ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

সেকেন্ডেই সাড়ে ৩২ কোটি টাকা লুটছে গ্রামীণফোন

অনলাইন ডেস্ক ::

সেকেন্ডেই সাড়ে ৩২ কোটি টাকা লুটছে গ্রামীণফোন। মাত্র এক সেকেন্ড। আর এই এক সেকেন্ডেই দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন লুটে নিল গ্রাহকের সাড়ে ৩২ কোটি টাকা। এভাবে প্রতি বছর সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা অগোচরেই নিয়ে যাচ্ছে নরওয়ের মালিকানাধীন এই কোম্পানিটি। এর মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ড. মোহাম্মদ ইউনূসের।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রাহককে বিভিন্ন কন্টেটেন্টের জন্য ফোর্স রেজিষ্ট্রেশন (ইচ্ছা না থাকা স্বত্ত্বেও) করাচ্ছে গ্রামীণফোন। বিভিন্ন কলসেন্টারের মাধ্যমে গ্রামীণফোন সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে গ্রাহকের অনুমতি না নিয়ে পণ্যের ভোক্তা তৈরির কথা বলে মোবাইল ফোনে একটি মেসেজ দেয়। এর পরপরই আরেকটি মেসেজ দিয়ে গ্রাহককে জানায় তার রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে। এভাবে গ্রাহককে প্রথমে ফোর্স রেজিষ্ট্রেশন করে এক দফা টাকা কেটে নিচ্ছে। এরপর আরেকটি মেসেজ দিয়ে বলা হয়- আপনি যদি গ্রাহক হতে না চান, তাহলে আপনাকে একটা এসএমএস পাঠাতে হবে (আপনি বাধ্য)। এই এসএমএস বাবদ আপনার একাউন্ট থেকে ২ টাকা ৪৪ পয়সা কেটে নেয়া হবে। এভাবে গ্রাহককে ফোর্স রেজিষ্ট্রেশন করে প্রথমে ২ টাকা ৪৪ পয়সা কেটে নিচ্ছে। এরপর আবার বন্ধ করতে কেটে নিচ্ছে ২ টাকা ৪৪ পয়সা। এক সেকেন্ডের মধ্যেই একজন গ্রাহকের কাছ থেকে তারা পাচ্ছে প্রায় ৫ টাকা। এতে নিমিষেই গ্রাহকের সাড়ে ৩২ কোটি টাকা চলে যাচ্ছে গ্রামীণফোনের পকেটে। আর এটা বন্ধ করতে এসএমএস না দিলে প্রতিদিনই একাউন্ট থেকে ২ টাকা ৪৪ পয়সা করে কেটে নেবে গ্রামীণফোন। প্রতিদিন এভাবে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ফোর্স রেজিষ্ট্রেশন করা ভোক্তা আইনে দন্ডনীয় অপরাধ জেনেও গ্রামীণফোন চালিয়ে যাচ্ছে এই প্রতারণা।

একজন গ্রাহক ইত্তেফাকের কাছে নিজের পাওয়া এসএমএস দেখিয়ে অভিযোগ করেন, ‘আমার মোবাইলে ০০১৬২৩৫ নম্বর থেকে একটা মেসেজ এলো। মেসেজে লিখেছে- Content Bazar service started successfully. You will get content bazar service at 2.44tk/day. To stop sms STOP CB to 16235. Helpline: 01758855511, এর পরপরই আরেকটি মেসেজ এলো, সেটাতে লেখা- You have already started the ContentBazar! service. To start sms STOP CB to 16235.

এই ফোর্স রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমে গ্রাহকের পকেটের টাকা কিভাবে হাতিয়ে নেয়া হয় জানতে চাইলে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা জানান, কলসেন্টারের মাধ্যমে গ্রাহককে যে ফোর্স রেজিষ্ট্রেশন করা হয় সেটা বন্ধ করতে গ্রাহককে ফিরতি এসএমএস দিতে হয়। অনেক সময় এটা বন্ধ করতে একাধিকার এসএমএস পাঠাতে হয়। ওই এসএমএস চার্জ এর ৭০ ভাগ টাকা পাবে অপারেটর আর ৩০ ভাগ পাবে কল সেন্টার। সে হিসাবে গ্রামীণফোন একদিনে কয়েকটি কল সেন্টারের মাধ্যমে এক কোটি গ্রাহককে বিভিন্ন পণ্যের জন্য ফোর্স রেজিষ্ট্রেশন করলে সেখান থেকে অন্তত ৭০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া সম্ভব। এমনকি এভাবে সত্যিই গ্রাহকের পকেটের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া ওয়েলকাম টিউন, মুভি সার্ভিস, ভিডিও কন্টেন্ট সার্ভিসসহ নানা ধরনের সার্ভিসে তারা ফোর্স রেজিষ্ট্রেশন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ধরনের কাজে গ্রাহক অধিকার আইনের ভয়াবহ লঙ্ঘন ঘটছে প্রতিদিন। অথচ এটা নিয়ে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কেউ নেই।

জানা গেছে, গ্রামীণ ফোন একজন গ্রাহকের বছর জুড়ে পালাক্রমে অন্তত ২০টি পণ্যের এবং আরো ২০টি অনলাইন সার্ভিসের জন্য ফোর্স রেজিষ্ট্রেশন করে। এভাবে একজন গ্রাহকের পকেট থেকে বছরে অন্তত ১০০ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। এ হিসাবে গ্রামীণফোন তাদের সাড়ে ৬ কোটি গ্রাহকের কাছ থেকে বছরে অন্তত সাড়ে ৬শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বছরের পর বছর এভাবে গ্রামীণফোন গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ যেন চোখ বন্ধ করে রেখেছে। বিষয়টি বন্ধেরও কোন পদক্ষেপ নেই।

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য—

গতকাল বৃহস্পতিবার ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত ‘গ্রামীণফোনে যৌন হয়রানি’ শীর্ষক সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ। তারা দাবি করেছে, যৌন হয়রানি বিষয়ে গ্রামীণফোন ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে। এ সংক্রান্ত কোন অভিযোগ আসলে তা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে সমাধান করা হয়। এবং স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হয়। প্রতিবেদনে প্রকাশিত ঘটনাগুলো সম্পর্কে তারা অবহিত নন। এ ধরনের কোন অভিযোগ পেলে তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা হতো। গ্রামীণফোন গত বছর দেশের সবচেয়ে নারীবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরষ্কার পেয়েছে।

প্রতিবেদকের বক্তব্য : গ্রামীণফোনের একজন সাবেক নারী কর্মী ইত্তেফাক অফিসে এসে তার সঙ্গে করা নির্যাতনের বর্ণনা করেছেন। তার নাম গোপন রেখে সংবাদটি প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া একাধিক প্রমাণ ইত্তেফাকের কাছে আছে। পাশাপাশি সংবাদে প্রকাশিত সমকামিতাকে উত্সাহিত করার ব্যাপারে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ কিছু বলেনি। অর্থাত্ তারা যে সমকামিতাকে উত্সাহিত করছে সেটা স্বীকার করে নিয়েছে। যা বাংলাদেশের প্রচলিত আইন বিরোধী। ইত্তেফাক

পাঠকের মতামত: