ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

বৃটিশ আমেরিকা টোব্যাকো করলে লীলা খেলা, পাহাড় কেটে মাটি ভরাট সাধারণ মানুষ করলে পাপের ভেলা

এম.আর, মাহামুদ, চকরিয়া ঃ

বৃটিশ আমেরিকা টোব্যাকো কোম্পানি চকরিয়া অফিস ও গুদামের মাঠে অবৈধ ভাবে পাহাড় কেটে মাটি ভরাটের দৃশ্য দেখে মনে হয় দেশে আইনের শাসন নেই। যে মাঠটি পাহাড়ের মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে সেখানকার একটি অংশ এক সময়ের বাইশ্যার ছড়া, যার গতি পরিবর্তন করাই বর্তমানে ভরাট হয়ে গেছে। তবে কোন সন্দেহ ছাড়ার অংশ টুকু খাস খতিয়ান ভুক্ত। তারপরও বিনা বাধায় পাহাড়ের মাটি দিয়ে মাঠ ভরাটের দৃশ্য দেখে মানুষ অনেকটা অবাক। সাধারণ লোকজন নিতান্ত প্রয়োজনে পাহাড় ছড়া ও খাল থেকে মাটি সংগ্রহ করলে অপরাধ। বন বিভাগ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভুল করে না। উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসলে ভ্রাম্যমান আদালতের সাজা অথবা জরিমানা থেকে নিস্তার পায়না। অথচ বৃটিশ আমেরিকা টোব্যাকো কোম্পানির অফিসের সামনের মাঠে পাহাড়ের এত মাটি আসল কিভাবে এ প্রশ্নের জবাব খুজে পাচ্ছেনা সচেতন মহল ও পরিবেশবাদীরা। সরকারী ভাবে পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ হলেও এ আইন কেউ মানছেনা। বন বিভাগের সবুজ সংকেতের কারণে চকরিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাহাড় কাটা হচ্ছে হর হামেশা। কালে ভাদ্রে উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসলে ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। তবে বন বিভাগ পাহাড় কাটার ক্ষেত্রে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে শুনা যায়নি। পরিবেশ অধিদপ্তরের তৎপরতাও দেখা যায়না। নির্বিচারে পাহাড় কাটার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল সংস্থা গুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে “কানে দিয়েছে তুলা আর পিটে দিয়েছে কুলা”। গত তিন যুগ ধরে চকরিয়ার মাতামুহুরী নদী বেস্টিত বেশ কয়টি ইউনিয়নের উর্বর জমিতে চলছে তামাক চাষ। এসব জমিতে উৎপাদিত তামাক আগুনের তাপে শুকাতে গিয়ে চকরিয়ার বেশিরভাগ বনের ও গ্রামের গাছ পালা তামাক চুল্লিতে পুড়িয়ে অংগার করেছে। ফলে বেশিরভাগ বন ভুমি এখন ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। অনেকটা দেখতে মিয়ানমারের উগ্র বৌদ্ধ ভান্তের মাথার মত হয়ে গেছে। এরি জন্য দায়ী বৃটিশ আমেরিকা টোব্যাকো, ঢাকা টোব্যাকো ও আবুল খায়ের টোব্যাকো। তারা দেশের শীর্ষ করদাতা। এজন্য সরকার তাদের এসব অপকর্ম দেখেও যেন দেখছেনা। বনের গাছ শেষ করে এবার পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ করে তাদের অফিসের মাঠ ভরাট করছে। বিষয়টি যেন দেখার কেউ নেই। সূত্রমতে, চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের শাহ্ উমরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামান্য পশ্চিম পার্শ্বে বৃটিশ আমেরিকা টোব্যাকোর অফিস। এ অফিস সৃষ্টির আগে ওই জমির শ্রেণী ছিল নাল। এখন একটি অফিস ও গুদাম করা হয়েছে। মাঠ ছিল নিচু শ্রেণীর। বন্যার পানি ওই জমি দিয়েই চলাচল করত। হয়তো সে কারণে তাদের তামাক রক্ষনাবেক্ষণ ও পরিবহনে জটিলতা সৃস্টির আশংকায় নিচু অংশ ভরাট করছে। তাদের নিজস্ব স্বার্থে মাঠ ভরাট করলে কারো মাথা ব্যথা থাকার কথা নয়। কিন্তু সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ করা আপত্তিকর ও আইনগত ভাবে অবৈধ। তারপরও বিনা বাধায় দিন দুপুরে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। বৃটিশ আমেরিকা টোব্যাকো কোম্পানির ওই আফিসের এরিয়া ম্যানেজার দাবী করেছেন তারা মাঠ ভরাট করছেনা। অফিসটি তারা ভাড়া নিয়েছে। ওই অফিসের ভুমি মালিক মাঠ ভরাট করছে। মাঠি কোত্থেকে আনছে তা তাদের জানার বিষয় নয়। এলাকাবাসী জানিয়েছেন কাকারা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডর বার আউলিয়া নগরস্থ মসজিদ ও প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন (বন বিভাগের জমি) পাহাড় কেটে এসব মাটি ট্রাক ভর্তি করে বৃটিশ আমেরিকা টোব্যাকো কোম্পানীর অফিসের মাঠ ভরাট করা হচ্ছে। এ পাহাড় থেকে কয়েক ট্রাক মাটি নয়, শত শত ট্রাক মাটি এনে অফিস মাঠে মওজুদ করেছে। যা দেখলে মনে করবে এটি আরেকিট কৃত্রিম পাহাড়। এভাবে বিনা বাধায় পাহাড় কাটার পিছনে কোন শক্তিশালি মহল জড়িত। না হলে কি করে বন বিভাগের পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ করার মত সাহস পেয়েছে। পাহাড়টির দৃশ্য দেখে মনে হয় যে কোন সময় ভুমি ধ্বসের ঘটনা ঘটতে পারে। চকরিয়ার উর্বর জমিতে তামাক চাষ বন্ধের জন্য উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার উদ্যোগে স্কুল পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীদের রাস্তায় দাড় করিয়ে মানব করতেও দেখা গেছে বেশ ক’ বছর। তবে চলতি বছর এ ধরণের মানব বন্ধন হয়নি। কোমল মতি শিক্ষার্থীদের শরীরের ঘাম ঝরিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে রাখলেও তামাক চাষ বন্ধ হয়নি। এখনো তামাক চাষ অব্যাহত রয়েছে। মার্চ-এপ্রিলের দিকে তামাক শুকানোর মওসুম শুরু হবে। নির্বিচারে পাহাড় কেটে লাকড়ী সংগ্রহের ধুম পড়বে। তা নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু বৃটিশ আমেরিকা টোব্যাকো কোম্পানীর অফিসের মাঠ ভরাটের জন্য বন বিভাগের পাহাড় কাটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায়না। তারা প্রভাবশালী ও বিদেশী কোম্পানী বলে বিনা বাধায় এ অপরাধ করে যাচ্ছে। পরিবেশ বাদীদের অভিমত আইন শুধু গরীবের জন্য, প্রভাব শালীদের জন্য নয়। নির্বিচারে পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ করে মাঠ ভরাটের দৃশ্য দেখে বেরসিক এক ব্যক্তি মন্তব্য করতে শুনা গেছে “উলট পালট করে দে মা, লুঠে ফুটে খায়, এসব যেন আল্লাহ্ ছাড়া দেখার কেউ নাই”।

পাঠকের মতামত: