ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

টাকা নাই, লেখাপড়াও নাই !

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ::

লামায় ৮৫টি প্রাথমিক ও ২১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়ে গলাকাটা হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবকের। শিক্ষকদের এই ভর্তি বাণিজ্যের কারণে অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে লেখাপড়া থেকে। অনিয়মের বিষয়ে বিচার দিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছেনা বলে জানায় ভুক্তভোগী অভিভাবকরা।

লামার হ্লাচাই পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ম শ্রেণীতে ভর্তি হতে আসে, বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এলাকার শিক্ষার্থী মো. শুক্কুর আলী (৬)। সে লামা সদর ইউনিয়নের চিউনি নকশা ঝিরি এলাকার মো. দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমার সন্তানকে ভর্তির জন্য ১শত টাকা দাবি করেন। আমি ৫০ টাকা দিতে রাজি হলেও তিনি আমার সন্তানকে ভর্তি করেনি। টাকা দিতে না পারায় সন্তানকে ভর্তি না করিয়ে ফিরে যাচ্ছি। আমরা গরীব মানুষ। আমাদের টাকা নাই, লেখাপড়াও নাই। এই বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন কুতুবী বলেন, ভর্তি ফরম তৈরি করতে টাকা খরচ হয়েছে। তাই টাকা চাওয়া হয়েছে।

আরো অভিভাবক আবুল কালাম আবু, মো. চান্দু মিয়া সহ অনেকে বলেন, ১ম শ্রেণী হতে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত মোট ২০৭ জন ছেলে মেয়ের কাছ থেকে ভর্তির কথা বলে ১শত হতে ৩শত টাকা পর্যন্ত আদায় করেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষকরা। এছাড়া পিএসসি পরীক্ষায় উত্তির্ণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সার্টিফিকেট এর কথা বলে ৫শত থেকে ১ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। নতুন বই বিতরণে খরচের কথা বলেও টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে উক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। একই চিত্র উপজেলা অন্যান্য সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার যতীন্দ্র মোহন মন্ডল বলেন, এইসব গুরুতর অন্যায়। ভর্তি, পিএসসি সার্টিফিকেট প্রদান ও নতুন বই বিতরণ বিষয়ে টাকা নেয়ার কোন বিধান নেই। আমাকে কয়েকজন অভিভাবক মোবাইল ফোনে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে অবিহিত করেছে। দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরো ভয়াবহ অবস্থা উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের ২১টি বিদ্যালয়ে। ভর্তি পরীক্ষা ও ভর্তি ফরমের নামে ১ হাজার ২ শত টাকা হতে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে ৬ষ্ট থেকে ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিবে বা স্কুল থেকে বের করে দেয়ার ভয়ে কেউ মুখ খুলছেনা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। গরীব অভিভাবকরা সুদের উপর ঋণ কর্জ করে টাকা নিয়ে ছেলে মেয়েদের পড়াচ্ছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, আমি শুনেছি অনেক স্কুল বেশী টাকা আদায় করছে।

লামা উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী বলেন, মাসিক শিক্ষা কমিটির মিটিংয়ে এইসব অনিয়মের বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।

পাঠকের মতামত: