ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

নাইক্ষ্যংছড়ির সন্ত্রাসীদের গোপন বৈঠকে বিজিবির হানা: সরঞ্জামসহ আটক ৬ ত্রিপুরা উপজাতি

মাঈনুদ্দিন খালেদ, নাইক্ষ্যংছড়ি :
পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের আনা-গোনা ও গোপন তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে আশংকাজনকহারে। বিশেষ করে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দূর্গম পাহাড়ি পল্লী গুলোতে এ তৎপরতায় অতিষ্ট হয়ে মানুষ যখন হতাশায় হাবুডুবু খাচ্ছিল,ঠিক তখনি নাইক্ষ্যংছড়িস্থ ৩১ অধিনায়কের নির্দেশে বিজিবি অভিযানে নামে এ সব চাদাঁবাজ ও অস্ত্রধারীদের শায়েস্তা করতে। তারই ধারাবাহিততায় শুক্রবার বিকেলে উপজেলার ২৮ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে ভাইচাং ত্রিপুরা পাড়ায় গোপন বৈঠক করার সময় ৬ ত্রিপুরাকে আটক করে। বহিরাগত এ সব লোক পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের সদস্য বলে ধারণা করছেন আইন-শৃংখলা বাহিনী। জিজ্ঞাসাবাদে তারা নিজেদের জেএসএসের সদস্য বলে স্বীকার করেন আইন-শৃংখলা বাহিনীকে।
প্রত্যক্ষদর্শী একধিক সূত্র জানান,বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড়ি এলাকা গুলোতে পাহাড়ি ও বাঙ্গালী একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ তৎপর রয়েছে খুন, চাঁদাবাজিঁ ও অপহরণ কাজে। তাদের সাথে মিয়ানমারের প্রশিক্ষিত কিছু সন্ত্রাসীও জড়িত । যাদের মধ্যে রয়েছে সাবেক আরএসও’র ও আরকান আর্মির সহ মিয়ানমার ভিত্তিক সেদেশের বিদ্রোহী গ্রুপের প্রাক্তন কিছু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্যাডার। এদের সাথে যোগ রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির(জেএসএস’র) কিছু সদস্য এবং এলাকার কিছু সন্ত্রাসী। আর এদের যাবতীয় কাজে থানা কোর্ট কাচারিতে দালালী করে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী দলীয় নেতা-কর্মি। তারা আরো জানান, এসব দালাল প্রকৃতির যুবকরা কখনো,দলীয় আবার কখনো নিরীহ কাতারের লোক পরিচয় দিয়ে স্থানীয়ভাবে দায়িত্ব পালনরত আইন-শৃংখলা বাহিনীকে বসে রেখে চাদাঁবাজ, সন্ত্রাসী ও ডাকাতদের সেল্টার দিয়ে যাচ্ছে প্রকাশ্যে। সূত্র মতে, এদের সাথে গোপনে উপজাতি সন্ত্রাসীদের সখ্যতা আরো বেশী। যাতে করে স্থানীয় অপকর্মের আয় ছাড়াও অস্ত্র ব্যবসা,ইয়াবা ব্যবসা ও অন্যান্য সীমান্ত ব্যবসা করতে তাদের পথ সূগম হয়। আর এ ধরনের অপতৎপরতা থাকা উপজাতি ত্রিপুরাদের মধ্যে থেকেই ৬ জনকে আটক করে লেবুছড়ি বিজিবি’র সদস্যরা।
নাইক্ষ্যংছড়িস্থ ৩১ বিজিবি অধিনায়ক ও জোন কমান্ডার লে: কর্ণেল আনোয়ারুল আজিম বলেন,সীমান্তের এ উপজেলাটির পাহাড়ি পল্লীতে দীর্ঘদিন থেকে সন্ত্রাসীদের আনা গোনা ছিল। পরিবেশ বুঝে এখনও আসে। তবে দূর্গম ও গহীন বন হওয়ায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর অভিযানে সন্ত্রাসীরা মাঝে-মধ্যে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও অধিকাংশ অভিযানে বিজিবির জালে আটকে পড়ে তারা। গত শুক্রবার বিকেলে অভিযানটিও ছিল তারই একটি। তিনি আরো জানান, আটক ৬ ত্রিপুরা ভাইচাং ত্রিপুরা গ্রামের অভিরাম ত্রিপুরার বাড়িতে দীর্ঘ সময় ধরে গোপন বৈঠক করার খবর পেয়ে বিজিবি অভিযানে নামে। সুবেদার বাকি বিল্লাহ’র নেতৃত্বে ৩০ সদস্যের বিজিবিদলটি এ সময় আটক করে: আব্রাহাম ত্রিপুরা(৪২),অনাচন্দ্র ত্রিপুরা(২৯)মোথিরাম ত্রিপুরা (৪০) গুনমনি ত্রিপুরা (৪৮)মিন্ট চন্দ্র ত্রিপুরা (৪০) ও জয় চন্দ্র ত্রিপুরাকে। তাদের সকলে বাড়ি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা থেকে দেড় শত কিলোমিটার দূরের বান্দরবানের থানছি উপজেলার বাদুনিয়া পাড়ায়্। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মডেলের কয়েকটি দামী মোবাইল সেট,সোনালী ব্যাংকের চেক বই ২টি এবং টর্চ লাইট সহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে জিজ্ঞাসাবাদে। তিনি আরো জানান, আটক ত্রিপুরা সন্ত্রাসীদেরকে কোন নাশকতার জন্যেই এ এলাকায় আনা হয়েছিল বলে ধরণা করছেন তিনি। এবং এ পরিকল্পনা করতেই ছক আকঁছিল তারা। এরই মাঝেই বিজিবি অভিযানে নামে আর এদের আটক করে গতকাল শনিবার ভোর রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় সোপর্দ করে।
এ বিষয়ে দৌছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হাবিবুল্লাহ এ প্রতিবেদককে জানান, পাহাড়ে জেএসএসের সশস্ত্র গ্রুপের সদস্য সহ কয়েকটি বিছিন্ন সংগঠনের নামে নানা অপরাধে লিপ্ত। আটককৃতরা তাদেরই সদস্য। এরা দীর্ঘ দিন ধরে তার এলাকার ত্রিপুরা পাড়া,বাকঁখালী মৌজা, আলিক্ষ্যং মৌজা,কুরিক্ষ্যং মৌজা,বাইশারী মৌজা ও নাইক্ষ্যংছড়ি পাহাড়ি এলাকার জনবসতি, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে খুন, চাদাঁবাজি ও অপহরণ করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। এ অবস্থায় বিজিবির এ অভিযানটি এলাকার পাহাড়ি-বাঙ্গালীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে।
গতকাল শনিবার রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মো: আলমগীর হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, বিজিবি তাদের কাছে ৬ উপজাতি লোককে সোপর্দ করে। তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

পাঠকের মতামত: