ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

পেকুয়ায় প্রবাহমান রুপাই খালে বাঁধ দিয়ে চলছে মাছ চাষ! নির্বিকার প্রশাসন

পেকুয়া সংবাদদাতা ::

কক্সবাজারের পেকুয়ায় প্রবহমান রোপাই খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের কোনপাড়া ও বাইন্যা ঘোনা গ্রামের মধ্যবর্তী ‘রোপাই খাল’এর ১৫ একরের মতো খালের মাঝখানে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে স্থানীয় সংঘবদ্ধ প্রভাবশালীরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা সরকারি এ খালটি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে বেশ কয়েকবার লিখিত আবেদন করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজও পর্যন্ত কোন সরকারী রোপাই খাল দখল ঠেকাতে কোন ধরনের কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিনে রোপাই খাল ঘুরে দেখা যায়, রোপাই খালের মাঝ খানে বাঁশের তৈরি বেড়ার বাঁধ দিয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এ অংশের দক্ষিণ আড়াআড়ি করে বাঁশের চালি ঘন করে তার উপর জাল ও পলিথিন দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। উত্তর দিকেও একইভাবে আটকানো হয়েছে। এরপর দখলদারেরা সেখানে নানা জাতের মাছের চাষ করছেন। রুপাই খাল দখলের নেতৃত্বে রয়েছেন পেকুয়া উপজেলা ছাত্র দলের সহ-সভাপতি ও মগনামা ইউনিয়নের বাইন্যা ঘোনা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর পুত্র মো. মিজানুর রহমান।

স্থানীয় এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মাস দুয়েক আগে থেকে এ খালটি দখল করে মাছ চাষ করছেন মগনামা ইউনিয়নের বাইন্যা ঘোনা এলাকার মোহাম্মদ আলী, তাঁর ছেলে পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান, রুকুরুদিয়া গ্রামের হাজী নুরুল আবছারের পুত্র নুরুল আজিম, বাইন্যা ঘোনা গ্রামের মৃত কালুর পুত্র আবদুর রহিমসহ আরো একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি।

স্থানীয় লোকজন আরোও জানান, খালের দুই পাশের তিনটি গ্রামে অন্তত দুই হাজার একর কৃষিজমিতে লবনের চাষাবাদ হয়। তাছাড়া মৌসুমী ধানের চাষও হয় কিছু জমিতে। এখন সেই খাল দখল করায় কৃষিকাজে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে।

এছাড়াও দখলদারদের কারণে গ্রাম তিনটির কোনো বাসিন্দা খালের পানি ব্যবহার করতে পারেন না। খালে জাল দিয়ে মাছ ধরে যেসব ব্যক্তি জীবিকা নির্বাহ করতেন, তাঁরা এখন উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন। খালে গ্রামের কোনো লোক মাছ ধরলে ওই প্রভাবশালীরা জরিমানা ও মারধর করার হুমকি দেন বলে জানান এলাকাবাসী।

রোপাই খালের পাশ্ববর্তী ধারয়িাখালী গ্রামের বাসিন্দা ও বাইন্যা ঘোনা গ্রামের ইউসুফ জানান, রোপাই খালে জাল দিয়ে মাছ স্থানীয়রা যুগ যুগ ধরে স্থানীয়রা জীবিকা নির্বাহ করত। সেই মাছ বিক্রি করে খালের পাশ্ববর্তী গ্রামের লোকজন সংসার চালাতেন। আর এখন প্রভাবশালীরা খাল দখল করে নেওয়ায় স্থাণীয় দরিদ্র পরিবারের লোকজন মাছ ধরতে পারছে না। রোপাই খাল প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাওয়ায় এখন গ্রামের দরিদ্র লোকজনের বেঁচে থাকাটাই দায় হয়ে পড়েছে বলে তারা জানিয়েছেন।

খালপাড়ের বাসিন্দা ইউসুফ আরো বলেন, ‘খালের কূলে থাকি, অথচ কৃষিকাজে খালের পানি ব্যবহার করতে পারি না। মেম্বার-চেয়ারম্যানকেও জানিয়েছি, তাঁরাও কোনো কিছু করতে পারে নাই।’

রোপাই খাল দখলের ব্যাপারে বাইন্যা ঘোনা গ্রামের মৃত মজু মিয়ার পুত্র মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ওই খালের ইজারা আমাদের নামে ছিল। আমি যেহেতু খাল ইজারা নিয়েছি; সেহেতু খালে বাঁধ দিয়ে হোক যে কোন উপায়ে তো মৎস্য চাষ করবো। প্রবহমান খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের নিয়ম না থাকলেও তিনি কিভাবে করছেন জানতে চাইলে ওই দখলদার কোন ধরনের সদুত্তর দিতে পারেনি।

এ ব্যাপারে মগনামা ইউপি’র ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল আজিম বলেন, খাল দখলের বিষয়টি আমি স্থানীয়দের কাছে শুনেছি। বিষয়টি আমি ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করে করণীয় ঠিক করবো।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাহবুবউল আলম বলেন, নদী-খাল-বিল লিজ দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। শীঘ্রই অভিযান চালানো হবে।

পাঠকের মতামত: