ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

লামা বন বিভাগের দেড় হাজার একর রিজার্ভ জবর দখলের অভিযোগ

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, বান্দরবান ::

লামা বন বিভাগের নাইক্ষ্যংছড়ি রেঞ্জের ভাল্লুক খাইয়া মৌজার প্রায় দেড় হাজার একর সরকারি বনভূমি ও বাগান জবর দখলের অভিযোগ উঠেছে। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ বন বিভাগের সরকারি বাগান ও বনভূমি জবর দখলের প্রচেষ্টা করছে বলে বনবিভাগ দাবী করেছে। বিষয়টি নিয়ে উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চলছে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ।

স্থানীয় অধিবাসি ও সামাজিক বনায়নের সুফলভোগীরা জানায়, বান্দরবান জেলা পরিষদ তুলাতলী এলাকায় কাটা তারের বেড়া দিয়ে বনভূমিতে দখল প্রতিষ্টা করতে চাইলে পুলিশ, বিজিবি, আইন শৃংঙ্খলা বাহিনী ও বনকর্মীদের প্রতিরোধের মুখে সম্ভব হয়নি। নাইক্ষ্যংছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা ফরেষ্টার মোবারক হোসেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল আবছার সহ ৩০ জনের নামে বনবিভাগের জায়গা জবর দখল প্রচেষ্টার অভিযোগ এনে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় সাধারণ ডায়রী করেছেন।

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, বান্দরবান জেলা প্রশাসককে পত্র দিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ১৯৯৮ সনের ৩১ মে ১৯২৭ সনের বন আইনের ৪ ধারা মোতাবেক ভাল্লুক খাইয়া মৌজার দাগ নং- ১২,১৭,১৮, ৩৭, ৩৮, ৩১৩, ৩১৪ ও ৩১৫ নং দাগের ১ হাজার ৪৪০ একর জায়গায় বনভূমি গঠনের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করেন। বন বিভাগ সরকারি অর্থায়নে ১ হাজার ৩১৪ একর জায়গায় ১৯৮৫ ইং হইতে ১৯৯০ইং পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন প্রজাতির বাগান সৃজন করে ভোগ দখলে স্থিত আছে। আবার সামাজিক বনায়নের আওতায় ৭৫ একর জায়গায় উপকারভোগী নির্বাচন করে বাগান সৃজন করা হয়েছে। বান্দরবান জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) স্যাটেলম্যান্ট অফিসার হিসাবে গত ১৪ ডিসেম্বর ১৯৯৮ইং সনে বন আইনের ৬ ধারা মোতাবেক নোটিফিকেশন জারি করেন।

গত ১২ জুন ২০১৫ইং সনে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির কাজ চলাকালীন সময়ে বান্দরবান জেলা পরিষদের পক্ষে ভাল্লুক খাইয়া মৌজার হেডম্যান মংশৈ প্রু চৌধুরীর নেতৃত্বে বাগান সৃজনে বাধা প্রদান করলে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় সাধারণ ডায়রী করা হয়। পরে বন বিভাগের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞার মামলা করলে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ পক্ষের উপর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারার বিধান মোতাবেক বনবিভাগের দখলীয় ভূমিতে অবৈধ অনুপ্রবেশে বারিত করা হয়।

ইতিপূর্বে নাইক্ষ্যংছড়ির সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সাফায়েত মো: শহিদুল ইসলাম এক প্রতিবেদনে বান্দরবান জেলা প্রশাসককে জানান, হেডম্যান মংশৈ প্রু চৌধুরী কিছু সংখ্যক ভূমিদস্যুর কু-পরামর্শে বন বিভাগের সৃজিত বাগান, গেজেটভুক্ত ও দখলীয় জায়গা জোর পূর্বক জবর দখল করার পায়তারা করছে।

বর্তমানে একই জায়গায় বান্দরবান জেলা পরিষদ কাটা তারের বেড়া দিয়ে দখল প্রতিষ্টা করতে চাইলে বন বিভাগ বাধা প্রদান করে। আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর বাধার মুখে জেলা পরিষদ কর্তৃক নিয়োজিত শ্রমিকগণ পালিয়ে যায়। নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার আবুল হোসেন জানিয়েছেন, কাটা তারের বেড়া দেওয়ার জন্য নেওয়া ১০০টি পিলার লেমুছড়ি বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা জব্দ করেছে।

মৌজা হেডম্যান মংশৈ প্রু চৌধুরী জানান, হেডম্যানের তৌজিতে বনবিভাগের নামে কোন জায়গা রেকর্ডভুক্ত নাই। ২০১৩ ইং সনে বান্দরবান জেলা পরিষদ ভূমি মালিকদের কাছ থেকে ১ শত একর জায়গা ক্রয় করেছে। জেলা পরিষদ ক্রয়কৃত জায়গা দখল করতে চাইলে বনবিভাগ বাধা প্রদান করছে। বন বিভাগের সাথে বান্দরবান জেলা পরিষদের ভূমি বিরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল আবছার এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, বিরোধীয় জায়গায় আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীর টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: