ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণে সামাজিক অবক্ষয় ও অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি’

আমান উল্লাহ আমান, টেকনাফ ::

মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়দের ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ক মতবিনিময় সভা টেকনাফে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণের ফলে সামাজিক অবক্ষয় ও অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের কারণে কৃষি জমি দখল, বনভুমি ধ্বংস ও পাহাড় দখল, কমদামে শ্রম, যানবাহন সংকট ও লোকাল ভাড়া বৃদ্ধি, বেড়ীবাঁধ ও রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্থ, চাষ নির্ভর খালের পানি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরবরাহ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ক্ষতি, ডাকাতি, রোগ ব্যাধি বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি, পুরাতন রোহিঙ্গাদের সাথে নতুন রোহিঙ্গা দ্বন্ধ, মাদকের সাথে রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্টতা, শিক্ষার্থীদের মাঝে আতংকসহ বিভিন্ন সমস্যাদী মতবিনিময় সভায় তুলে ধরেন জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্ধ ও সুচীশ সমাজ।

এ উপলক্ষে ২৭ ডিসেম্বর বুধবার সকাল ১১ টায় টেকনাফ উপজেলা মিলনায়তনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন ছিদ্দিকীর সভাপত্বিতে উক্ত মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক মন্ত্রী পরিষদের সচিব ও জাপানি উন্নয়ন সংস্থা আইসি নেট এর পরামর্শ কনসাল্টেন্ট আলী ইমাম মজুমদার। বক্তব্য রাখেন, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, উপজেলা পরিষদের ভাইচ চেয়ারম্যান মাওঃ রফিক উদ্দিন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাহেরা আক্তার মিলি, সাবেক ভাইচ চেয়ারম্যান এইচএম ইউনুছ বাঙ্গালী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নুরুল বশর, টেকনাফ মডেল থানার (ওসি) তদন্ত শেখ আশরাফুজ্জামান, সাংবাদিক জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী, হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান এইচকে আনোয়ার, সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন, টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া, টেকনাফ উপজেলা সহসভাপতি জহির হোসেন এমএ, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এমদাদ হোসেন, উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার নুরুল আবছার, আইসি নেট’র প্রতিনিধি নাকামুরা।

মতনিনিময়কালে বক্তারা বলেন, মানবতার খাতিরে রোহিঙ্গাদের এদেশে আশ্রয় দিয়েছে সরকার। বর্তমানে ১০ লাখের উর্ধ্বে রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে। যা স্থানীয়দের চেয়ে দ্বিগুন। তাদের অবাধ বিচরণের ফলে যানবাহন সংকটসহ লোকাল ভাড়া ও দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। কমদামে রোহিঙ্গা শ্রমিক কাজ করায় দেশীয় শ্রমিকরা কাজ পাচ্ছেনা। ফলে অনেক পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে। সম্প্রতি সড়কে ডাকাতি বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদক পাচারের সাথে রোহিঙ্গাদের সংশ্লিষ্টতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বক্তারা আরো বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জম্ম নিবন্ধন বন্ধ রাখা হয়েছে। তাদের কারণের সড়কে যত্রতত্র তল্লাশী জনজীবন বিপর্যস্থ করে তুলেছে। রোহিঙ্গাদের কঠিন রোগ স্থানীয়দের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়দের সমান সুবিধা দিয়ে চিকিৎসা করা প্রয়োজন।

স্থানীয়দের চাষাবাদের জমি নষ্ট হয়ে গেছে, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মৎস্য চাষ, সামাজিক বনায়নসহ বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে গেছে, হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। স্থানীয়দের চাকুরি না হওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছে স্থানীয়রা। কিছু এনজিও নেতিবাচক কর্মকান্ড চালাচ্ছে। বিতর্কিত এনজিওরা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য রোহিঙ্গাদের দেশবিরোধী কর্মকান্ডে নিয়োজিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। বেশিরভাগ এনজিও রোহিঙ্গাদের ইস্যু করে নানা দুর্নীতি করে টাকা লুটপাট করছে। এই জন্য সতর্ক থাকতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, রোহিঙ্গাদের বিচরণের ফলে এখন স্কুলের শিক্ষার্থীরা সঠিক সময়ে উপস্থিত হতে পারছেনা। তারা ভয়ে ভয়ে স্কুলে আসছে। বেশী দামে চাকুরী পাওয়ায় প্যারা শিক্ষক বিভিন্ন এনজিওতে চলে যাচ্ছে। ফলে টেকনাফে মারাত্মক ভাবে শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে।

অধ্যূাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, ক্যাম্প বৃদ্ধি করে সকল রোহিঙ্গাদের নিয়ে গেলে অন্তত পক্ষে স্থানীয়দের অনেক সমস্যা দূরীভূত হবে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন রোহিঙ্গাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকায় দেশীয়রা সেবা বঞ্চিত হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: