ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

কোরআন ও হাদিসের উপর যথার্থ আমল করার জন্য মাযহাব’র অনুসরণ অপরিহার্য -রামুতে মুফতি আব্দুল হালিম বোখারী

wwwwসোয়েব সাঈদ, রামু ::

কক্সবাজারের ৩১তম আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলনের সমাপনী দিবসে প্রধান মেহমান এর বক্তব্যে ইসলামী সম্মেলন সংস্থার চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (ইত্তেহাদুল মাদারিস) এর সেক্রেটারী জেনারেল আল্লামা মুফতি আব্দুল হালিম বোখারী বলেছেন, প্রকৃত মুসলমান হিসেবে জীবন যাপনে পবিত্র কোরআন-সুন্নাহর বিধি-বিধান যথাযথভাবে মেনে চলার বিকল্প নেই। আর পবিত্র কোরআন ও হাদিসের উপর যথার্থ আমল করার জন্য মাযহাব এর অনুসরণ অপরিহার্য। কিন্তু আজ একটি চক্র ‘মাযহাব মানার প্রয়োজন নেই’ মর্মে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ইসলাম নিয়ে এরকম বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারিরা সা¤্রাজ্যবাদী অপশক্তির দোসর। তিনি ডা. জাকির নায়েককে ‘নব্য ড. ফজলুর রহমান’ আখ্যায়িত করে বলেন, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.), ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক (র.), হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা (র) সহ বিভিন্ন সাহাবায়ে কেরাম ও ইসলামের বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে ডা. জাকির নায়েক ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি ও মন্তব্য করেছেন। এ নব্য ফজলুর রহমানের চক্রান্তের বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহকে সজাগ থাকতে হবে।

মূফতি আবদুল হালিম বোখারী বলেন, শরিয়তের মাসআলা-মাসায়েল জানার জন্য হক্কানী ওলামায়ে কেরামের শরনাপন্ন হতে হবে। ডা. জাকির নায়েকের মতো বিভ্রান্তদের কাছ থেকে সঠিক মাসআলা-মাসায়েল জানা সম্ভব নয়।

 ইসলামী সম্মেলন সংস্থা কক্সবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে গতকাল রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রামু কলেজ মাঠে আয়োজিত দুই দিন ব্যাপী এ বিশাল সম্মেলনের সমাপনী দিনে বিশেষ বক্তা হিসেবে তাকরির পেশ করেন, সিরাজগঞ্জের আল্লামা আব্দুল বাসেত খান, ঢাকার আল্লামা জুনাইদ আল হাবীব, আল্লামা মূফতি আবদুর রহমান (রহ.) এর ছেলে ঢাকা বসুন্ধরা ইসলামিক ইকনোমিক্স এন্ড ব্যাংকিং এর পরিচালক আল্লামা মুফতি শাহেদ রহমানী, রাজঘাটা মাদরাসার মুহাদ্দিস আল্লামা সৈয়দ আলম আরমানী প্রমুখ।

উল্লেখ্য সম্মেলনের প্রথমদিনে (শনিবার) ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম আল্লামা মূফতি আবুল কাসেম নোমানী প্রধান মেহমান হিসেবে তাকরির পেশ করেন।

 সম্মেলনে সমাপনী দিবসে বিভিন্ন অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন, চাকমারকুল জামেয়া দারুল উলুম এর প্রধান পরিচালক ও শায়খুল হাদিস মাওলানা মোহাম্মদ জাকের, রাজারকুল আজিজুল উলুম মাদরাসার পরিচালক মাওলানা আমান উল্লাহ সিকদার, চকরিয়া বরইতলী ফয়জুল উলুম মাদরাসার পরিচালক মাওলানা সোহাইব নোমানী।

 কক্সবাজার লালদিঘী জামে মসজিদের খতীব মাওলানা ক্বারী আতা উল্লাহ ও সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির প্রচার সম্পাদক হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুরের সঞ্চালনায় সম্মেলনে আরো তাকরির পেশ করেন, চাকমারকুল মাদরাসার মাওলানা নজিরুল ইসলাম, রাজারকুল আজিজুল উলুম মাদরাসার মাওলানা এবাদুল হক, ঈদগড় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মূফতি হেলাল উদ্দিন।

 হাজারো ইসলামপ্রিয় জনতার স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত ২দিন ব্যাপী এ ইসলামী মহাসম্মেলনে ইসলামী সম্মেলন সংস্থা কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মূখতার আহমদ, নির্বাহী সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ মুসলিম, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আলী হাচ্ছান চৌধুরী ও নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোহছেন শরীফ সহ বিশিষ্ট আলেম ওলামা উপস্থিত ছিলেন।

 সম্মেলনে বিশেষ আলোচক আল্লাম জুনাইদ আল হাবিব বলেন, কওমী মাদ্রাসাসমূহ আবহমানকাল ধরে পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ্র সঠিক তা’লীম ও ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনের যথাযথ চর্চার মাধ্যমে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর প্রকৃত অনুসারী, দেশপ্রেমিক আদর্শ নাগরিক গড়ার মহান খেদমত আঞ্জাম দিয়ে আসছে। শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ঐতিহ্যবাহী কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাধারার গৌরবোজ্জ্বল অবদান সর্বজন স্বীকৃত। এমনই শান্তি-সম্প্রীতির প্রতীক, ইসলামী জ্ঞান চর্চার প্রাণকেন্দ্র কওমী মাদ্রাসাকে যারা জঙ্গি আস্তানা হিসেবে আখ্যায়িত করে তারাই অশান্তি সৃষ্টির মূল হোতা। ইসলাম বিদ্বেষীরা মূলতঃ সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়নে কওমী মাদরাসার বিরুদ্ধে এমন অবান্তর বক্তব্যদান ও মিথ্যাচারে মেতে উঠেছে।

তিনি আরো বলেন, কওমী মাদ্রাসা সমূহের লক্ষ লক্ষ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শুভানুধ্যায়ীরা এদেশের আদর্শ ও শান্তিপ্রিয় নাগরিক। কওমী মাদ্রাসা সমূহের সাথে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর নাড়ি ও আত্মার সম্পর্ক বিদ্যমান। তাই কওমী মাদ্রাসা সম্পর্কে বিষোদগার করলেই দেশের আপামর জনসাধারনের কলিজায় আঘাত লাগে।

 সম্মেলনে বিশেষ বক্তা আল্লামা আবদুল বাসেত খান বলেন, মুসলমানেরা হচ্ছেন মহান আল্লাহর সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি। কিন্তু আজ মুসলমানেরা বিশ্বব্যাপী চরম নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার। এর একমাত্র কারণ পবিত্র কোরআন সুন্নাহর পথ নির্দেশনা থেকে আমরা মুসলমানেরা সরে এসেছি। এ সংকট উত্তরনে মহান আল্লাহর কালাম কোরআন মজিদ ও মহানবী (স.) এর সুন্নাহকে যথাযথভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে। তাহলেই মুসলমানদের হারানো ঐতিহ্য আবারো ফিরে আসবে।

দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি সমৃদ্ধি কামনায় মহান আল্লাহর দরবারে বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে ইসলামী মহাসম্মেলন সমাপ্ত হয়।

পাঠকের মতামত: