরিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘পরে জানতে পেরেছি, দালাল না ধরার কারণে আমাকে এভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। তাই দালালের দ্বারস্থ হয়েছি।’

পাসপোর্ট করতে আসা জাহেদ নামে এক ব্যক্তির অভিযোগ, তাঁর আবেদন ফরমে ‘ভুল’ থাকার অজুহাতে সংশ্লিষ্টরা তাঁর ফরম জমা নেননি। পরে অবশ্য এক দালালের শরণাপন্ন হলে ওই দালাল আবেদন ফরমে একটি চিহ্ন দেন। চিহ্নটি দেখেই আবেদনটি গ্রহণ করা হয়।

সাম্প্রতিককালে ওই পাসপোর্ট অফিস ‘দালাল ও হয়রানিমুক্ত’ বলে প্রচার চালানো হলেও বাস্তবচিত্র ঠিক উল্টো। দালালচক্র বরাবরই সক্রিয় রয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিস ঘিরে দালাল, কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য এবং ওই অফিসের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংঘবদ্ধ চক্র রয়েছে। পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাজে আসা প্রতিদিন দূর-দূরান্তের শত শত মানুষকে পড়তে হয় এ চক্রের খপ্পরে। অফিসের আশপাশ, কিংবা পাঁচলাইশ সোনালী ব্যাংকে গিজ গিজ করে দালাল। কেউ পাসপোর্টের আবেদন কিংবা টাকা জমা দিতে এলেই ঘিরে ধরে ওরা। খুব সহজে কিংবা একেবারেই কম সময়ে পাসপোর্ট পাইয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে সরকারি নির্দিষ্ট অঙ্কের চেয়ে ২/৩ গুণ বেশি টাকার চুক্তিতে দায়িত্বটি ওরাই নিয়ে নেয়। আর যাঁরা দালালদের পাশ কাটিয়ে নিজেরাই আবেদন ফরম জমা দিতে যান, তাঁদের আবেদনটি সঠিক থাকলেও ত্রুটির অজুহাত দেখিয়ে তা ফেরত দেওয়া হয়। তাই বাধ্য হয়ে দালালদের কাছে ধর্না দিতে হয় আবেদনকারীদের। দালালরা একটি বিশেষ চিহ্ন দেয়, এ চিহ্ন দেওয়া আবেদনপত্র দেখলেই তা গ্রহণ করা হয় দ্রুত। যথাসময়ে মেলে পাসপোর্টও। মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরব হয়। দালালদের ২/১ জনকে আটক করা হয়। পরে অবশ্য এরা ছাড়াও পেয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণ পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ৩ হাজার ৪৫০ টাকা, সরকারি ফি হলেও দালালরা নিয়ে থাকে সাড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে নেওয়া হয় অতিরিক্ত ১১০০ টাকা। জরুরি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে সরকারি ফি ৬ হাজার ৯০০ টাকা হলেও দালালরা ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা নেয়। অনেকে বলেছেন, সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হতে হয় পুলিশ প্রতিবেদনের জন্য। এ হয়রানির কারণে পাসপোর্ট পেতে বিলম্বও ঘটে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পুলিশের বক্তব্য হচ্ছে, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা একই হলে প্রতিবেদন দ্রুত পাওয়া যায়। আর ঠিকানা দুটি হলে পুলিশ প্রতিবেদন পেতে সময় লাগে।

তবে পাঁচলাইশ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘গত অক্টোবরে আমি এখানে যোগদান করলাম। এরই মধ্যে অনেক কিছুতেই পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি। দালাল ও হয়রানিমুক্ত করার লক্ষ্যে পুরো ভবন সিসি ক্যামরার আওতায় এনেছি। ব্রেস্ট ফিডিংয়ের জন্য মহিলা কর্নার, অসুস্থদের জন্য হুইল চেয়ার, নামাজ ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সুব্যবস্থাসহ এলাকাটি সবুজায়নের ব্যবস্থা করেছি। এখানে আগতদের কীভাবে আরো বেশি করে সেবা দেওয়া যায় তা নিয়েই কাজ করছি।’

পাঠকের মতামত: