ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ার আওয়ামী রাজনীতিতে আলোচিত সমালোচিত-কে এই শওকত ?

বার্তা পরিবেশক :
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় সদরের পেকুয়া বাজারে গত ১৬ডিসেম্বর সকালে ঘটে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তার উপর হামলার মত ন্যাক্কারজনক একটি ঘটনা নিয়ে আলোচিত, সমালোচিত একটি নাম এইচ এম শওকত।
ছাত্রলীগের ব্যানারে র?্যালীকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটায় সরকার দলীয় রাজনীতির মতাদর্শী কিছু মানুষের সমর্থন সে পেলেও পুরো দেশজুড়ে সমালোচিত হয়েছে তার নামটি। কারণ সে সংগঠনটির দায়িত্বশীল না হয়েও নিয়মবহির্ভূত কর্মকান্ডে জড়িয়েছে। এছাড়াও তার এ কাজে সহযোগীরা ছিল অধিকাংশই বিএনপি জামায়াত ঘরনার লোক। মূলত বিএনপি জামায়ায়ের ইন্ধনে সে এহেন উস্কানিমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়েছে বলে রাজনীতি বোদ্ধাদের অভিমত।
তারা বলেন, শওকতের হাতে হাতকড়া দেখে খারাপ লাগাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তার কান্নারত ছবি নিয়ে সবাই হা হুতাশ করেছে। রাজনীতিকে পুজি করে সহানুভূতি আদায় করে নিতে পুরোপুরি সফল হয়েছে শওকত। কিন্তু তার কৃতকর্মের ধারণা ক’জনেরই বা আছে?
তারা আরো বলেন, শওকতের আসল পরিচয় সে একজন চাঁদাবাজ। উপজেলা প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে সে তার ধান্ধাবাজি চালায়। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় সে রাজাখালী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক টিপুর ব্যবসার টাকা লুটের চেষ্টা চালায়। পেকুয়া থানা পুলিশের কাছ থেকে আসামী লুট করেছে সে। মগনামা, উজানটিয়া ও রাজাখালী ইউনিয়নের চিংড়ি পোনা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করেছে সে। মগনামা ইউনিয়নের আজিজ নামের এক পোনা ব্যবসায়ীকে পেকুয়া বাজারের এস আলম কাউন্টার থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে ১৫ হাজার টাকা আদায় করে। পেকুয়া তাজমহল জুয়েলার্সে মগনামা কাজি মার্কেট এলাকার ফজলুল করিম স্ত্রীর স্বর্ন বন্ধক দিতে আসলে তা ছিনতাই করে। তার কয়টি অপরাধ সচেতন ব্যক্তিদের দৃষ্টিতে এসেছে ? ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় এসব অপকর্ম চালিয়েছে সে। তাই ক’জনই বা মুখ খুলেছে তার বিরুদ্ধে। একইভাবে তার অবৈধ অস্ত্রভান্ডারের তথ্য কি আছে স্থানীয় প্রশাসনের ? ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে আইনের জাল কি সে এতদিন এড়িয়ে যায়নি ?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিরা জানান, সে পেকুয়া বাজারের প্রায় প্রত্যেক দোকান থেকে চাঁদা আদায় করেছে শওকত। তার বিরুদ্ধে মগনামা কুতুবদিয়ার সাগরপথে ইয়াবা পাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
এছাড়া মালেশিয়ার ভিসা ব্যবসার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে পেকুয়া বাঁশখালীর অনেক লোক তার কাছে টাকা পায়। গত একমাস আগে ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে এক ব্যক্তিকে মেডিকেল রিপোর্ট পাইয়ে দিতে গিয়ে ডাক্তারের গায়ে হাত তুলে সে।
কিন্তু অদৃশ্য কারণে অনেক ক্ষমতাধর এই শওকত। এত অপরাধ করেও সে আইনের উর্ধ্বে থেকেছে সবসময়। কারণ কয়েকজন স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা তাকে ব্যবহার করেছে অবৈধভাবে টাকা কামানোর হাতিয়ার হিসেবে। তারাই তার নিরাপত্তা দিয়ে গেছে সার্বক্ষণিক।
তাছাড়া তার বিরুদ্ধে একাধিক নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা রয়েছে। ছাত্র রাজনীতির কোন যোগ্যতা না থাকলেও সে পেকুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের কান্ডারি ! বিভিন্ন নারীর সাথে রাতদুপুরে নষ্টামী করতে গিয়ে গণধোলাইর শিকার হয়েছে সে।
স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বলেন, গত দুই বছর আগেও শওকত ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল। আওয়ামী রাজনীতিতে তার অনুপ্রবেশ ঘটে গত উপজেলা নির্বাচনের পর। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ না করা এই কথিত নেতাকে দেখলে যেকেউ মনে করবে কোটিপতির ছেলে। দামী পোশাক আর চোখে কালো চশমা লাগিয়ে অন্য লেভেলে তার চলাফেরা। কিন্তু তার পরিবারের নেই অঢেল সম্পদ !
তিন মাস পরপর নেতার সানিধ্য পরিবর্তন করে ধান্দার এক মহা উৎসবে মেতে থাকে সে। মুষ্টিকয়েক নেতাদের আস্ফালনে এত অপরাধের মূলহোতা হয়েও দিনশেষে সে বিশাল ত্যাগী নেতা ! মুষ্টিকয়েক তার সহযোগী ছাড়া পেকুয়াবাসী সবাই খুশি তাকে গ্রেপ্তার করায়। কিন্তু তার পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দলীয় নেতাকর্মীদের অতি উৎসাহী কর্মকান্ড দেখে আওয়ামীলীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাথা লজ্জায় নিচু হয়েছে।
তারা আরো বলেন, গত ১৬ডিসেম্বর শওকতের আয়োজন করা র?্যালীতে উপস্থিতির অধিকাংশই ছিল ছাত্রদল ছাত্রশিবিরের পদবীধারী নেতা এবং কর্মী। এরমধ্যে কয়েকজন তার সাথে পুলিশের দায়েরকৃত মামলার আসামী হয়েছে।
শওকতের মত সুবিধাবাদী নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার এখনই সময়। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তারা সবসময় অপরাধই করে যাবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ইমেজ সংকটে পড়বে পেকুয়ার আওয়ামী রাজনীতি। কয়েকজন অপরাধীর জন্য চুনকালি কেন মাখবে গৌরবোজ্জ্বল এই সংগঠন ?

পাঠকের মতামত: