ঢাকা,শনিবার, ৪ মে ২০২৪

পুলিশের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লাখ টাকা ঘুষ দাবি ও নারী নির্যাতনের অভিযোগ লোহাগাড়ায়

চট্রগ্রাম অফিস ::

এবার লোহাগাড়া থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত) ও দুই এসআইয়ের বিরুদ্ধে এক প্রবাসীর স্ত্রীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি এবং শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেছেন প্রবাসীর স্ত্রী নাজমা আক্তার।

এসময় তিনি তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে পাঠানো কাফনের কাপড় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেন। সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে কাফনের এ কাপড় নাজমা আক্তারের কাছে পাঠায় সন্ত্রাসী আজিজ বাহিনীর সদস্যরা।

ভিকটিম নাজমা দুবাই প্রবাসী মোহাম্মদ আলমগীরের স্ত্রী। দুই বছর বয়সী শিশুকে নিয়ে করা এ সংবাদ সম্মেলনে কান্নায় ভেঙে পড়েন নাজমা আক্তার। চান নিজের ও সন্তানের জীবনের নিরাপত্তা। তিনি আরো বলেন, জীবনের নিরাপত্তার জন্য গিয়েছিলাম থানা পুলিশের কাছে। কিন্তু শিকার হলাম নির্যাতনের। ঘুষ দাবি করা হল আমার কাছ থেকে। কোথায় গেলে বিচার পাব? এ ধরনের প্রশ্ন রাখেন সংশ্লিষ্টদের কাছে।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে লোহাগাড়া উপজেলার আশকর আলী পাড়ার বাসিন্দা নাজমা আক্তার অভিযোগ করেন, ‘ভূমিদস্যু সন্ত্রাসী আজিজ বাহিনী জোর করে আমার বসতভিটা দখল ও আমাকে মৃত্যুর হুমকি দিয়ে আসছিল। সস্ত্রাসীদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে লোহাগাড়া থানায় যাই। সেখানে ওসি মোহাম্মদ শাহজাহানের সঙ্গে দেখা করি। তিনি ঘটনার বিবরণ শুনে আমার স্বামী প্রবাসী হওয়ায় আমার কাছ থেকে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন।

আমি ২০১৭ সালের ৪ ফেব্রশুয়ারি পাঁচ হাজার টাকা এবং ৫ ফেব্রুয়ারি ২০ হাজার টাকা নিজ হাতে ওসি শাহজাহানকে দেই। পরে ওসি শাহজাহান আরো এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। সেই টাকা না দেয়ায় দুই দফায় এসআই আতিকুর রহমান আমাদের বাড়িতে এসে আমার মা ও আমাকে মারধর করে অমানবিক নির্যাতন করেন। আমার সন্তানকে কোল থেকে ছুঁড়ে মারেন।

ওসি ও দুই এসআইয়ের নির্যাতন ও ঘুষ দাবির বিষয়টি তুলে ধরে ২০১৭ সালের ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি ও দুদকে এবং ১০ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজিপি’র কাছে লিখিত অভিযোগ দায়েরের পর থেকে সন্ত্রাসীরা আমাকে লোহাগাড়া ছাড়া করেছে।

পুলিশ আমাকে সহায়তা করার পরিবর্তে সন্ত্রাসীদেরকে প্রকারান্তরে সহযোগিতা করছে। ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে ০১৮৬৬৫৮৭৬৫৪ নম্ব্বর থেকে ফোন করে অভিযোগ তুলে নিতে আমাকে হুমকি দেয়। তা না হলে আমার বড় মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যাবে বলে হুমকিও দিয়েছে। এরপর আসে কাফনের কাপড় হুমকি।’

নাজমা জানান, তাকে ও তার মাকে শারীরিক নির্যাতনকারী ওসি ও দুই এসআই পুলিশের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।

এর আগে গত ২৫ মে ওসিসহ তিন পুলিশ সদস্য এবং পুলিশের এক সোর্সের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা হয়েছে। লোহাগাড়ার আধুনগর সর্দারপাড়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী মায়মুনা বেগম (২২) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল–২ চট্টগ্রামে এই মামলা দায়ের করেছিলেন।

এদিকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তাসহ সাত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে আরো একটি মামলা করেছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র আনোয়ার হোসেন।

পাঠকের মতামত: