ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোচাষাবাদ শুরু হয়েছে

চকরিয়া প্রতিনিধি ::

কক্সবাজারে চকরিয়ায় পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে বোরো চাষাবাদ। চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে রোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সঠিক সময়ে বোরোচাষাবাদ সম্পন্ন করার জন্য দুই মাস পূর্বে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে বীজতলা রোপণ করা হয়। ওই বীজতলা থেকে কৃষকেরা চারা সংগ্রহ করে জানুয়ারী মাসের শুরুতেই রোপন কাজ শুরু করে দিয়েছে। ফেব্রুয়ারী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত বোরো আবাদি জমিতে রোপণ কাজ সম্পন্ন হবে বলে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা  কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে  থাকার কারণে উপজেলার প্রায় ৪৫ হাজার কৃষক আগাম বোরো চাষে মাঠে নেমেছে। এবছর উপজেলায় ১৯ হাজার ১৫০ হেক্টর (৪৭ হাজার ৮৭৫ একর) জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জানুয়ারি মাসের শুারুতে উপজেলায় বোরো চাষের শুভ সূচনা হয়। নির্দিষ্ট সময়ে বোরো চাষ সম্পন্ন করতে তিন মাস পূর্বে প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে বীজতলার রোপণ কাজ ও করা হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, অতীতের মতো চলতি মৌসুমেও কৃষি বিভাগের দিকনির্দেশনায় কৃষকরা গুটি ইউরিয়া ও এলসিসি পদ্ধতি অনুসরণ করে বোরো চাষ শুরু করেছেন। এ পদ্ধতিতে চাষ করে কৃষকরা প্রতিবছর ভাল লাভবান হচ্ছে। বোরো চাষে বেশির ভাগ বীজতলা হাইব্রিট  ও উপশী জাতের। তবে আংশিক পরিমাণ রয়েছে দেশীয়(স্থানীয়) জাতের ধানের বীজতলা।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো.আতিক উল্লাহ বলেন, মাঠ পর্যায়ে কর্মরত উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মনিটরিংয়ের মাধ্যমে নভেম্বর মাস থেকে উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায় বীজতলা রোপণ ও চাষের জমি তৈরি করে কৃষকরা। এরপর জানুয়ারি মাসের শুরুতে একযোগে উপজেলার লক্ষ্যারচর, কাকারা, ফাসিয়াখালী, কৈয়ারবিল, সুরাজপুর-মানিকপুর, বমু বিলছড়ি, হারবাং, বরইতলী, সাহারবিল, পুর্ববড় ভেওলা, বদরখালী, খুটাখালী, ডুলাহাজারা, ঢেমুশিয়া, কোণাখালী, পশ্চিম বড় ভেওলা, বিএমচর, চিরিঙ্গা ও পৌরসভা এলাকার ৫৫টি ব্লকের অধীন ১৯ হাজার ১৫০ হেক্টর চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বোরো আবাদ শুরু করা হয়। তৎমধ্যে হাইব্রিড জাতের ৭হাজার হেক্টর, উপষী(উচ্চ ফলনশীল) জাতের ১২ হাজার হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ১০০ হেক্টর রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে রোপন কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার একর জমির বীজতলা থেকে ইতিমধ্যে ধানের চারা সংগ্রহ করে রোপন কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। ফেব্রুয়ারী  মাসের মধ্যে অবশিষ্ট জমিতে রোপন শেষ করে চাষাবাদ নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি বর্গাচাষী সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন পুতু জানিয়েছেন, মাতামুহুরী নদীতে দুটি স্থায়ী রাবার ড্যাম নির্মাণের ফলে সেচ সুবিধা নিশ্চিত হওয়ায় প্রতিবছর উপজেলায় বোরো ও আমন চাষের পরিধি বাড়ছে। নদীতে নির্মিত দুটি রাবার ড্যামের কারনে উপজেলার কৃষকরা চাষাবাদের দিকে ঝুকছে বেশী। যার কারনে কৃষির উৎপাদন অনেকাংশে বেড়ে গেছে ও কৃষকরা অনেকদূর এগিয়ে গেছে।এতে তাদের মধ্যে ফিরেছ আর্থিক সচ্ছলতা। তিনি আরো বলেন, চলতি মাসের শুরু থেকে মৌসুমের বোরো চাষ শুরু হলেও আগামী মাস থেকে পর্যাপ্ত সারের প্রয়োজন হবে কৃষকদের। তাই কৃষকদের মাঝে সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি চকরিয়া উপজেলার জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত সার যাতে পাশের উপজেলায় তামাক ক্ষেতে চলে যেতে না পারে সেজন্য সজাগ দৃষ্টি রাখতে করতে হবে।
উপজেলার হারবাং গয়ালমারা এলাকার কৃষক ও স্বর্ণালী ধানবীজের স্বত্তাধিকারী আসহাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন চলতি মওসূমে তার ১০ একর নিজস্ব জমিতে বি, আর-২৬, ২৮, ৫৫, ৬২ হাইব্রিড সহ বিভিন্ন জাতের বোরো চাষ করেছেন। যদি শেষ সময় পর্যন্ত আবহাওয়া ভাল থাকে তাহলে প্রতি হেক্টরে বি, আর-২৬ এ ৫ মে:টন, ২৮ এ সাড়ে ৬ মে;টন, ৫৫ এ ৭ মে:টন, ও ৬২ এ সাড়ে পাঁচ মে:টন ফলন আশা করা যায়।

 

পাঠকের মতামত: